মানুষ ও খলিফা হিসেবে হজরত আলীর মূল্যায়ন করো।
ভূমিকা : হজরত আলী (রঃ) ছিলেন হজরত মুহাম্মাদের (স্বঃ) একনিষ্ঠ সাথী ও সহযোগী। শৈশব থেকেই হজরত মুহাম্মাদের (স্বঃ) সংস্পর্শে আসেন। মাত্র দশ বছর বয়সে যুবকদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন।
হজরত উসমানের (রঃ) মৃত্যুর পর ৬৫৬ খ্রিঃ তিনি চতুর্থ খলিফা নির্বাচিত হন। পাঁচ বছর খেলাফতি পরিচালনা করেন। কিন্তু তার রাজত্বকালে গোলযোগের শেষ ছিল না। গোলযোগের মধ্যেই ৬৬১ খ্রিঃ খারেজী বিদ্রোহীদের হাতে শহিদ হন।
মানুষ হিসেবে হজরত আলী (রঃ) : হজরত আলী (রঃ) ৬০০ খ্রিঃ মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। মাতার নাম ফাতিমা, পিতার নাম আবু তালিব। ছোটো থেকেই ছিলেন নম্র, ভদ্র ও বড়োদের অনুকরণকারী। শারীরিক ক্ষমতায় বীরত্ব থাকা সত্ত্বেও কখনো কোনো ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হননি। হজরত মুহাম্মাদ (সঃ) ইসলাম প্রচার শুরু করলে মাত্র দশ বছর বয়সে যুবকদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। হিজরতকালে নাবীজি তাকেই আমানতের দায়িত্ব দিয়ে আপন বিছানায় শুইয়ে রেখে যান। পরে তিনিও মদীনায় হিজরত, করেন। বদর, ওহুদ সহ অধিকাংশ যুদ্ধে বীরত্বের সাথে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধের ময়দানে কৃতিত্বের জন্য তাকে আসাদুল্লাহ বা শেরেখোদা ও লা ফাতাহ ইল্লা আলী উপাধিতে ভূষিত করা হয়। কুরআন, হাদীস ও আরবী ব্যাকরণের পাণ্ডিত্যের জন্য তাকে বাবুল ইলম বা জ্ঞানের দ্বার বলা হত। আল্লাহর খাস নির্দেশে নাবীজি আপন কন্যা হজরত ফাতিমাকে তার সাথে বিবাহ দিয়েছিলেন। প্রথম তিন খলিফার আমলে মাজলিসুশ শুরার অন্যতম সদস্য হয়ে, রাজ্য পরিচালনায় অন্যতম পরামর্শদাতার ভূমিকা নিয়েছিলেন।
খলিফা হিসেবে হজরত আলী (রঃ) : তৃতীয় খলিফা হজরত উসমানের অপমৃত্যুর পর ৬৫৬ খ্রিঃ হজরত আলী (রঃ) চতুর্থ খলিফা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর ইসলামী সাম্রাজ্য পরিচালনা করেন। ঐতিহাসিকদের মতে ব্যক্তি হিসেবে হজরত আলী একশো শতাংশ সফল হলেও খলিফা হিসেবে হজরত আলী ব্যর্থ। তার পাঁচ বছরের রাজত্বকালে ইসলামী সাম্রাজ্য মোটেও শান্তি ও নিরাপদে ছিল না। অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়। বৈদেশিক কোনো নীতিই গ্রহণ করতে পারেননি। খলিফা হজরত উসমানের (রঃ) হত্যাকাণ্ডের বিচার ও প্রতিশোধ গ্রহণকে কেন্দ্র করে সিরিয়ার শাসক মুআবিয়ার সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সেই দ্বন্দ্ব উমাইয়া ও হাশেমীদের গোত্রদ্বন্দ্বে পরিণত হয়। ইসলামী সাম্রাজ্য দুটি শিবিরে ভাগ হয়ে যায়। অবশেষে মুসলিমবাহিনী নিজেদের মধ্যে উটের যুদ্ধ ও সিফিফনের যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়।
সিম্ফিনের যুদ্ধের দুর্ভাগ্যজনক ফলাফল ও খলিফা আলীর (রঃ) ব্যর্থতাকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহী খারেজিদের উৎপত্তি হয়। অবশেষে ব্যর্থ অদূরদর্শী খলিফা আলী (রঃ) ৬৬১ খ্রিঃ বিদ্রোহী খারেজি নেতা আবদুর রহমান বিন মুলজিমের হাতে শহিদ হন।
তার মৃত্যুর সাথে সাথে অবসান হয় পবিত্র খলিফা যুগের এবং মুআবিয়ার হাত ধরে সূচনা হয় উমাইয়া রাজতন্ত্রের।
মূল্যায়ন : হজরত আলী (রঃ) ব্যক্তিজীবনে সফল হলেও খলিফা জীবনে তিনি ব্যর্থ। প্রচুর জ্ঞান ও প্রচণ্ড ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জটিল পরিস্থিতি তার জীবনের সাথে সাথে পবিত্র খলিফা যুগেরও অবসান ঘটায়।