হজরত ওমারের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর :- হজরত আবু বাকরের (রঃ) মৃত্যুর পর ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হিসাবে হজরত উমার (রঃ) শপথ গ্রহণ করেন। দীর্ঘ প্রায় দশ বছর কৃতিত্বের সাথে খেলাতি পরিচালনা করেন। দূরদর্শী, সুপরিচালক, ন্যায়পরায়ণ প্রজাহিতৈষী খলিফা ইসলামী সাম্রাজ্যে সংস্কারসাধন করেন। নিত্য নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করেন, সাম্রাজ্য বিস্তার করেন, বীরত্বের সাথে শত্রু দমন করেন। অন্যায়কে দমন করেন আবার ন্যায়বিচারকে শ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করেন। তার সুপরিকল্পিত শাসনব্যবস্থা আজও বিশ্বজুড়ে সমাদৃত।
শাসনব্যবস্থা : খলিফা হজরত উমারের (রঃ) শাসন ব্যবস্থা দুটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল— কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক।
কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা : কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে থাকতেন স্বয়ং খলিফা। শাসনব্যবস্থার মূল ভিত্তি ছিল কুরআন ও নাবীর আদর্শ। শাসনব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক ও উন্নত করার লক্ষ্যে দুই কক্ষ বিশিষ্ট মাজলিসুশ শুরা নামক উপদেষ্টা পরিষদকে সরকারি স্বীকৃতি দেন। শুরার সদস্যদের পরামর্শ নিয়ে তিনি রাজকার্য পরিচালনা করতেন।
প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা : শাসনকার্যের সুবিধার জন্য সমগ্র ইসলামী সাম্রাজ্যকে কতকগুলি প্রদেশে বিভক্ত করা ছিল। প্রতিটি প্রদেশে প্রাদেশিক শাসক হিসাবে ওয়ালি নিয়োগ করা হত। ওয়ালিই হতেন প্রদেশের সামরিক ও ধর্মীয় নেতা। তাকে সাহায্য করতেন কাজি বা বিচারক, পুলিশ, জেলাশাসক বা আমীর, রাজস্ব আদায়কারী। তারা আপন আপন কাজের জন্য ওয়ালির নিকট দায়বদ্ধ থাকত। ওয়ালি তার কাজের জন্য খলিফার নিকট দায়বদ্ধ থাকতেন।
বিচারব্যবস্থা : খলিফা উমার (রঃ) বিচারব্যবস্থায় বিশেষ সংস্কার করেন। শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করে বিচার বিভাগকে স্বচ্ছ করেন। বিচারকার্য পরিচালনার জন্য প্রতি প্রদেশে কাজি নিয়োগ করেন। তাদের বেতনেরও ব্যবস্থা করেন।
বিচারব্যবস্থার ভিত্তি ছিল কুরআন, হাদীস ও ইজমা। বিচার ক্ষেত্রে ধনী-গরিব, সাধারণ বা ওয়ালি সকলকেই দেখা হত সমান দৃষ্টিতে। এমনকি প্রয়োজনে খলিফাকেও বিচারপ্রার্থী হয়ে হাজির হতে হত কাজির নিকট। কাজিকে সাহায্য করত পুলিশ, সচিব। অন্যায়ের সাজা বা সংশোধনের জন্য জেলখানার প্রবর্তনও করেছিলেন।
সামরিক ব্যবস্থা : অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সমস্ত সমস্যার মোকাবিলার জন্য খলিফা উমার বেতনভুক্ত বিরাট সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। সামরিক বাহিনীকে দু'ধরনের বাহিনী ছিল নিয়মিত ও আপাতকালীন, অশ্বারোহী ও পদাতিক এইভাবে গড়ে তুলেছিলেন বাহিনীকে। সামরিক বিভাগকে সাহায্য করার জন্য কুফা, বসরা, মক্কা প্রভৃতি স্থানে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছিলেন।
মূল্যায়ন : খলিফা হজরত আলী (রাঃ) সাহসী জ্ঞানী ও সুপুরুষ হওয়া সত্ত্বেও সাম্রাজ্যের জটিল পরিস্থিতি তাকে কোনো সিদ্ধান্তই গ্রহণ করতে দেয়নি। তার ওপর বিশাল মুসলিম সাম্রাজ্যে হজরত খলিফা উসমানের হত্যাকাণ্ড জনগণের মধ্যে যে প্রতিহিংসার বীজ বপন করেছিল তার বহিঃপ্রকাশের ফল কত মারাত্মক হতে পারে তা সম্বন্ধে তার মতো খোদা তারু মানুষের আন্দাজ করাও ছিল কঠিন। যার খেসারত তাকে জীবন দিয়েই দিতে হয়েছিল।
আর ও পড়ুন
দ্বিতীয় অধ্যায় : খলিফা ওমর (রা:) সমস্ত MCQ ও SAQ প্রশ্ন ও উত্তর। 👉 Click Here
খলিফা আবুবকর কীভাবে ভণ্ড নাবীদের দমন করেন? 👉 Click Here
কুরআন সংকলনের কারণ কী ছিল ?👉 Click Here
মজলিশ-উশ-সুরা কী ?👉 Click Here
পবিত্র চার খলিফার আমলে রাজস্ব ও বিচার ব্যবস্থার বিবরণ দাও। 👉 Click Here
হজরত ওসমান গণি (রাঃ) বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আনা হয়েছিল? 👉 Click Here
হজরত ওসমানের (রাঃ) আমলে গৃহবিবাদের কারণ কী ছিল?👉 Click Here
খোলাফায়ে রাশেদীনদের অবসানের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক আলোচনা করো। 👉 Click Here
খলিফায়ে রাশেদীন আমলের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো। 👉 Click Here
খারেজীদের কী উদ্দেশ্য ছিল?👉 Click Here
উটের যুদ্ধের নামকরণের তাৎপর্য কী ছিল অথবা উটের যুদ্ধ সম্বন্ধে কী জান ।👉 Click Here
সিম্ফিনের যুদ্ধের ফলাফল লেখো।👉 Click Here
মানুষ ও খলিফা হিসেবে হজরত আলীর মূল্যায়ন করো। 👉 Click Here
মিশরের ফাতেমিয়দের পতনের কারণ কী?👉 Click Here
তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ (১১৯২ খ্রি.) সম্পর্কে কী জানো ? 👉 Click Here
ভারতবর্ষে ইসলামের প্রবেশ সম্পর্কে আলোচনা করো।👉 Click Here