আব্বাসীয় যুগে কিভাবে জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্ভব হয়েছিল ? ইসলামী জীবনে তার প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো।
ভূমিকা : ৭৫০ খ্রি. আব্বাসীয় শাসন শুরু হয়ে ১২৫৮ খ্রি. পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এ যুগ ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগ। জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতি সাধনে মুসলিমদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তাদের জ্ঞানের মাপ কাঠিতে ভূগোল, ইতিহাস, দর্শন, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিতশাস্ত্র, রসায়ন, ধর্মতত্ত্ব, স্থাপত্য, শিল্পকলা প্রভৃতি মুসলিম সভ্যতার বিকাশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আরোহন করে। আব্বাসীয় ক্ষমতার আমলে ইসলামী সভ্যতার জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে এক স্বর্ণযুগের সূচনা হয়। নিম্নে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
ভূগোল শাস্ত্ৰ : আব্বাসীয়যুগে ভূগোল শাস্ত্রের ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়। খলিফা মামুনের রাজত্বকালে আল-খাওয়ারিজমী 'সুরাত আল আরদ' নামে পৃথিবীর একটি মানচিত্র অঙ্কন করেন। আল বুলদান আল নাফিসাহ ‘মরুরুষ যাহাব' নামে বিভিন্ন ভূগোল শাস্ত্রের গ্রন্থাবলী লিখিত হয়।
ইতিহাস : ইতিহাস চর্চা মূলত উমাইয়া খিলাফতকালে শুরু হলেও আব্বাসীয় যুগে তা বিজ্ঞান সম্মত উৎকর্ষতা লাভ করে। ঐতিহাসিক ওয়াকিদি জারীর সাততাকারী প্রমুখ বিশেষ কৃতিত্ব রেখেছেন। ইবনে আমীরের 'কামিল ফিত তারিখ' ছিল বিখ্যাত গ্রন্থ।
দর্শন: দর্শন চর্চা আব্বাসীয় যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক নবদিগন্ত রচনা করে। আলকিন্দি, আলফ রাবী ছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক। আলকিন্দি দর্শন শাস্ত্রের উপর ২৬৫ টি গ্রন্থ রচনা করেন। অন্যান্য দর্শনের গ্রন্থগুলি ছিল 'রিসালাতে ফুসুলুন হিকমা'।
চিকিৎসা : আব্বাসীয় যুগে চিকিৎসা শাস্ত্রে যথেষ্ট উৎকর্ষ ছিল। আলী বিন আব্বাস আল রাজী ছিলেন চিকিৎসক।
গণিত : আব্বাসীয় যুগে সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছিল গণিত শাস্ত্রে। গণিতজ্ঞ আল জাবের ও আল খাওয়ারিজমী ছিলেন বিখ্যাত। তারা আর্কিমিডিস ও টলেমির সূত্রগুলি সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেন । আল জাবেরের নামানুসারে আধুনিক আলজাবরার নাম হয়েছে। কাওয়ারিজমীর গ্রন্থ “হিসাবুল জবর ওয়াল মুকাবালা” পরবর্তীতে ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করা হয়।
ধর্মতত্ত্ব : আব্বাসীয় যুগে ধর্মশাস্ত্রেরও বিশেষ অগ্রগতি হয়। হাদীস, তাফসীর, ফেকাহ্ বিষয়ে গবেষণা হয়। ইমাম বুখারী এই যুগেই শুদ্ধ হাদীসের সংকলন করেন।
সাহিত্য : সাহিত্য সংস্কৃতিতে আব্বাসীয় যুগ যথেষ্ট উন্নতি ছিল। আবুল ফারাজ, আবু নাওয়াস, আবুল আতাহিয়া ইবনে খন্নিকান প্রমুখ সাহিত্যিকগণ রাজদরবারও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছিল।
জ্যোতিষশাস্ত্র : জ্যোতিষশাস্ত্রে আব্বাসীয় যুগে উন্নতি লাভ করে। খলিফা আল-মনসুর জ্যোতিষশাস্ত্রের গবেষণায় উৎসাহ দিতেন। তার সময় বিখ্যাত জ্যোতিষবিদ ছিলেন মাসাল্লাহ ইয়াকুব, আল-ফারাজী প্রমুখ। এ সময় আল-ফারীজী ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্র বিষয়ক গ্রন্থ সিদ্ধান্ত আরবীতে অনুবাদ করেন । খলিফা আল মামুন বাগদাদে জ্যোতির্বিজ্ঞানে বিশেষ চর্চার জন্য একটি মান মন্দির স্থাপন করেছিলেন। আবু মাকার বাসার তাঁর চারটি জ্যোতিষশাস্ত্র ল্যাটিন ভাষায় অনুদিত হয়। সেলজুক আমলে উল্লেখযোগ্য জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন ওমর খৈয়াম ।
আরও পড়ুন
আব্বাসীয় খলিফা হিসাবে আল-আমীন-এর অবদান আলোচনা করো। 👉 Click Here
আব্বাসীয় শাসনের পতনের কারণগুলি লেখো। 👉 Click Here
আব্বাসীয় শাসন ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক আলোচনা করো। 👉 Click Here
খলিফা মানসুরকে আব্বাসী খেলাফতের প্রতিষ্ঠাতা বলা যায় কি? সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো। 👉 Click Here
উমাইয়া ও আব্বাসী শাসনামলের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। 👉 Click Here
আব্বাসীয় যুগের স্থাপত্য শিল্পের ওপর টীকা লেখো। 👉 Click Here
আমিন ও মামুনের গৃহযুদ্ধের কারণ বর্ণনা করো। 👉 Click Here
সেলজুক কাদের বলা হত? 👉 Click Here
আব্বাসীদের সমাজ জীবন কেমন ছিল ? 👉 Click Here
টীকা লেখো : সিটি অব বাগদাদ। 👉 Click Here
খলিফা হারুণ অর রসিদ-এর সম্পর্কে আলোচনা করো। 👉 Click Here
খোলাফায়ে আব্বাসীয়র বৈশিষ্ট্য কি আলোচনা করো। 👉 Click Here
আব্বাসীয় বংশের সমস্ত MCQ প্রশ্ন ও উত্তর। 👉 Click Here
আব্বাসীয় বংশের সমস্ত SAQ প্রশ্ন ও উত্তর। 👉 Click Here
আব্বাসীয় বংশের সমস্ত সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর। 👉 Click Here