মাধ্যমিক বাংলা কবিতা:- আফ্রিকা (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) এর সমস্ত বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর।
“চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উ : 'আফ্রিকা' কবিতা থেকে উদ্ধৃত আলোচ্য অংশে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অপমানিত আফ্রিকার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সম্পদে সমৃদ্ধ আফ্রিকাকে শাসন-শোষণ-লুণ্ঠনের অভিপ্রায়ে সাম্রাজ্যবাদীরা আক্রমণ করেছিল। ব্রিটিশ তথা ইউরোপীয়রা নিজেদের সভ্য বলে মনে করলেও তাদের বর্বর লোভের শিকার হয়েছে আফ্রিকা। সেখানকার জনজাতির উপর অত্যাচার করে ঔপনিবেশিক শাসন কায়েম করেছে সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা। রক্তাক্ত করেছে আফ্রিকার মাটিকে, অপমান করেছে মানবতার ইতিহাসকে। এভাবেই স্বৈরাচারী বিদেশি রাজশক্তি আফ্রিকার তথা মানবসভ্যতার ইতিহাসে অপমানের কলঙ্কিত অধ্যায় রচনা করেছে।
“এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে’– 'ওরা' কারা? ওরা আসার পর কী হয়েছিল। অথবা “এল মানুষ ধরার দল” – মানুষ ধরার দল' কারা? তারা আসার পর কী হয়েছিল? অথবা সভ্যের বর্বর লোভ নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা’–সভ্যের বর্বর লোভ কী? তা কীভাবে নির্লজ্জ অমানুষতাকে নগ্ন করেছিল? অথবা ‘পঙ্কিল হল ধূলি তোমার রক্তে অশ্রুতে মিশে’–‘তোমার’ বলতে কার? তার রক্ত অশ্রু কেন ঝরেছিল?
উত্তর : উৎস : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা' কবিতা থেকে প্রদত্ত অংশটি নেওয়া হয়েছে।
প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে ‘ওরা' বলতে তথাকথিত সভ্য সাম্রাজ্যলোভী; 'মানুষধরার দলের' কথা বলা হয়েছে।
সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আফ্রিকা মহাদেশে সম্পদের লোভে ভিড় করেছিল। তারা নির্মম শোষণের দ্বারা আফ্রিকাকে করায়ত্ত করার নির্লজ্জ প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছিল। ফলস্বরূপ আফ্রিকাকে হতে হয়েছিল-মানহারা, লাঞ্ছিতা, অপমানিতা ও লুণ্ঠিতা।
প্রদত্ত মন্তব্যের মধ্য দিয়ে এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নিষ্ঠুরতা ও দাস প্রথার নির্মমতার ইঙ্গিত প্রস্ফুটিত হয়েছে।
“সভ্যতার শেষ পূণ্যবাণী”— কীসের মধ্য দিয়ে এই বাণী উচ্চারিত? পূণ্যবাণীর স্বরূপ কী ?
উ. : সাম্রাজ্যবাদী স্বৈরাচারী ইউরোপীয় রাষ্ট্রশক্তি আফ্রিকা মহাদেশে যে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে, যে হিংস্র প্রলাপে তারা মুখর- সেই পরিবেশেই যুগান্তের কবিকে সভ্যতার কোন পূণ্যবাণী উচ্চারণ করতে হবে।
স্বরূপ : সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, স্বৈরাচারী নির্যাতন মানবসভ্যতার চরমতম পাপ। সেই পাপ করে চলেছে ইউরোপীয় রাজশক্তি। আফ্রিকাবাসীর উপর তাদের পাশবিক অত্যাচার মানব-ইতিহাসকে কলভিকত করেছে। এই হিংস্র প্রবণতার বিরুদ্ধে ভুয়োদর্শী যুগান্তের কবি মানবতার ও শান্তির পক্ষে যে বাণী উচ্চারণ করেন, তাই সভ্যতার পুণ্যবাণী।
প্র: “বিদ্রুপ করেছিলেন ভীষণকে”-- ক কীভাবে ভীষণকে বিদ্রুপ করেছিল? অথবা, শঙ্ককে চাচ্ছিলে হার মানাতে কে কীভাবে হার মানাতে চাচ্ছিল ?
