রূপনারায়নের কূলে কবিতার সমস্ত SAQ, MCQ ও বড়ো প্রশ্নের উত্তর।
১. কবি রূপনারানের কূলে জেগে উঠে কী জানলেন?
(ক) এ জগৎ স্বপ্নময়
(খ) এ জগৎ স্বপ্ন নয়
(গ) এ জগৎ মায়াময়
(ঘ) এ জগৎ মায়ামুক্ত
উত্তরঃ (খ) এ জগৎ স্বপ্ননয়
২. কবি রক্তের অক্ষরে আঁকা কী দেখলেন ?
(ক) কবি দেখলেন জগৎ ব্ৰহ্মময়
(খ) কবি দেখলেন জগৎ ও জীবন অলীক
(গ) কবি দেখলেন জগৎ ও জীবন দুঃখকষ্টে ভরা
(ঘ) কবি দেখলেন আপনার রূপ
উত্তরঃ (ঘ) কবি দেখলেন আপনার রূপ
৩. কবি নিজেকে কীভাবে চিনলেন ?
(ক) কবি নিজেকে চিনলেন আঘাতে আঘাতে ও বেদনায় বেদনায় |
(খ) কবি নিজেকে চিনলেন কঠিন আত্মোপলব্ধিতে |
(গ) কবি নিজেকে চিনলেন সত্যোপলদ্ধিতে
(ঘ) কবি নিজেকে চিনলেন দুঃখের তপস্যায়
উত্তরঃ (ক) কবি নিজেকে চিনলেন আঘাতে আঘাতে ও বেদনায়।
৪. কবি সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করবেন, কারণ—
(ক) পরলোকের জন্য কিছু সয় হবে |
(খ) পরলোকগমনের পাথেয় হবে|
(গ) মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দেবেন |
(ঘ) কারও কাছে ঋণী হয়ে থাকবেন না |
উত্তরঃ (গ) মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দেবেন |
৫. কবি কাকে ভালোবেসেছিলেন
(ক) কঠিনকে |
(খ) কোমলকে |
(গ) নম্রতাকে |
(ঘ) কঠোরতাকে|
উত্তরঃ (ক) কঠিনকে |
৬. রূপনারানের কূলে কবিতাটি রবীন্দ্রনাথের কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ?
(ক) আরোগ্য |
(গ) জন্মদিনেl
(খ) রোগশয্যায় |
(ঘ) শেষলেখা |
উত্তরঃ (ঘ) শেষলেখা
৭. কবি জেগে উঠেছেন -
(ক) অজয়ের তীরে।
(খ) দামোদরের তীরে |
(গ) রূপনারানের কূলে
(ঘ) ভাগীরথীর তীরে |
উত্তরঃ (গ) রূপনারানের কূলে।
৮. কবি কাকে চিনলেন ?
(ক) সত্যকে |
(খ) সুন্দরকে।
(গ) আপনাকে |
(ঘ) মৃত্যুকে ।
উত্তরঃ (গ) আপনাকে।
৯. সে কখনও কী করে না ?
(ক) আঘাত |
(খ) বঞ্চনা |
(গ) প্রত্যাঘাত |
(ঘ) রক্তক্ষয় |
উত্তরঃ (খ) বঞ্চনা।
Sssssss
১০. এ জীবনে দুঃখের তপস্যার পরিধি কত ?
(ক) আজীবন।
(খ) জীবনভর |
(গ) মৃত্যু অবধি |
(ঘ) আমৃত্যু |
উত্তরঃ (ঘ) আমৃত্যু|
১১. চিনিলাম আপনারে’-কবি কীভাবে নিজেকে চিনলেন?
(ক) দুঃখে-শোকে |
(খ) সুখে-আনন্দে|
(গ) বেদনায়-আঘাতে |
(ঘ) আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায় |
উত্তরঃ (ঘ) আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায় |
১২.“রক্তের অক্ষরে দেখিলাম”- অক্ষরে দেখিলাম -
(ক) মৃত্যুর রূপ |
(খ) প্রকৃতির রূপ |
(গ) আপনার রূপ
(ঘ) রূপনারানের রূপ |
উত্তরঃ (গ) আপনার রূপ |
১৩. ‘রূপনারায়ণের কূলে' কবিতাটি কবি লেখেন
(ক) কৈশোরে
(খ) যৌবনে
(গ) বার্ধ্যকে পর
(ঘ) মৃত্যুর পর
উত্তর: (গ) বার্ধ্যকে পর।
১৪. ‘রূপনারায়ণের কূলে' কবিতাটি কাব্যগ্রন্থের কত সংখ্যক কবিতা?
(ক) ৯ সংখ্যক
(খ) ১০ সংখ্যক
(গ) ১১ সংখ্যক
(ঘ) ১২ সংখ্যক
উত্তর: (গ) ১১ সংখ্যক
১৫. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘রূপনারায়ণের কূলে' কবিতাটি লিখেছেন -
(ক) শিলাইদহে
(খ) শ্রীনিকেতনে
(গ) শান্তিনিকেতনে
(ঘ) জোড়াসাঁকোতে
উত্তর: (গ) শান্তিনিকেতনে
১৬. ‘এ জগৎ’- -
(ক) সত্য নয়
(খ) মিথ্যা নয়
(গ) কঠিন নয়
(ঘ) স্বপ্ন নয়
উত্তর: (ঘ) স্বপ্ন নয়
১৭. ‘রক্তের অক্ষরে দেখিলাম'—কী দেখলেন?
