আব্বাসীয় শাসনের পতনের কারণগুলি লেখো।

  ভূমিকা : ভাঙা-গড়া, উত্থান-পতন, সূচনা-সমাপ্ত প্রকৃতির শ্বাশ্বত নিয়ম। আব্বাসীয় বংশের বেলায়ও এটা ব্যতিক্রম নয়। ৭৫০ সালে উমাইয়াদের পতনের মাধ্যমে আবুল আব্বাস সাফফাহ কর্তৃক আব্বাসী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয় এবং অবশেষে পাঁচশত বৎসরের বেশি সময়, অতিবাহিত হয়ে ১২৫৮ সালে হালাকুখানের হাতে পতন ঘটে। নিম্নে এই সাম্রাজ্যের পতনের কারণ সম্পর্কে আলোচনা করা হল-

আব্বাসীয় বংশের পতনের কারণ : প্রাকৃতিক নিয়ম : ঐতিহাসিক ইবনে খালদুনের মতে যে-কোনো রাজবংশের স্থিতিকাল একশত বছর, সূচনা, বিকাশ ও পতন একশত বৎসরের মধ্যে ওই তিনটি নির্দিষ্ট নিয়ম অতিক্রম করে অবশেষে পতনের দিকে ধাবিত হয়। বলা বাহুল্য, একশো বৎসর অতিক্রান্ত হওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই আব্বাসীয় শাসন পতনের জগতে পাড়ি দেয়।

আব্বাসীয় শাসকদের অযোগ্যতা : আব্বাসীয় খেলাফতের মোট ৩৭ জন আব্বাসীয় খলিফার মধ্যে আবুল আব্বাস আল মানসুর, হারুন রশিদ ও মামুন ছাড়া বেশিরভাগ শাসকই ছিলেন অযোগ্য ও অকর্মণ্য। তাদের অযোগ্যতা আব্বাসীয় খেলাফতের পতনের জন্য বিশেষভাবে দায়ী।

বিলাসবহুল জীবন ও চরিত্রহীনতা : আব্বাসীয় খলিফাদের মধ্যে মামুন এর পরবর্তী খলিফাগণ চরিত্রহীন ও আরামপ্রিয় ছিলেন। তারা সাম্রাজ্যের প্রজাদের প্রতি নজর না দিয়ে ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে থাকতেন। মদ্যপান, ক্রীতদাস ও রক্ষিত ছিল তাদের জীবনের নিত্য সঙ্গী, ফলে বিলাসবহুল জীবনযাপনে রাজকোষ শূন্য হয়ে যায়।

উত্তরাধিকার নীতির অভাব : আব্বাসীয় খেলাফত কোনো সুষ্ঠু উত্তরাধিকারী নীতি না থাকায় পতনের দিকে এগিয়ে যায়। যখনই একজন খলিফা পদত্যাগ করতেন সিংহাসন লাভের জন্য একাধিক ব্যক্তি সংঘর্ষে লিপ্ত হত। এই খিলাফতকে কেন্দ্র করে আমিন ও মামুনের মধ্যে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল তা এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

সাম্রাজ্যের বিশালতা : সাম্রাজ্যের বিশালতা আব্বাসীয় বংশের পতনের অন্যতম কারণ। তাদের সাম্রাজ্যের সীমা এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল যে কেন্দ্র থেকে সকল অঞ্চল সুষ্ঠুভাবে শাসন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। ঐতিহাসিক কারণ : কোনো সাম্রাজ্যই দীর্ঘ সময় ধরে রাজত্ব করতে পারে না। যার সৃষ্টি আছে তার ধ্বংস অনিবার্য। বিশ্বের সকল রাজবংশই ধ্বংসশীল। সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন ইতিহাসের অমোঘ নিয়মেই ঘটে সে বিষয়ে আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের মতো এক বিরাট সাম্রাজ্যের পতন কোনো আশ্চর্য ঘটনা নয়।

মোঙ্গলদের আক্রমণ : উপরোক্ত কারণগুলিতে আব্বাসীয় খেলাফত যখন বিধ্বস্ত তখন তাদেরকে একেবারেই ছুটির ঘণ্টা বাজায়, বৈদেশিকদের আক্রমণ। ১২৫৮ সালে মোঙ্গল নেতা হালাকুখান বাগদাদ আক্রমণ ও ধ্বংস করে এবং শেষ আব্বাসীয় খলিফা মুসতাসিমকে সপরিবারে হত্যা করলে এই সাম্রাজ্যের চিরপতন ঘটে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, প্রবল শৌর্য বীর্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও শেষদিকের আব্বাসীয় খলিফাগণ অত্যাচারী হয়ে ওঠে। অযোগ্যতা, অদক্ষতা, অভ্যন্তরীণ বিবাদ ঝগড়া, ভোগবিলাস, রাজকোষ আত্মসাৎ ইত্যাদি কারণে তাদের পতন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।

     আরও পড়ুন 

আব্বাসীয় খলিফা হিসাবে আল-আমীন-এর অবদান আলোচনা করো। 👉 Click Here

আব্বাসীয় যুগে কিভাবে জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্ভব হয়েছিল ? ইসলামী জীবনে তার প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো। 👉 Click Here 

আব্বাসীয় শাসন ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক আলোচনা করো। 👉 Click Here

খলিফা মানসুরকে আব্বাসী খেলাফতের প্রতিষ্ঠাতা বলা যায় কি? সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো। 👉 Click Here

উমাইয়া ও আব্বাসী শাসনামলের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। 👉 Click Here

আব্বাসীয় যুগের স্থাপত্য শিল্পের ওপর টীকা লেখো। 👉 Click Here

আমিন ও মামুনের গৃহযুদ্ধের কারণ বর্ণনা করো। 👉 Click Here

সেলজুক কাদের বলা হত? 👉 Click Here

আব্বাসীদের সমাজ জীবন কেমন ছিল ? 👉 Click Here

টীকা লেখো : সিটি অব বাগদাদ। 👉 Click Here

খলিফা হারুণ অর রসিদ-এর সম্পর্কে আলোচনা করো।  👉 Click Here

খোলাফায়ে আব্বাসীয়র বৈশিষ্ট্য কি আলোচনা করো। 👉 Click Here

আব্বাসীয় বংশের সমস্ত MCQ প্রশ্ন ও উত্তর। 👉  Click Here

আব্বাসীয় বংশের সমস্ত SAQ প্রশ্ন ও উত্তর। 👉 Click Here

আব্বাসীয় বংশের সমস্ত সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর। 👉 Click Here

ইসলামের ইতিহাসের সমস্ত  প্রশ্ন ও উত্তর জানতে 👉  Click Here


আব্বাসীয় শাসনের পতনের কারণগুলি লেখো।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
×