1911 খ্রিস্টাব্দে চিনে প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবের কারণগুলি কী?

 সূচনা:

 বিংশ শতকের দোরগোড়ায় চিনের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটে। 1911 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ চিনের এই প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লব দীর্ঘদিনের রাজতান্ত্রিক যুগের অবসান ঘটাতে সক্রিয় ভূমিকা নেয়। ঐতিহাসিকদের মতে, চিনের অভ্যন্তরীণ অবস্থানে ক্রমিক অবক্ষয় এই বিপ্লবের প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছিল। এই বিপ্লবের কারণ হিসেবে বলা যায়-

দুর্বল মাঞ্জু সরকার: 

চিনা মাঞ্জু সরকার দীর্ঘদিন ধরে বিদেশিদের অন্যায় বাণিজ্য ও সামরিক সুযোগসুবিধা দিয়ে আপোশ করতে বাধ্য হয়। এছাড়া সার্বভৌমত্ব বিরোধী আগ্রাসী , পশ্চিমি ঔপনিবেশিক শক্তির আগ্রাসন ও 'বক্সার প্রোটোকল' স্বাক্ষর করায় মাঞ্জু সরকারের প্রতি চিনা জনগণের আস্থা কমে যায়। ক্ষমতাবৃদ্ধি চিনের ঐতিহ্যগত শিল্পকে ধ্বংস করে দেয়। নতুন বণিক সম্প্রদায় বিদেশিদের সঙ্গে এক অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। বহু কৃষক ভূমিহীন হয়ে পড়ে যায় যা চিনে খাদ্যাভাব ও অর্থাভাব প্রকট করে তোলে।

পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব চিনা জনগণ পাশ্চাত্য শিক্ষাগ্রহণের দরুন পাশ্চাত্য জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র প্রভৃতি রাজনৈতিক মতাদর্শের সংস্পর্শে আসে। এছাড়া অ্যাডাম স্মিথের 'Wealth of Nations', মন্তেস্কুর 'Spirit of Laws' সহ একাধিক পশ্চিমি গ্রন্থ চিনা জনগণের মনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।

পশ্চিমি বিপ্লবের প্রভাব: 

একদিকে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ অন্যদিকে ফরাসি, ইতালি ও জার্মানির ঐক্য আন্দোলন বিদেশে শিক্ষারত চিনা ছাত্রদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করে।

প্রবল অর্থসংকট: 

মাঞ্জু সরকারের তীব্র অর্থসংকট পূরণে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। এই দুঃসহ করভার জনগণকে ক্ষুব্ধ করলে সাধারণ মানুষ মাঞ্জু সরকারের অপসারণ কামনা করে।

জাপানের ভূমিকা: 

উপরিউক্ত কারণ ছাড়াও সান-ইয়াৎ-সেন জাপানে অবস্থানকালে 'তু-মেন-তুই' নামক গুপ্ত সমিতি গঠন করেন যা প্রজাতান্ত্রিক বিদ্রোহের প্রেক্ষাপট তৈরি করে। এছাড়া জাপান সরকার চিনা বিপ্লবীদের সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দিয়ে এই বিপ্লবকে সাহায্য করে।

প্রত্যক্ষ কারণ:

 অবশেষে 1911 খ্রিস্টাব্দে মাঞ্জু সরকার চুয়ান প্রদেশে রেলপথ তৈরির উদ্যোগ নিলে ওই প্রদেশের জনগণকে বাড়তি করদানের নির্দেশ সরকার কর্তৃক দেওয়া হলে সেখানে প্রবল আন্দোলন শুরু হয়। মূলত এই ঘটনাই ছিল চিনা প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রত্যক্ষ কারণ।

মূল্যায়ন : 

একাধিক কারণে চিনা প্রজাতান্ত্রিক আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরে চলার পর বিনা বাধায় বিপ্লবীরা নানকিং দখল করে এক অস্থায়ী প্রজাতান্ত্রিক সরকার গড়ে তোলেন। এই সরকারের সভাপতি মনোনীত হন সান-ইয়াৎ-সেন। অবশেষে 1912 খ্রিস্টাব্দে মাঞ্জু সম্রাটের পদত্যাগের পর চিন প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে ঘোষিত হয় যার রাষ্ট্রপতি হন ইউ-এন-সি-কাই।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
×