উ : কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “আফ্রিকা” কবিতায় পৃথিবীর অন্য মহাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন আফ্রিকাকে আস্তা আস্তে স্বাবলম্বী হতে দেখিয়েছেন। নিভৃত অবকাশে' নির্গমের রহস্যসংগ্রহ করেছিল বিশ্বের অন্যতম বিশাল এই ভূখন্ড। জল-স্থল-আকাশের দুর্বোধ্য সংকেত চিনেছিল। প্রকৃতি তাকে দিয়েছিল অপার রহস্যময়তা। ‘অতীত জাদু' মন্ত্র জাগাচ্ছিল আফ্রিকার 'চেতনাতীত মনে'। আফ্রিকার উপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আস্ফালনকে আফ্রিকা নিজেই চিনে নিতে চাইছিল। সেই ভীষণ শক্তিশালী শক্তিকে বিদ্রুপ করবার স্পর্ধা অর্জন করেছিল। ছদ্মবেশী আগ্রাসী শক্তিকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। সমস্ত শঙ্কাকে সে হার মানাতে চাইছিল। আফ্রিকা নিজের মতো করে জো বাঁচতে চাইছিল।
২. তাঁর সেই অধৈর্যে ঘন-ঘন মাথা নাড়ার দিনে'—'তাঁর' বলতে কার? সেই দিন কী হয়েছিল? অথবা ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে'–কে, কাকে কীভাবে ছিনিয়ে নিয়ে গেল? অথবা আফ্রিকার জন্ম বৃত্তান্তটি লেখো। অথবা বাঁধলে তোমাকে বনস্পতির নিবিড় পাহারায় কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে—কাকে কীভাবে কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে বন্দি করা হয়েছিল? অথবা ‘বাঁধলে তোমাকে বনস্পতির নিবিড় পাহারায়’– তোমাকে' বলতে কাকে? তাকে কীভাবে বনস্পতির পাহারায় আবদ্ধ করা হয়েছিল? অথবা ‘নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত:–কে, কেন নিজের সৃষ্টিকে বিধ্বস্ত করেছিলেন? অথবা 'এল মানুষ-ধরার দল'—মানুষ ধরার দলের আগমনের আগে আফ্রিকার স্বরূপ কেমন ছিল? অথবা আফ্রিকা' কবিতা অনুসারে আফ্রিকা মহাদেশের উদ্ভবের ইতিহাস আলোচনা করো।
উত্তর : উৎস : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা' কবিতা থেকে প্রদত্ত অংশটি নেওয়া হয়েছে।
প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে 'তার' বলতে স্রষ্টার কথা বলা হয়েছে।
* বহুকাল পূর্বে স্রষ্টা যখন সৃষ্টিকার্যে রত ছিলেন, সেই আদিম উদ্ভ্রান্ত কালখণ্ডে নিজের সৃষ্টিজনিত অতৃপ্তির কারণে তিনি বারবার সৃষ্টিকর্মকে বিধ্বস্ত করে নিখুঁততর করতে চেয়েছিলেন। সেই দিন রুদ্র সমুদ্রের বাহু প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে আফ্রিকাকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে যায় বনস্পতির নিবিড় পাহারায়। সে পাহারা ছিল নিশ্ছিদ্র আর অভেদ্য। সূর্যালোক পর্যন্ত সেখানে প্রবেশ করতে পারত না। তাই সূর্যরশ্মি বিহীন আফ্রিকার অন্দরমহল ছিল ‘কৃপণ আলোর অন্তঃপুর।’
প্র: “সভ্যতার সেই আদিম যুগে”। এখানে আদিম যুগ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? তখন নতুন সৃষ্টি কেন বার বার হচ্ছিল, তা লেখো।
উঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আফ্রিকা” কবিতার শুরুতেই ‘আদিম যুগ'-এর প্রসঙ্গ এসেছে। সভ্যতার শুরুতেই সমগ্র বিশ্বজুড়ে প্রাণের স্পন্দন দেখা গিয়েছিল। ধর্ম-বর্ণ-জাত পাতের ভেদ বৈষম্যহীন আদি বিশ্বকে সভ্যতার আদিম যুগ বলা হয়েছে।
সৃষ্টি কখনো স্থির ও জড়াকৃতি থাকে না। প্রকৃতির নিয়মই হলো ভাঙা-গড়ার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাওয়া। তখন গোটা বিশ্ব এক ছিল। ভূগোলের ভাষায় একে 'প্যানজিয়া' বলে। সেই প্যানজিয়া বারে বারে ভাঙছে। সেই ভাঙনের ফলশ্রুতি হলো আফ্রিকার জন্ম। কবির ভাষায় সে এক নতুন সৃষ্টি।
৩. ‘সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই তাদের পাড়ায় পাড়ায়'—কাদের পাড়ার কথা বলা হয়েছে? সেখানে কী কী হয়েছিল ?
