শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক এবং সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে কী বোঝায়? এই দুটির মধ্যে তুমি কীভাবে সমন্বয়সাধন করবে ?

   উত্তর :- শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য: ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার যে লক্ষ্য নির্ধারিত হয় তাকে শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য বলে। ব্যক্তির দৈহিক, মানসিক, প্রাক্ষোভিক, আধ্যাত্মিক ও নৈতিক বিকাশ ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষার বৈশিষ্ট্য। এই সমস্ত দিকের সুষ্ঠু বিকাশের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির জীবনকে সার্থক করাই হল ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষার লক্ষ্য। বিশ্বের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদদের মধ্যে অনেকেই এই লক্ষ্যের সমর্থক। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন স্যার পার্সি নান, বার্ট্রান্ড রাসেল, স্বামী বিবেকানন্দ প্রমুখ ।

শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য: শিক্ষার যেসব লক্ষ্য সমাজকে কেন্দ্র করে স্থির করা হয় সেগুলিকে সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য বলে। সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের সমর্থকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন হারবার্ট স্পেনসার, ব্যাগলি, গান্ধিজি প্রমুখ। সমাজতন্ত্রবাদীরা মনে করেন, সমাজকে বাদ দিয়ে ব্যক্তির কোনো স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নেই। সমাজের সামগ্রিক কল্যাণের মধ্য দিয়েই ব্যক্তিকল্যাণ সম্ভব। তাঁরা সমাজের বৃহত্তর স্বার্থের কাছে ব্যক্তিগত স্বার্থকে মূল্যহীন বলে মনে করেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সমাজতন্ত্রবাদীরা শিক্ষার যে লক্ষ্য স্থির করেছেন প্রকৃতপক্ষে তা-ই হল শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য।

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য ও সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের সমন্বয় : ব্যক্তি এবং সমাজ পরস্পরের পরিপূরক এবং একে অন্যের ওপর একান্তভাবে নির্ভরশীল। অনুকূল সামাজিক পরিবেশ ছাড়া যেমন ব্যক্তির বিকাশ সম্ভব হয় না, তেমনি প্রতিটি ব্যক্তির প্রবণতা, সামর্থ্য ও সক্রিয়তার মাধ্যমেই সামাজিক অগ্রগতি ঘটে থাকে। এই কারণে আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য স্থির করার ক্ষেত্রে ব্যক্তি এবং সমাজ উভয়কে সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়।শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণে যখন ব্যক্তির বিকাশের কথা বিবেচনা করা হবে তখন লক্ষ রাখতে হবে এই বিকাশ সমাজের পক্ষে কল্যাণকর কি না। একইভাবে সমাজের উন্নয়ন বা কল্যাণের কথা বিবেচনা করার সময় লক্ষ রাখতে হবে, ব্যক্তির স্বাধীনতা বা তার আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হচ্ছে কি না।

শিক্ষার লক্ষ্য হল ব্যক্তিকে সামাজিক উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত করে সমাজ-উন্নয়নকে সার্থক করে তোলা। এজন্য ব্যক্তির মধ্যে এমন সব দক্ষতা সৃষ্টি করার প্রয়োজন যা সামাজিক উৎপাদনে কাজে লাগে। বর্তমান শিক্ষার বিভিন্ন কার্যসূচির মধ্যে অন্যতম হল সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিকাশে প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদন করা। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায়, গান্ধিজি তাঁর বুনিয়াদি শিক্ষার পরিকল্পনায় এই বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কোঠারি কমিশনের সুপারিশেও সমাজের প্রয়োজনীয় উৎপাদনশীল কাজের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার কার্যসূচির মধ্যে এমন সব প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা দরকার যাতে আঞ্চলিক সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে তার সমাধানের পথ নির্দিষ্ট করা যায়। যেমন—পুকুর পরিষ্কার, আবর্জনা দূরীকরণ, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ইত্যাদি। ডিউই তাঁর প্রকল্প পদ্ধতিতে এই বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, শিক্ষার লক্ষ্য হওয়া উচিত ব্যক্তির বিকাশের সঙ্গে সামাজিক বিকাশের সুসমঞ্জস মেলবন্ধন। প্রকৃত অর্থে শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই, বরং একটি অপরটির পরিপূরক।

          আর ও পড়ুন

আর ও পড়ুন

শিক্ষা হল একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া”—উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। 👉 Click Here

শিক্ষা হল একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া”—উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। 👉 Click Here 

শিক্ষা হল বহুমুখী প্রক্রিয়া”—উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। 👉click Here

শিক্ষার বৃত্তিমুখী লক্ষ্যটি সংক্ষেপে লেখো। 👉 Click Here

শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে কী বোঝ? এই লক্ষ্যের সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি লেখো। 👉 Click Here 

শিক্ষার লক্ষ্য সামাজিক বিকাশ”- "-এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করো। অথবা, শিক্ষাক্ষেত্রে সামাজিক বিকাশের লক্ষ্যটি ব্যাখ্যা করো। 👉 Click Here

ব্যক্তিগত বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষার ভূমিকা লেখো। 👉 Click Here



শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক এবং সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে কী বোঝায়? এই দুটির মধ্যে তুমি কীভাবে সমন্বয়সাধন করবে ?


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
×