শিক্ষার লক্ষ্য সামাজিক বিকাশ”- "-এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করো। অথবা, শিক্ষাক্ষেত্রে সামাজিক বিকাশের লক্ষ্যটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর :- শিক্ষার লক্ষ্য সামাজিক বিকাশ : সমাজব্যবস্থা গড়ে ওঠার কারণ অনুসন্ধান করলে আমরা দেখতে পাই মানুষ তার প্রয়োজনেই সমাজ সৃষ্টি করেছে। স্বাভাবিকভাবেই সমাজব্যবস্থা শক্তিশালী করতে, সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে মানুষের চেষ্টার শেষ নেই। এই কাজে শিক্ষা মানুষকে বিশেষভাবে সাহায্য করে। সমাজ চায় তার কৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে, তার উন্নতি ঘটাতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে তাকে সঞ্চালিত করতে। এ সবই সামাজিক বিকাশের অন্তর্গত। আর এই কাজটি তখনই সম্ভব যখন সমস্ত ব্যক্তিমানুষের মধ্যে একটা সামাজিক চেতনা সৃষ্টি করা সম্ভব হয়। আর এই জন্যই সমাজ তার শিক্ষাব্যবস্থার সাহায্য গ্রহণ করে।
1) শিক্ষাবিদের মতামত : যেসব সমাজতত্ত্ববিদ এবং শিক্ষাবিদ শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে সামাজিক বিকাশের ওপর অধিক গুরুত্ব দেন, তাঁরা শিক্ষাকে সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়া, সমাজ নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া, সমাজ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া, সমাজ প্রগতির প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন এবং বিদ্যালয়কে সামাজিক প্রতিষ্ঠান বলে মনে করেছেন। আমেরিকার প্রসিদ্ধ শিক্ষাবিদ ব্যাগলি মনে করেন, ব্যক্তির মধ্যে 'সামাজিক সামর্থ্য' সৃষ্টি করাই শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য। রোজেনক্রানস্ বলেছেন যে, শিক্ষার দ্বারাই ব্যক্তিমানুষ সমাজ মানুষে পরিণত হয়।
2) সামাজিক বিকাশের গুরুত্ব : সামাজিক বিকাশ ব্যক্তিকে তার সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলে এবং সমাজের একজন সক্রিয় সদস্য হতে সাহায্য করে। সামাজিক বিকাশ ব্যক্তির সামাজিক মূল্যায়নেও সহায়তা করে। এই ধরনের বিকাশ ব্যক্তিকে সামাজিক সমৃদ্ধিতে অংশগ্রহণ করতে ও গণতান্ত্রিক কাঠামো বজায় রাখতে সাহায্য করে।
3) সামাজিক বিকাশে শিক্ষার অবদান : সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষার ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সামাজিক বিকাশে শিক্ষার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অবদান হল— 1 সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা, 2 সামাজিক সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা এবং তার সমাধানের ব্যবস্থা করা, ও ব্যক্তির সামাজিক চেতনা বৃদ্ধি এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটানো, 4 ব্যক্তিকে সামাজিক দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা, 5 উত্তরাধিকার সূত্রে সমাজ-সংস্কৃতি গ্রহণ, সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং তাকে পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চালন করা।
সামাজিক বিকাশ শিক্ষার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য—এ কথা স্বীকার করে নিয়েও বলতে হয়, এই লক্ষ্যের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন—এই লক্ষ্যে ব্যক্তির ওপরে সমাজকে রাখা হয়েছে। ব্যক্তির প্রবণতা, আগ্রহ, প্রেষণা ইত্যাদির প্রতি প্রয়োজনীয় গুরুত্ব আরোপ করা হয়নি। এটি মনোবিজ্ঞানসম্মত নয়। তা ছাড়া শিক্ষা যদি গতানুগতিক সামাজিক আদর্শ ও মূল্যবোধ রক্ষার্থে ব্যবহৃত হয় তাহলে সৃজনশীলতার বিকাশে অন্তরায় সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
আর ও পড়ুন
শিক্ষার ব্যাপক অর্থ বলতে কী বোঝ?ব্যাপক অর্থে শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো। 👉 Click Here
জ্ঞান অর্জনই শিক্ষা”—এই কথাটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও। 👉 Click Here
শিক্ষা একটি সামাজিক প্রক্রিয়া' ব্যাখ্যা করো। 👉 Click Here
শিক্ষা হল একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া”—উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। 👉 Click Here
শিক্ষা হল একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া”—উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। 👉 Click Here
“শিক্ষা হল বহুমুখী প্রক্রিয়া”—উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। 👉click Here
শিক্ষার কৃষ্টিমূলক লক্ষ্যটি সংক্ষেপে লেখো। 👉 Click Here
শিক্ষার বৃত্তিমুখী লক্ষ্যটি সংক্ষেপে লেখো। 👉 Click Here
শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে কী বোঝ? এই লক্ষ্যের সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি লেখো। 👉 Click Here
শিক্ষার লক্ষ্যসমূহের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব সম্পর্কে লেখো।👉 Click Here
শিক্ষার লক্ষ্য পরিবর্তনশীল কেন—তা সংক্ষেপে লেখো। 👉 Click Here
মানবজীবনে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে সংক্ষেপে লেখো। 👉 Click Here
শিক্ষার আধ্যাত্মিক লক্ষ্য সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো। 👉 Click Here
ব্যক্তিগত বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষার ভূমিকা লেখো। 👉 Click Here
সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষার ভূমিকা আলোচনা করো। 👉 Click Here
সামাজিক বিকাশের উপযোগিতা বা গুরুত্ব আলোচনা করো। 👉 Click Here