উত্তরঃ উৎস : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা' কবিতা থেকে প্রদত্ত অংশটি নেওয়া হয়েছে।
প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে ‘মানুষ ধরার দল' তথা সাম্রাজ্যবাদীদের পাড়ার কথা বলা হয়েছে। বা যখন সাম্রাজ্যবাদীদের দল আফ্রিকার ওপর বর্বরোচিত অত্যাচার চালাচ্ছে, ঠিক তখনই সমুদ্রের অপর প্রান্তে সাম্রাজ্যবাদীদের পাড়ায় বিরাজ করছে অদ্ভুত বৈপরীত্যময় চিত্র। সেখানে—(ক) পরম কল্যাণময় দেবতার উপাসনায় মন্দিরে-মন্দিরে পুজোর ঘণ্টা বাজছে। (খ) নিষ্পাপ শিশুরা নিশ্চিন্ত মনে মায়ের কোলে খেলছে। (গ) কবির সংগীতে ধ্বনিত হচ্ছে সুন্দরের আরাধনা।
“যখন গুপ্ত গহ্বর থেকে পশুরা বেরিয়ে এল”–কাদের এখানে পশু বলা হয়েছে? ‘গুপ্তগহ্বরা বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উ.: কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা' কবিতা থেকে উদ্ধৃত আলোচ্য অংশে সাম্রাজ্যবাদী, অত্যাচারী ইউরোপীয় রাষ্ট্রশক্তিকে 'পশু' বলা হয়েছে। 'সভ্য' ইউরোপীয়রা আফ্রিকার আদিবাসীদের প্রতি পশুর মতোই হিংস্র আচরণ করেছে।
গুপ্তগহ্বর : ‘গুপ্তগহ্বর' বলতে গোপন বিবরকে বোঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে লুকিয়ে রাখা পাশবিক হিংস্র রূপকে বোঝাতে চেয়েছেন। তথাকথিত ভদ্রতা-সভ্যতা-মানবিকতার গোপন বিবর থেকে বেরিয়ে এসে তারা নিরীহ আফ্রিকাবাসীর উপর চরম আঘাত হেনেছে।
৪. 'দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে'– মানহারা মানবী' কে? তার দ্বারে কেন দাঁড়াতে বলা হয়েছে?অথবা “বলো ক্ষমা করো”—কার কাছে কেন ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে?
