খলিফায়ে রাশেদীন আমলের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
ভূমিকা : হজরত মুহাম্মাদের (সঃ) মৃত্যুর পর ৬৩২ খ্রিঃ হজরত আবু বাকরের (রঃ) হাত ধরে খলিফা যুগ শুরু হয়। অতঃপর উমার, উসমান ও হজরত আলী (রঃ) পরস্পর খলিফা নির্বাচিত হয়ে প্রায় তিরিশ বছর ইসলামী সাম্রাজ্য পরিচালনা করেন। মূলত এই সময়েই ইসলামী সাম্রাজ্য বিস্তার, স্থায়িত্ব ও কেন্দ্রীয় শাসনের মাধ্যমে একটি পূর্ণ সাম্রাজ্য হিসেবে পরিণত হয়েছিল। শাসনব্যবস্থা, রাজনীতি, অর্থনীতি সবকিছুতেই উন্নতি লাভ করেছিল। বিশেষত খলিফা উমারের সংস্কার ও কৃতিত্ব খলিফা যুগকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়েছিল।
শাসনব্যবস্থা : খলিফা যুগে শাসনব্যবস্থা দুটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল— কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক।
কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা : খলিফা যুগে কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থায় প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে থাকতেন খলিফা স্বয়ং। তিনি কুরআন, হাদীস ও দুই কক্ষবিশিষ্ট মাজলিসুশ্ শুরার পরামর্শ নিয়ে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন।
প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা : শাসনকার্যের সুবিধার জন্য খলিফা যুগে সমগ্র ইসলামী সাম্রাজ্যকে আটটি প্রদেশে ভাগ করা ছিল। প্রদেশগুলি হল— মক্কা, মদিনা, বসরা, কুফা, মিশর, প্যালেস্টাইন ও জর্জিয়া। প্রদেশগুলি পরিচালনার জন্য প্রতি প্রদেশে শাসন হিসেবে ওয়ালি নিয়োগ করা হত। প্রদেশগুলিকে আবার কতকগুলি জেলায় ভাগ করা হত। ওয়ালির সাহায্যকারী হিসেবে জেলার শাসক থাকত আমীর। আমীর তার কাজের জন্য ওয়ালির কাছে দায়বদ্ধ থাকত। ওয়ালি তার কাজের জন্য খলিফার নিকট দায়বদ্ধ থাকত। ওই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় চালু থাকায় কেউ স্বেচ্ছাচারী হতে পারত না।
বিচার ব্যবস্থা :- খোলাফায়ে রাশেদীনদের আমলে বিচার ব্যবস্থা ছিল স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দ্বিতীয় খলিফা উমার (রাঃ) বিচার ব্যবস্থাকে শাসন বিভাগ থেকে আলাদা করেন। বিচারের মূল ভিত্তি ছিল কুরআন ও হাদিস। বিচারকার্য পরিচালনার জন্য প্রতিটি প্রদেশে কুরআন হাদিসের অভিজ্ঞ ও সৎ ব্যক্তিদের কাজির পদে নিয়োগ করা হত। তাদের বেতনও নির্ধারিত ছিল। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বিচারের জন্য তাদের সম্প্রদায়ের বিচারকও থাকত। বিচারক্ষেত্রে ধনী গরিব কোনো ভেদাভেদ ছিল না। প্রয়োজনে খলিফাকেও বিচারপ্রার্থী হয়ে কাজীর নিকট হাজির হতে হত। সামরিক ব্যবস্থা : খলিফা যুগে বিশাল সুসংহত সামরিক বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল। বাহিনীতে দু'ধরনের বাহিনী থাকত—স্থায়ী ও আপদকালীন। তাদের মধ্যে আবার অশ্বারোহী ও পদাতিক দু-ধরনের বাহিনী থাকত। সামরিক সাহায্যের জন্য মক্কা, মদিনা, কুষ্ণা প্রভৃতি স্থানে সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলা হয়েছিল। সামাজিক নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য পুলিশ বিভাগও ছিল। অপরাধীদের শাস্তির জন্য জেলখানারও প্রবর্তন হয়েছিল।
রাজস্ব ব্যবস্থা : হজরত মোহাম্মাদের (সঃ) আমলে ইসলামী রাষ্ট্রের আয়ের পরিমাণ খুব স্বচ্ছ না থাকলেও খোলাফায়ে রাশেদীন যুগে তা অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। বায়তুল মাল বা সরকারি কোষাগার উন্নত হয়েছিল। রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস ছিল জাকাত, সদকা, জিজিয়া, উশর, হিমা, গাণিমাত ইত্যাদি।
আর ও পড়ুন
খলিফা আবুবকর কীভাবে ভণ্ড নাবীদের দমন করেন? 👉 Click Here
হজরত ওমারের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো। 👉 Click Here
কুরআন সংকলনের কারণ কী ছিল ?👉 Click Here
মজলিশ-উশ-সুরা কী ?👉 Click Here
পবিত্র চার খলিফার আমলে রাজস্ব ও বিচার ব্যবস্থার বিবরণ দাও। 👉 Click Here
হজরত ওসমান গণি (রাঃ) বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আনা হয়েছিল? 👉 Click Here
হজরত ওসমানের (রাঃ) আমলে গৃহবিবাদের কারণ কী ছিল?👉 Click Here
খোলাফায়ে রাশেদীনদের অবসানের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক আলোচনা করো। 👉 Click Here
খারেজীদের কী উদ্দেশ্য ছিল?👉 Click Here
উটের যুদ্ধের নামকরণের তাৎপর্য কী ছিল অথবা উটের যুদ্ধ সম্বন্ধে কী জান ।👉 Click Here
সিম্ফিনের যুদ্ধের ফলাফল লেখো।👉 Click Here
মানুষ ও খলিফা হিসেবে হজরত আলীর মূল্যায়ন করো। 👉 Click Here
মিশরের ফাতেমিয়দের পতনের কারণ কী?👉 Click Here
তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ (১১৯২ খ্রি.) সম্পর্কে কী জানো ? 👉 Click Here
ভারতবর্ষে ইসলামের প্রবেশ সম্পর্কে আলোচনা করো।👉 Click Here