(ক) আপনার বেদনা
(খ) আপনার স্বপ্ন
(গ) আপনার রূপ
(ঘ) স্পেনের ফিলিপ
উত্তর: (গ) আপনার রূপ
১৮. ‘চিনলাম আপনারে – কবি কী ভাবে নিজেকে চিনলেন?
(ক) দুঃখে শোকে
(খ) সুখে-আনন্দে
(গ) বেদনায়-আঘাতে
(ঘ) আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়
উত্তর: (ঘ) আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়
১৯. “সত্য যে
(ক) কঠিন
(খ) নিষ্ঠুর
(গ) অপূর্ব
(ঘ) অপার্থিব
উত্তর: (ক) কঠিন
১. ‘এ জগৎ স্বপ্ন নয়’—কবির কখন এই উপলব্ধি হয়?
উত্তরঃ মৃত্যুর রূপ অভিজ্ঞতার পর যখন পূর্নবার চেতনা জাগরিত হল, তখন কবি উপলব্ধি করলেন ‘এ জগৎ স্বপ্ন নয়' |
২. ‘এ জগৎ স্বপ্ন নয়'—কবির চোখে জগৎ কেমন?
উত্তরঃ একসময় কবির ধারণা ছিল যে জগৎ স্বপ্নময়| মৃত্যুর রূপ অভিজ্ঞতার পর কবি কঠোর জীবন সত্যকে অনুভব করেন|
৩. ‘চিনলাম আপনারে কবি নিজেকে কীভাবে চিনেন?
উত্তরঃ কবি নিজেকে চিনেলন আঘাতে আঘাতে, বেদনায় বেদনায় |
৪. ‘সত্য যে কঠিন' – সত্যকে কঠিন বলার কারন কী?
উত্তরঃ ক্রমাগত আঘাত ও বেদনালাভের পর কবি সত্যের কঠিন রূপকে উপলব্ধি করেন| তাই কবি সত্যকে কঠিন বলেছেন|
৫. ‘কঠিনেরে ভালোবেসেছিলাম'—কবি কেন ‘কঠিন’ কে ভালবাসলেন?
উত্তরঃ সত্য কঠিন হলেও কবি সত্যকে ভালোবাসেন, কারন সত্য কখনো বঞ্চনা করে না ।
৬. ‘আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন, ‘–কবি জীবনকে ‘দুঃখের তপস্যা” বলেছেন কেন?
উত্তরঃ সত্য কঠিন, তাকে লাভ করতে হলে আজীবন দুঃখের তিমিরকে জয় করতেই হয়| তাই কবি জীবনকে ‘দুঃখের তপস্যা’ বলেছেন।
৭. কবি দেনা শোধ করে দিতে চান কেন?
উত্তরঃ কবি মৃত্যুর হাতে নিজেকে নিশ্চিতে সমর্পন করতে চান | তাই জীবনের যাবতীয় দেনা তিনি শোধ করে দিতে চান |
৮. “কঠিনেরে ভালোবাসিলাম'—কবি কেন ‘কঠিন’কে ভালোবাসলেন?
উত্তরঃ অনেক দুঃখ, আঘাত ও বেদনাময় তপস্যায় উত্তীর্ণ উপলদ্ধিজাত সত্য হল ভয়ানক কঠিন| কবি সেই কঠিনকে ভালোবাসলেন কঠিনকে ভালোবাসার কারণেই |
১. ‘সে কখনও করে না বঞ্চনা'- কে কখনও বঞ্চনা করে না? কবি কীভাবে সেই ভাবনায় উপনীত হয়েছেন? ১+৪
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘রূপনারানের কূলে' কবিতায় কবি বলেছেন যে, সত্য কখনো বঞ্চনা করে না৷
জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে কবি যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন, আলোচ্য কবিতায় সেই বিশেষ চেতনার প্রকাশ ঘটেছে। জীবনের অন্তিম পর্যায়ে এসে কবি আত্মস্বরূপ উপলব্ধি করতে পেরেছেন। সেই সূত্র ধরেই তিনি সত্যের অপার মহিমা অনুধাবন করেছেন। কবির এই সত্যোপলব্ধি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
সত্য সম্পর্কে কবি বলেছেন, “সত্য যে কঠিন” | তবে, কাঠিন্য সত্বেও কবি জীবনে চলার পথে সত্যকেই গ্রহণ করেছেন এবং ভালো বসেছেন। কবির ভাষায় “কঠিনেরে ভালোবাসিলাম”। নিজের দীর্ঘ জীবন-অভিজ্ঞতা থেকে কবি জেনেছেন যে সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে সত্যের পথ অবলম্বন করাই শ্রেয়। কারণ, মিথ্যা মানেই বঞ্চনা। মিথ্যার পথ অবলম্বন করে সাময়িক সান্ত্বনা পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু সত্যের পথ রোধ করা যায়না। সত্য হল অনিবার্য। মানুষ যতই সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুক, সত্যের প্রকাশ একদিন হবেই। আবার, মিথ্যার পথ অবলম্বন করলে একসময় বঞ্চনার শিকার হতে হয়। অপরপক্ষে, সত্য কখনো মানুষকে বঞ্চনা করে না। সেইজন্য মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে প্রথম থেকেই কবি সত্যের প্রতি আস্থা রেখেছেন ।