উত্তর ঃ উৎস : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে প্রদত্ত অংশটি নেওয়া হয়েছে।
সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নির্লজ্জ অত্যাচারে আফ্রিকার সম্মান ভূলুণ্ঠিত, তাই কবি মানহারা মানবী' বলতে হৃতসর্বস্ব আফ্রিকাকে বুঝিয়েছেন।
সভ্যতাদর্পী বর্বর সাম্রাজ্যবাদীদের পাশবিক অত্যাচারে আফ্রিকা চূড়ান্ত অপমানিত, লাঞ্ছিত ও রক্তাক্ত। তার সম্মান ভূলুণ্ঠিত। সৃষ্টির এই কালিমা মোচনের দায় সৃষ্টিকর্তারই। তাই কবি যুগান্তের কবিকে আহ্বানকক করেছেন 'মানহারা মানবী' আফ্রিকার দ্বারপ্রান্তে নতমস্তকে দাঁড়িয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য।
“ছিনিয়ে নিয়ে গেল, তোমাকে আফ্রিকা”, কীভাবে তা লেখো।
উ. : রুদ্র অর্থাৎ তরঙ্গ উত্তাল বিধ্বংসী সমুদ্র যেন তার আগ্রাসী বাহু বাড়িয়ে প্রাচ্যের পৃথিবীর থেকে ছিনিয়ে আফ্রিকাকে। আসলে এসবই কবির কল্পনাপ্রবণ হৃদয়ের ছবি। প্রকৃতির জড়ত্বকে অস্বীকার করে কবি তাতে প্রাণের সঞ্চার করে তাকে অর্থাৎ সমুদ্রকে একটি চরিত্র বানিয়েছেন। সে যেন অপহরণকারী-বাহুবলে সে আফ্রিকা মহাদেশকে ছিনিয়ে নিল। আফ্রিকা মহাদেশের জন্ম ইতিহাসটির ভৌগলিক ব্যাখ্যা তার নীরসতাকে হারিয়ে কীভাবে সরস সাহিত্য হয়ে উঠতে পারে এখানে দেখা গেল।
‘এসো যুগান্তের কবি’—‘যুগান্তের কবি' কে? কোন্ পরিস্থিতিতে তাকে আহ্বান করা হয়েছে? অথবা ‘সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী'—পুণ্যবাণীটি কী? কোন্ পরিস্থিতিতে তা অনিবার্য ?
উত্তর : উৎস : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে প্রদত্ত অংশটি নেওয়া হয়েছে।
যুগকে অতিক্রম করতে পারেন যিনি, তিনিই হলেন যুগান্তের কবি। অর্থাৎ, আলোচ্য অংশে ‘যুগান্তের কবি’ বলতে স্রষ্টা বা সৃষ্টিকর্তাকে বোঝানো হয়েছে।
সভ্যতাদর্পী বর্বর সাম্রাজ্যবাদীদের পাশবিক অত্যাচারে আফ্রিকা চূড়ান্ত অপমানিত, লাঞ্ছিত ও রক্তাক্ত। তার সম্মান ভূলুণ্ঠিত। সৃষ্টির এই কালিমা মোচনের দায় সৃষ্টিকর্তারই। তাই কবি ‘যুগান্তের কবিকে আহ্বান করেছেন ‘মানহারা মানবী' আফ্রিকার দ্বারপ্রান্তে নতমস্তকে দাঁড়িয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য।
নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার মধ্য দিয়েই বিপন্নতার ঝোড়ো বাতাসে রুদ্ধশ্বাস পৃথিবীকে রক্ষা করা সম্ভব। কবি আশাবাদী যে, হিংস্র প্রলাপে ভরা এই পৃথিবীতে ‘ক্ষমা কর’ শব্দগুচ্ছের উচ্চারণই হবে সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।
“হায় ছায়াবৃতা—”। ছায়াবৃতা কে? তাকে ছায়াবৃতা বলার কারণ কী ?
