খলিফা মানসুরকে আব্বাসী খেলাফতের প্রতিষ্ঠাতা বলা যায় কি? সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।
ভূমিকা : আবু জা'ফর আল মানসুরের গৌরবময় রাজত্বকাল আব্বাসী শাসনামলের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। আবুল আব্বাস আব্বাসী খেলাফতের প্রতিষ্ঠা করলেও শাসন কর্তৃত্বকে সুদৃঢ় করে যেতে পারেননি। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর মনোনীত উত্তরাধিকারী ভ্রাতা আবু জাফর আলমানসুর ৭৫৪ খ্রিঃ আব্বাসী সিংহাসনে আরোহণ করেন। দু'দশক (৭৭৫ খ্রিঃ) কৃতিত্বের সাথে সাম্রাজ্য পরিচালনা করেন। বিদ্রোহ দমনে ও সার্বিক উন্নয়নের জন্যই তাকে আব্বাসী সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় ।
রাজত্বকাল : আবু জাফর আলমানসুরের রাজত্বকালের প্রথমদিক ছিল চরম অশান্ত, উমাইয়াদের পতন, আবুল আব্বাসের চরম প্রতিশোধমুলক নীতি দেশবাসীকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। এমতাবস্থায় বিচক্ষণ দূরদর্শী মানসুরের দৃঢ় পদক্ষেপ অশান্ত রাজ্যকে শান্ত করে। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে। তার খিলাফতকে প্রধান তিনটি অংশে ভাগ করা হয়। (i) বিদ্রোহ দমন (ii) রাজ্য বিস্তার ও (iii) প্রশাসনিক ব্যবস্থা।
বাগদাদ নগরীর প্রতিষ্ঠা : আলমানসুর একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য টাইগ্রিস নদীতীরবর্তী বাগদাদ নগরের প্রতিষ্ঠা করেন। বাগদাদ আধুনিকভাবে সুসজ্জিত করেন। বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র করে তোলেন। সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থা বাগদাদ থেকেই পরিচালিত হয়।
আব্দুল্লাহ বিন আলীকে দমন : আব্বাসী খেলাফত প্রতিষ্ঠায় আব্দুল্লাহ বিন আলীর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তাই আবুল আব্বাস প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তার মৃত্যুর পর আব্দুল্লাহকে খলিফা পদ দেওয়া হবে। কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে তিনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে আপন ভ্রাতা আল মানসুরকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। এজন্য আব্দুল্লাহ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। খলিফা মানসুর তাকে সুকৌশলে দমন করেন।
আবু মুসলিমকে দমন : আব্বাসী খেলাফত প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন আবু মুসলিম। খলিফা মানসুর তাকে খোরাসানের শাসনকর্তা নিয়োগ করেন। কিন্তু সেখানে তার প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার লাভ করলে আশঙ্কিত খলিফা তাকে দরবারে ডেকে চক্রান্ত করে হত্যা করে। সানবাদের বিদ্রোহ দমন : আবু মুসলিমের অপ্রত্যাশিত ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে খোরাসান ও পারস্যবাসীরা সানবাদের নেতৃত্বে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে, খলিফা তাদেরও দমন করেন।
রাওয়ান্দিয়া বিদ্রোহ দমন : ৭৫৮ খ্রিঃ রাওয়ান্দিয়া নামে এক পারসিক সম্প্রদায় খলিফা মানসুরকে আল্লাহর অবতার বলে ঘোষণা করে ইসলামের নীতি বিরোধী প্রচার শুরু করে। খলিফা তার সেনাপতি খোঁজায় মা ও স্বীয়পুত্র হাদীকে দিয়ে। তাদের দমন করেন ও তাদের ভ্রান্ত ধারণা দূর করেন।
রাজ্য বিস্তার : অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন করে খলিফা মানসুর রাজ্য বিস্তার ও বহিঃশত্রুর দিকে দৃষ্টি দেন। তাবারিস্থান, গীলান, দায়লাম, জার্জিয়া, মোসুল প্রভৃতি প্রদেশ দখল করেন। মাসালিয়া দুর্গ পুনরুদ্ধার করেন।
এভাবেই তিনি আব্বাসী খেলাফতকে সুদৃঢ় করেন। এজন্যই তাকে আব্বাসী খেলাফতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।
আরও পড়ুন
আব্বাসীয় খলিফা হিসাবে আল-আমীন-এর অবদান আলোচনা করো। 👉 Click Here
আব্বাসীয় শাসনের পতনের কারণগুলি লেখো। 👉 Click Here
আব্বাসীয় শাসন ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক আলোচনা করো। 👉 Click Here
উমাইয়া ও আব্বাসী শাসনামলের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। 👉 Click Here
আব্বাসীয় যুগের স্থাপত্য শিল্পের ওপর টীকা লেখো। 👉 Click Here
আমিন ও মামুনের গৃহযুদ্ধের কারণ বর্ণনা করো। 👉 Click Here
সেলজুক কাদের বলা হত? 👉 Click Here
আব্বাসীদের সমাজ জীবন কেমন ছিল ? 👉 Click Here
টীকা লেখো : সিটি অব বাগদাদ। 👉 Click Here
খলিফা হারুণ অর রসিদ-এর সম্পর্কে আলোচনা করো। 👉 Click Here
খোলাফায়ে আব্বাসীয়র বৈশিষ্ট্য কি আলোচনা করো। 👉 Click Here
আব্বাসীয় বংশের সমস্ত MCQ প্রশ্ন ও উত্তর। 👉 Click Here
আব্বাসীয় বংশের সমস্ত SAQ প্রশ্ন ও উত্তর। 👉 Click Here
আব্বাসীয় বংশের সমস্ত সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর। 👉 Click Here