মিউজিয়াম কাকে বলে? মিউজিয়ামের প্রকারভেদ আলোচনা করো।
মিউজিয়াম (জাদুঘর)-এর প্রকারভেদ আলোচনা করো।অথবা, মিউজিয়াম কাকে বলে? মিউজিয়ামের প্রকারভেদ আলোচনা করো।
জাদুঘরের শ্রেণিবিভাগ: ইতিহাসের বিচারে মিউজিয়ামকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলি নিম্নরূপ-
ইতিহাস মিউজিয়াম: সাধারণত কোনো ঐতিহাসিক কক্ষে গড়ে ওঠে ইতিহাস মিউজিয়াম। ইতিহাস মিউজিয়াম কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হলো অতীতের কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার পুনস্থাপন করা। আসলে কোনো অঞ্চলের বিশেষ ইতিহাস উপস্থাপন করাই হলো ইতিহাস মিউজিয়ামের উদ্দেশ্য।
শিল্প মিউজিয়াম: এই ধরনের মিউজিয়ামে মানুষের সৃষ্টিকর্মের নান্দনিক বিষয় প্রদর্শন করা হয়ে থাকে। এই জাদুঘরে শিল্পকলা সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। যেমন-'অ্যাসমোলিয়ন জাদুঘর'।
প্রত্নতাত্ত্বিক মিউজিয়াম: প্রত্নতাত্ত্বিক মিউজিয়ামে স্বভাবতই বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান সংগ্রহ ও রাখা হয়। এই ধরনের মিউজিয়াম গড়ে ওঠে মুক্ত পরিবেশে। এখানে ইতিহাস বিষয়ক উপাদানের পরিমাণ বেশি থাকে যা ইতিহাসচর্চাকে অনেকাংশে সমৃদ্ধ করেছে।
বিজ্ঞান মিউজিয়াম: বিজ্ঞান মিউজিয়ামে বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে রাখা হয়। প্রযুক্তির ও বিজ্ঞানের বিবর্তনের সাথে আধুনিকতার প্রবেশ এবং বিস্ময়কর আবিষ্কারগুলিও বিজ্ঞান মিউজিয়ামের অন্তর্ভুক্ত। শিকাগো শহরের 'মিউজিয়াম অব সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি' এই ধরনের মিউজিয়ামের উদাহরণ।
শিশু মিউজিয়াম: শিশু মিউজিয়ামগুলি যদিও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান তবুও শিশুদের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তৈরি হয় শিশু মিউজিয়াম। শিশুদের অপ্রথাগত শিক্ষার জন্য এটি বিশেষভাবে পরিকল্পিত। কলকাতার নেহরু চিলড্রেন মিউজিয়াম এই ধরনের মিউজিয়ামের উদাহরণ।
চিত্রকলা মিউজিয়াম: চিত্রকলা মিউজিয়ামে বিভিন্ন ধরনের চিত্রশিল্পের নিদর্শন ছাড়াও মৃৎশিল্প, ধাতব শিল্প, আসবাবপত্র প্রভৃতি সংরক্ষণ করা হয়। এই ধরনের মিউজিয়ামকে আর্ট গ্যালারি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। 'অ্যামোলেন সংগ্রহশালা' এই চিত্রকলা মিউজিয়ামের উদাহরণ।
সামরিক মিউজিয়াম: বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা নানা অস্ত্রশস্ত্র, যন্ত্রপাতি, পোশাক, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি ও বিভিন্ন উপকরণ যে সংগ্রহশালায় সংরক্ষণ করে রাখা হয় তা সামরিক মিউজিয়াম নামে পরিচিত। মূলত জাতীয় লক্ষ্যকে সামনে রেখে সামরিক মিউজিয়ামগুলি গড়ে ওঠে। 'Imperial War Museum' হলো সামরিক মিউজিয়ামের উদাহরণ।
জীবনীমূলক মিউজিয়াম: বিভিন্ন সময়ে কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা রাষ্ট্রনায়কের বাড়িও জীবনীমূলক মিউজিয়ামে পরিণত হয়। যেমন-দিল্লির নেহরু ও ইন্দিরা গান্ধি মিউজিয়াম এই ধরনে মিউজিয়ামের উদাহরণ।
মূল্যায়ন: মিউজিয়াম সর্বক্ষত্রে প্রত্নতাত্ত্বিক বা ইতিহাসভিত্তিক হয় না, মিউজিয়ামের বিভিন্ন শ্রেণি ও নতুন নতুন শ্রেণি প্রতিষ্ঠা সংস্কৃতির প্রতি সাধারণ মানুষের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের পরিচয় বহন করে। তাই মিউজিয়াম-এর কাজ শুধুমাত্র মানবসভ্যতার বিভিন্ন সময়ের কার্যকলাপ নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকে না।