উ. : কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'আফ্রিকা' কবিতাটির মুখ্য বিষয় হল আফ্রিকা। আফ্রিকা মহাদেশকেই কবি এখানে 'ছায়াবৃতা' বলে সম্বোধন করেছেন।
আফ্রিকা' কবিতায় কবি ছায়াবৃতা শব্দটিকে আফ্রিকা মহাদেশের বর্ণনায় স্থাপন করে দ্বৈত অর্থে প্রয়োগ করেছেন। সাধারণভাবে এই শব্দের অর্থ ‘ছায়া দ্বারা আবৃত’ কিন্তু ব্যঞ্চিত অর্থে বলা হয়েছে উপেক্ষিত বা নয়ণের অন্তর বর্তিনী। আফ্রিকা বনস্পতির নিবিড় পাহারায় মোড়া এবং তার সত্তা কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে স্থিত। স্বৈত অর্থে তাই দেখা যায় চির রহস্যে আবৃত আফ্রিকা ছিল সভ্য পৃথিবী থেকে অদূরবর্তী। তাই নিজ সভ্যতায় নিজ মহিমায় ভাস্বর আফ্রিকাকে কবি ‘হায়’ অব্যয়ের প্রয়োগের মাধ্যমে ছায়াবৃতা বলে তাৎপর্যমণ্ডিত করেছেন।
আফ্রিকা কবিতায় মানবতার যে মর্মবাণী ধ্বনিত হয়েছে কবিতাটি অবলম্বণে আলোচনা করো। অথবা আফ্রিকা কবিতা অবলম্বনে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবি মানসিকতার পরিচয় দাও ।
উ. : কবি মাত্রই মানবতাবাদী। রবীন্দ্রনাথ ও তার ব্যতিক্রম নন। তিনি বিশ্বমানব তথা চিরমানবের কবি। সংকীর্ণ ও নির্দিষ্ট মতবাদে আবদ্ধ না থেকে তিনি তাঁর সৃষ্টিকে বিশ্ব মানবতা প্রকাশ করেছেন। দেশ কাল-ভাষা ধর্মের ঊর্দ্ধে উঠে তিনি সমস্ত নির্যাতিত, মানবাত্মার সঙ্গে সহানুভূতিতে মিলেছে। তাঁর 'আফ্রিকা' কবিতাতে তাই প্রকাশ পেয়েছে সুদূর আফ্রিকার মানুষের উপর সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনে কবির অসন্তোষ।
ইতিহাস সচেতন কবি আফ্রিকা মহাদেশের সৃষ্টির ভূ-বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাকে কাব্যরূপ দিয়েছেন। পরম শিল্পী ঈশ্বর নিজের সৃষ্টিকে নিয়ে তৃপ্ত ছিলেন না। তাই বারবার ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে তিনি প্রাচ্য মহাদেশ থেকে আফ্রিকাকে বিচ্ছিন্ন করে স্বতন্ত্র মহাদেশ গড়ে তোলেন। বনস্পতির নিবিড় পাহারায় আলোছায়ায় রহস্যঘণ পরিবেশে সেই আদিম যুগে আফ্রিকা কে একাই শুরু করতে হয় আত্ম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।ইউরোপের তথাকথিত সভ্য সমাজ আফ্রিকার মানবরূপ তথা মানব সম্পদকে ঘৃণা অবহেলা উপেক্ষা আবিল দৃষ্টিতে দেখেছে। কিন্তু আফ্রিকার বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যের হাতছানি সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপীয় রাষ্ট্রশক্তি উপেক্ষা করতে পারে নি। ক্ষমতা কায়েম করতে দাঁত নখ বের করে হিংস্র পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে।'সত্যের বর্বর লোভ নগ্ন করল আপন নিষ্পত্তি অমানুষতা'
সাম্রাজ্যবাদীদের দমন-পীড়নে জর্জরিত আফ্রিকাবাসীর ভাষাহীন ক্রন্দন কবি বিত্তকে স্পর্শ করেছে। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদীদের শেষ কথা যেখানে হিংসা, কবি সেখানে মনে করেছেন সভ্যতার পূণ্যবাণী শোনাতে পারেন একমাত্র যুগান্তের কবি যার ক্ষমার বাণী হিংসার যাবতীয় উল্লাসকে চাপা দিয়ে উচ্চারিত হবে সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী হিসাবে। তাকে আহ্বানের মধ্যে দিয়ে কবি হিংসার অবসান ও মানবতার জয় কামনা করেছেন।