মিশনারিদের উদ্যোগে চিনে আধুনিক খ্রিস্টান ভাবধারার কী প্রভাব পড়েছিল?

সূচনা: 

ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে দেশি এবং বিদেশি উদ্যোগে চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটতে থাকে। এইসময় চিনের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও শিক্ষাসংস্কারে খ্রিস্টান মিশনারিদের এক বড়ো ভূমিকা নজরে আসে।

মিশনারিদের প্রভাব চিনে ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান মিশনারিদের অস্তিত্ব ছিল যারা চিনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করে। এছাড়া তারা নিজ ছাপাখানায় মুদ্রিত বাইবেল, ইতিহাস, বিজ্ঞান সহ বিভিন্ন শাখার গ্রন্থ প্রচার করে। পিছিয়ে পড়া চিনা সমাজ-সংস্কৃতিতে এর প্রভাব স্পষ্ট।

পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার:

 খ্রিস্টান মিশনারির দল চিনে ক্যাথলিক পিতা-মাতার সন্তানদের শিক্ষার জন্য স্কুল শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। সেখানে অসংখ্য ছাত্র পড়াশোনা করায় চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষার ধারা প্রবর্তিত হয়েছিল। চিনা জনগণের একাংশ মূলত আর্থিক ও বস্তুগত কারণে এবং সুবিধালাভের তাগিদে এই খ্রিস্টান স্কুলগুলিতে ভর্তি হয়েছিল।

বুদ্ধিজীবীদের উদ্যোগে :

 খ্রিস্টান মিশনারিদের আধুনিক শিক্ষার প্রভাবে চিনে বহু প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী যুবকের আত্মপ্রকাশ ঘটে। উনিশ শতকের শেষ ভাগ থেকে চিনের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই মনে করতেন, "মাঞ্জু রাজবংশের শাসনের অবসান ঘটিয়ে চিনে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংস্কার আন্দোলনের প্রয়োজন রয়েছে।”

পাশ্চাত্য ছাপাখানা:

 খ্রিস্টান মিশনারিদের ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন বই ও পত্রপত্রিকার মাধ্যমেও চিনের মানুষকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করা হয়েছিল। জন ফ্লেই-এর মতে, খ্রিস্টান মিশনারিরা জনগণকে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরণ অপেক্ষা পাশ্চাত্য শিক্ষা তথা বিজ্ঞানশিক্ষা প্রদানে অধিকতর আগ্রহী ছিলেন।

 তাইপিং বিপ্লবের মতাদর্শের সঞ্চার:

 চিনে মাঞ্জু সরকার বিরোধী কৃষক বিদ্রোহের আদর্শ ছিল খ্রিস্টবাদী। হ্যাং-শিউ-চুয়ানের কাছে পশ্চিমি শক্তিবর্গের প্রাণশক্তির উৎস খ্রিস্টধর্ম। এই কারণেই তিনি মাঞ্জু রাজবংশ বিরোধী আন্দোলনে খ্রিস্টীয় ধর্মকে আদর্শ হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
×