পবিত্র চার খলিফার আমলে রাজস্ব ও বিচার ব্যবস্থার বিবরণ দাও।
ভূমিকা : খোলাফায়ে রাশেদীনদের যুগ স্থায়ী ছিল মাত্র ত্রিশ বছর। এই সময়েই ইসলামের চরম বিকাশ ঘটে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, রাজত্ব সবক্ষেত্রেই প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়। তাদের উদার শাসনব্যবস্থা, প্রজাহিতৈষী, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতান্ত্রিক আদর্শ তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন করেছিল। বিশেষত দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমারের কৃতিত্ব ওই আমলকে শ্রেষ্ঠ যুগে পরিণত করেছিল।
শাসন ব্যবস্থা : খোলাফায়ে রাশেদীনদের আমলে শাসনব্যবস্থা দু-ভাগে বিভক্ত ছিল—কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা ও প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা।
প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা : শাসনকার্যের সুবিধার জন্য সে যুগে সমগ্র ইসলামী সাম্রাজ্যকে আটটি প্রদেশে ভাগ করেছিল। সেগুলি হল— মক্কা, মদীনা, সিরিয়া, বসরা, কুফা, মিশর, প্যালেস্টাইন ও জর্জিয়া। প্রদেশগুলি পরিচালনার জন্য প্রতি প্রদেশে শাসন হিসেবে নিয়োগ করা হত ওয়ালি। ওয়ালি হতেন প্রদেশের সামরিক নেতা। প্রদেশগুলিকে আবার কতকগুলি জেলায় ভাগ করা হত। ওয়ালির সাহায্যকারী হিসেবে জেলার শাসক থাকত আমীর। আমীর তার কাজের জন্য ওয়ালির নিকট দায়বদ্ধ থাকত। ওয়ালি তার কাজের জন্য খলিফার নিকট দায়বদ্ধ থাকত। এই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় চালু থাকায় কেউ স্বেচ্ছাচারী হতে পারত না ।
কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা : কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থায় সর্বোচ্চ পদে থাকতেন স্বয়ং খলিফা। তিনি কুরআন, হাদীস ও মাজলিসুশ শুরার পরামর্শ নিয়ে রাজকার্য পরিচালনা করতেন।
বিচারব্যবস্থা : খোলাফায়ে রাশেদীনদের আমলে বিচারব্যবস্থা ছিল স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দ্বিতীয় খলিফা উমার (রাঃ) বিচারব্যবস্থাকে শাসন বিভাগ থেকে আলাদা করেন। বিচারের মূল ভিত্তি ছিল কুরআন ও হাদীস। বিচারকার্য পরিচালনার জন্য প্রতিটি প্রদেশে কুরআন হাদিসের অভিজ্ঞ ও সৎ ব্যক্তিদের কাজির পদে নিয়োগ করা হত। তাদের বেতনও নির্ধারিত ছিল। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বিচারের জন্য তাদের সম্প্রদায়ের বিচারকও থাকত। বিচার ক্ষেত্রে ধনী গরিব কোনো ভেদাভেদ ছিল না। এমনকি প্রয়োজনে খলিফাকেও বিচারপ্রার্থী হয়ে কাজির নিকট হাজির হতে হত।
সামরিক বিভাগ : খলিফা যুগে বিশাল সুসংহত সামরিক বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল। বাহিনীতে দু'ধরনের বাহিনী থাকত-স্থায়ী ও আপাতকালীন। তাদের মধ্যে আবার অশ্বারোহী ও পদাতিক দু-ধরনের বাহিনী থাকত। সামরিক সাহায্যের জন্য মক্কা, মদিনা, কুফা প্রভৃতি স্থানে সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলা হয়েছিল। নামাজিক নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য পুলিশ বিভাগও ছিল ৷ অপরাধীদের মানিবর্তন হয়েছিল।
রাজস্ব ব্যবস্থা : হজরত মোহাম্মদের (সঃ) আমলে ইসলামী রাষ্ট্রের আয়ের পরিমাণ খুব স্বচ্ছ না থাকলেও খোলাফায়ে রাশেদীন যুগে তা অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। বায়তুল মাল বা সরকারি কোষাগার উন্নত হয়েছিল। রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস ছিল জাকাত, সদকা, জিজিয়া, উশর, হিমা, গাণিমাত ইত্যাদি।
আর ও পড়ুন
খলিফা আবুবকর কীভাবে ভণ্ড নাবীদের দমন করেন? 👉 Click Here
হজরত ওমারের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো। 👉 Click Here
কুরআন সংকলনের কারণ কী ছিল ?👉 Click Here
মজলিশ-উশ-সুরা কী ?👉 Click Here
হজরত ওসমান গণি (রাঃ) বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আনা হয়েছিল? 👉 Click Here
হজরত ওসমানের (রাঃ) আমলে গৃহবিবাদের কারণ কী ছিল?👉 Click Here
খোলাফায়ে রাশেদীনদের অবসানের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক আলোচনা করো। 👉 Click Here
খলিফায়ে রাশেদীন আমলের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো। 👉 Click Here
খারেজীদের কী উদ্দেশ্য ছিল?👉 Click Here
উটের যুদ্ধের নামকরণের তাৎপর্য কী ছিল অথবা উটের যুদ্ধ সম্বন্ধে কী জান ।👉 Click Here
সিম্ফিনের যুদ্ধের ফলাফল লেখো।👉 Click Here
মানুষ ও খলিফা হিসেবে হজরত আলীর মূল্যায়ন করো। 👉 Click Here
মিশরের ফাতেমিয়দের পতনের কারণ কী?👉 Click Here
তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ (১১৯২ খ্রি.) সম্পর্কে কী জানো ? 👉 Click Here
ভারতবর্ষে ইসলামের প্রবেশ সম্পর্কে আলোচনা করো।👉 Click Here