২. “মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে”- ‘সকল দেনা” বলতে কী বোঝানো হয়েছে? সে দেনা কীভাবে শোধ করতে চেয়েছিলেন কবি? [২+৩]
উত্তরঃ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রূপনারানের কূলে”
কবিতায় কবির দার্শনিক ভাবনার প্রকাশ ঘটেছে| মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে পথচলা, সেই দীর্ঘ পথচলাকে কবি রূপকের আশ্রয়ে তুলে ধরেছেন |
কবির মতে, মানবজীবন সর্বদা দুঃখময়। মানুষ সারাজীবন ধরে দুঃখের তপস্যা করে| এই তপস্যা চলতে থাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত| কবি বলেছেন, “আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা এই জীবন” | তবে এই তপস্যার ফল কিন্তু স্বাদু হয়| তপস্যা করেই ‘সত্যের দারুণ মূল্য' লাভ করা যায়| ইহজীবনে মানুষ যাকিছু লাভ করে অর্থাৎ ধনদৌলত, মান-যশ ইত্যাদি সবই হল সত্যের দেওয়া একেকটি উপহার। আবার, জীবনে চলার পথে আমরা যেসব পার্থিব জিনিস অর্জন করে থাকি, সেসবই হল জীবনের কাছে আমাদের দেনা বা ঋণ। প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে কবি এই দেনার কথাই বলেছেন।
মৃত্যুতেই জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। অন্যভাবে বললে, জন্মের পর থেকে যে পথচলা শুরু হয়, মৃত্যুতেই তার পূর্ণবিরতি | জন্মের সময় মানুষ যেমন একাই আসে, মৃত্যুর সময়েও তাকে একাই ফিরে যেতে হয়| সারাজীবন ধরে দুঃখের কঠোর তপস্যা করে সে যাকিছু অর্জন করে, সেইসব পার্থিব জিনিস ফেলে রেখেই তাকে চলে যেতে হয়| তাই কবি মৃত্যুর মাধ্যমে সেই দেনা শোধ করতে চেয়েছিলেন।
৩. “রূপনারানের কুলে/ জেগে উঠিলাম”- ‘রূপনারান' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? এই জেগে ওঠার তাৎপর্য নিজের ভাষায় লেখ| ১+৪
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রূপনারানের কূলে' কবিতাটি কবিজীবনের অন্তিম লগ্নে লিখিত দার্শনিক ভাবসমৃদ্ধ একটি কবিতা| রবীন্দ্রদর্শন অনুযায়ী, রূপ হল দৃশ্যমান এই জগৎ; অন্যভাবে বললে, জগতের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সকল বস্তুই হল রূপ] এই কবিতায় কবি ‘রূপনারান' বলতে দৃশ্যমান তথা ইন্দ্রিয়গোচর জগতসংসারকে বুঝিয়েছেন।
কবিতার শুরুতেই কবি বলেছেন “রূপনারানের কূলে জেগে উঠিলাম” | সাধারণভাবে এই কথাটির অর্থ হল, রূপনারান নদীবক্ষে ভ্রমণ করার সময় কবি নিদ্রিত ছিলেন এবং কূলের কাছাকাছি এসে কবির নিদ্রাভঙ্গ ঘটল | কিন্তু এই আক্ষরিক অর্থের পাশাপাশি পঙক্তিটির একটি অন্তর্নিহিত অর্থ রয়েছে। ‘রূপনারান’ এখানে কোন নদী নয় বরং দৃশ্যমান এই পৃথিবীকে কবি ‘রূপনারান' বলেছেন| কিন্তু সরাসরি কোন নদীর কথা না বললেও কথাটির মধ্যে নদীর নির্যাস রয়েছে আর সেখানেই কথাটির তাৎপর্য লুকিয়ে রয়েছে।
কবি-সাহিত্যিকগণ প্রায়শই সময়ের ধারাকে বহতা নদীর সাথে তুলনা করে থাকেন| আলোচ্য অংশে সময়ের স্রোতে জীবনের পথচলাই হল রূপনারানের বক্ষে কবির ভ্রমণ | আবার জীবন স্বভাবতই মোহময় হয় কিন্তু জীবনের শেষপ্রান্তে মানুষের মোহমুক্তি ঘটে | “রূপনারানের কুলে জেগে ওঠা” বলতে কবি ইঙ্গিত করেছেন জীবনের শেষপ্রান্তে উপনীত হয়ে পার্থিব জগতের মোহমুক্তি এবং আধ্যাত্মিক চেতনার উন্মেষ।