গণশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বেতারের ভূমিকা আলোচনা করো।
গণশিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বেতারের ভূমিকা :
সর্বজনগ্রাহ্য অনুষ্ঠান প্রচার : বেতারের বিভিন্ন অনুষ্ঠান সহজসরল ভাষায় এমনভাবে পরিবেশন করা হয় যে, নিরক্ষর মানুষও তা বুঝতে পারে। সহজসরল ভাষায় সকলের বোধগম্য অনুষ্ঠান প্রচার করা হয় বলে, বেতার আজ এত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
স্বল্প খরচ : বেতারযন্ত্রের দাম তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় মানুষ, বিশেষত দরিদ্র মানুষও সহজেই এটি কিনতে পারে। তাই ধনীদরিদ্রনির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষের বাড়িতে বেতার আজ জায়গা করে নিয়েছে।
বাস্তবভিত্তিক অনুষ্ঠান প্রচার : বেতারে যেসব অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়, তা বাস্তবধর্মী হওয়ায় মানুষের মনকে ছুঁয়ে যায়। মানুষ তাই ওই ধরনের অনুষ্ঠানে আনন্দ পায়।
চিত্তবিনোদনে সহায়তা : বেতার চিত্তবিনোদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে যেসব গ্রামে আজও বিদ্যুৎ পরিসেবা পৌঁছোয়নি সেখানকার মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো হলেও তারা দূরদর্শনের অনুষ্ঠান দেখতে পায় না। সেক্ষেত্রে প্রাত্যহিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বেতার হল নিত্যসঙ্গী।
সমাজসচেতনতা জাগরণে সহায়তা: বেতারের মাধ্যমে এমন অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয় যা শ্রোতাদের সমাজসচেতন করে তোলে। তা ছাড়া বেতারের মাধ্যমে বিভিন্ন অসামাজিক কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমূলক অনুষ্ঠানও প্রচার করা হয়।
সাংস্কৃতিক বিকাশে সহায়তা : বেতারের আর-একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল শ্রোতাদের সাংস্কৃতিক বিকাশে সহায়তা করা। দেশের ঐতিহ্য এবং কৃষ্টিমূলক বিষয় নিয়ে বেতারে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। ওই অনুষ্ঠানগুলি সাধারণ মানুষের মধ্যে সুস্থ সাংস্কৃতিক বোধের বিকাশ ঘটায়।
সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে অনুষ্ঠান পরিবেশন : বেতারের মাধ্যমে সাম্প্রতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। ওই অনুষ্ঠানগুলি যখন একযোগে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে সম্প্রচার করা হয়, তখন সারা দেশের অগণিত মানুষ ওই সব ঘটনা এবং তার কারণ জানতে পারে।
বিশেষজ্ঞকেন্দ্রিক অনুষ্ঠান : বেতারের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা এবং পরামর্শ প্রচার করা হয় যা সাধারণ জনগণের বিশেষ উপকারে আসে।
এফ-এম অনুষ্ঠান : বর্তমানে বেতারে নানা অনুষ্ঠানে সমৃদ্ধ 'এফ-এম প্রচার'-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বৈচিত্র্যময় এফ-এম চ্যানেলগুলি বর্তমানে খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্য-সংস্কৃতি, খেলাধুলো থেকে শুরু করে জ্ঞানবিজ্ঞান, দেশবিদেশের খবরাখবর, বিভিন্ন মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করে শহর ও গ্রাম উভয় অঞ্চলের শ্রোতাদের মন জয় করেছে বেতার।
বহনযোগ্যতা : ক্ষুদ্রাকার বেতারযন্ত্র বা ট্রানজিস্টার অপেক্ষাকৃত স্বল্পমূল্যের এবং সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় অনেকেই একে ব্যবহার করে থাকেন।
শ্রুতিনির্ভরতা : কেবল শ্রুতিনির্ভর হওয়ায় সাধারণ কর্মজীবী মানুষ দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি বেতারের বিভিন্ন অনুষ্ঠান শোনার সুযোগ পায়। দেখা গেছে, এর ফলে তাদের উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি পায়।
ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যে, স্বল্প খরচে বেতার একটি গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম হিসেবে কাজ করে। শুধু তাই নয়, গণশিক্ষা বিস্তারে, ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে এবং চিত্তবিনোদনেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।