শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে কী বোঝ? এই লক্ষ্যের সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি লেখো।
উত্তর :- শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য: শিক্ষার লক্ষ্য এক নয়, বহু। যুগে যুগে বহু দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদ শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য নির্ধারণ করতে গিয়ে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী এবং সমাজতন্ত্রবাদী—এই দুই গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়েছেন। যেসব শিক্ষাবিদ শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে সামাজিক দিকের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন তাঁদের বলা হয় সমাজতন্ত্রবাদী। তাঁরা মনে করেন সমাজের বাইরে ব্যক্তির পৃথক কোনো অস্তিত্ব নেই। সামাজিক চাহিদা ও প্রত্যাশাপূরণের মধ্য দিয়েই ব্যক্তির চাহিদা ও প্রত্যাশাপূরণ সম্ভব। একইভাবে সমাজের অগ্রগতি ও উন্নয়ন হলেই ব্যক্তির অগ্রগতি ও উন্নয়ন নিশ্চিত হয়। তাই সমাজই হবে শিক্ষার লক্ষ্যের ভিত্তি। শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক মতবাদের সমর্থকদের মধ্যে হারবার্ট স্পেনসার, রস, ব্যাগলি, ডিউই, গান্ধিজি প্রমুখের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
1) সমাজকে বাদ দিয়ে ব্যক্তির আলাদা অস্তিত্ব নেই। তাই সমাজের যা লক্ষ্য ব্যক্তির লক্ষ্যও তাই হবে।
2) সমাজের কল্যাণ হলে ব্যক্তির কল্যাণ হবে। 3 সমাজই ব্যক্তিকে নিরাপত্তা দিতে পারে।
3) সামাজিক চাহিদা এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণই হবে শিক্ষার কাজ।
শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের সুবিধা :
(i) সমাজজীবন ব্যক্তিকে সবধরনের নিরাপত্তার আশ্বাস দেয় এবং তার সামনে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয় ও সমাজ পরিবেশই বংশানুক্রমে অর্জিত অতীতের সুন্দর ও সফল অভিজ্ঞতাগুলি ব্যক্তির সামনে অনুশীলনের জন্য তুলে ধরে।
2) সামাজিক রীতিনীতি এবং অনুশাসনগুলি ব্যক্তির আচরণনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজের কল্যাণ সাধন করে।
3) সমাজের সভ্য হিসেবে প্রতিটি ব্যক্তি সমাজের যাবতীয় সুযোগসুবিধা ভোগ করে। শুধু তাই নয়, এই সুযোগসুবিধাকে ব্যক্তি তার আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিতৃপ্তির কাজে ব্যবহার করে ।
4) সমাজ দুর্বল এবং সবল সব ধরনের ব্যক্তিকেই আশ্রয় দেয় এবং সবারই মঙ্গল কামনা করে।
5) এমন কতকগুলি দায়িত্ব থাকে যা এককভাবে কোনো ব্যক্তির পক্ষেই সম্পাদন করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে সমাজ বা রাষ্ট্র ওই কাজের দায়িত্ব নেয়। ফলে সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যই বলবৎ হয়।
শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের ত্রুটি বা অসুবিধা :
1) শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যে সমাজের চাহিদা, আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। ব্যক্তির সামর্থ্য, চাহিদা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা অবহেলিত হয়। এর ফলে ব্যক্তির যেমন কল্যাণ হয় না, তেমনি সমাজেরও কল্যাণ সাধিত হয় না।
2) শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে সমাজতান্ত্রিক মতবাদের প্রাধান্য রাষ্ট্রপ্রধানদের স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ করে দেয়, গণতন্ত্র অবহেলিত হয়। এই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক, ছাত্র—সকলের মধ্যেই স্বেচ্ছাচারিতার মানসিকতা তৈরি হয়।
3) শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে সমাজতান্ত্রিকতার ওপর খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় ব্যক্তিস্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়। ব্যক্তির সৃজনশীলতা বিকাশের পথে বাধার সৃষ্টি হয়।
4) পুরোপুরি সমাজতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যক্তির আত্মবিকাশের পথ রুদ্ধ হয়, ফলে ব্যক্তির মধ্যে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হয়। সমস্ত মানুষের মধ্যে পুঞ্জীভূত এই ক্ষোভ পরে বিদ্রোহের আকার ধারণ করতে পারে।
ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যে ব্যক্তি অপেক্ষা সমাজকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং ব্যক্তির ওপর সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে তা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তি এবং সমাজ উভয়ের ক্ষতি করে। তাই আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য স্থির করার সময় ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে সমন্বয়ের কথা বিবেচনা করতে হবে।
আর ও পড়ুন
শিক্ষা একটি সামাজিক প্রক্রিয়া' ব্যাখ্যা করো। 👉 Click Here
শিক্ষা হল একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া”—উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। 👉 Click Here
শিক্ষা হল একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া”—উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। 👉 Click Here
“শিক্ষা হল বহুমুখী প্রক্রিয়া”—উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। 👉click Here
শিক্ষার কৃষ্টিমূলক লক্ষ্যটি সংক্ষেপে লেখো। 👉 Click Here
শিক্ষার বৃত্তিমুখী লক্ষ্যটি সংক্ষেপে লেখো। 👉 Click Here
ব্যক্তিগত বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষার ভূমিকা লেখো। 👉 Click Here