মাধ্যমিক বাংলা কবিতা - অসুখী একজন (পাবলো নেরুদা) এর সমস্ত প্রশ্ন ও উত্তর।

 প্র: শিশু আর বাড়িরা খুন হল”। শিশু আর বাড়িরা বলতে কী বোঝানো হয়েছে? শিশু আর বাড়িরা কেন খুন হল ?

উ: পাবলো নেরুদার 'অসুখী একজন' কবিতায় কবি শিশু বলতে পরবর্তী প্রজন্মকে এবং ‘বাড়িরা’বলতে নিশ্চিন্ত নিরাপদ আশ্রয়কে বুঝিয়েছেন। যুদ্ধ মানেই হত্যা, ধ্বংসলীলা, মনুষত্বহীন হামলাবাজের ধ্বংসলীলা কোনো কিছুকেই নিস্তার দেয় না। তাই যুদ্ধে নির্বিচার গোলা বারুদে হাজার হাজার নিষ্পাপ শিশুর যেমন মৃত্যু হয়েছে, তেমনি ধ্বংস হয়েছে সুন্দর নিরাপদ শাস্তিপূর্ণ বাড়িগুলো।

‘সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না'— কোন্ মেয়েটির কথা বলা হয়েছে? কেন তার মৃত্যু হল না? অথবা ‘সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়’– মেয়েটি কে? তার অপেক্ষার কারণ কী ? 

 উত্তর ঃ উৎস : নোবেলজয়ী চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদা রচিত, নবারুণ ভট্টাচার্য অনূদিত “অসুখী একজন' কবিতা থেকে প্রদত্ত অংশটি গৃহীত হয়েছে।

প্রিয়জন বিদায় নেওয়ার পর যে মেয়েটি দীর্ঘদিন প্রতীক্ষার প্রহর গুণে অশেষ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছিল, এখানে সেই মেয়েটির কথা বলা হয়েছে।

প্রিয়জন বিদায় নেওয়ার পর মেয়েটি জানত না, এ যাওয়াই কথকের শেষ যাওয়া। এরপর যুদ্ধ আসে। যুদ্ধের সর্বগ্রাসী অগ্নিশিখা জাগতিক সবকিছুকে ধ্বংস করলেও, মেয়েটির হৃদয়ের ভালোবাসাকে স্পর্শ করতে পারে না। তাই সর্বহারার মহাশ্মশানে দাঁড়িয়েও মৃত্যুহীন মেয়েটি তার প্রিয়জনের প্রতীক্ষায় পথ চেয়ে থাকে।

জাগতিক সবকিছুই নশ্বর, একমাত্র ভালোবাসা অবিনশ্বর। প্রকৃতপক্ষে মেয়েটি ছিল ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক। শাশ্বত ভালোবাসার মৃত্যু হয় না। যুদ্ধের কাঠিন্য ভালোবাসার ফল্গুধারার কাছে হার মানে। তাই যুদ্ধের আগুন মেয়েটিকে স্পর্শ করতে পারেনি। অপেক্ষারতা মেয়েটিরও মৃত্যু হয়নি।

 “বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল আমার পায়ের দাগ”—কে ধুয়ে দিল? কবি একথার মধ্য দিয়ে কী বোঝাতে চেয়েছেন ? অথবা এর তাৎপর্য কী ?

 উ : পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন' কবিতায় কবির দাগ ধুয়ে দিল বৃষ্টির জল। বৃহত্তর সমাজ ও পৃথিবীর দাগ কখনো কখনো মানুষকে ঘর ছাড়তে বাধ্য করে। অগ্নিগর্ভ ভয়ানক বিপ্লবের পথকেই সে তার পথ বলে মনে করে। তার স্মৃতি, চেনা পৃথিবী, প্রিয় মানুষ সব কিছুকে পিছনে ফেলে সে এগিয়ে যায় চূড়ান্ত সংগ্রামের লক্ষ্যে। সাংসারিক পৃথিবীতে ক্রমশ ধূসর হয়ে যায় মানুষটির স্মৃতি। প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যে কবি একথাই বোঝাতে চেয়েছেন।

রক্তের একটা কালো দাগ”। রক্তের একটা কালো দাগ হলো কেন ?

 উ. : বিখ্যাত চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদা। তাঁর ‘অসুখী এক কবিতায় ফুটে উঠেছে দুঃসময়ের ছবি। রক্তের রং লাল। ‘যুদ্ধ’শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে কাটাকাটি হানাহানি স্বাভাবিকভাবে রক্তের স্রোত বয়েই চলে রাজপথে, অলিতে গলিতে। সেই গাঢ় বস্তু যখন শুকিয়ে যায় তখন কালচে রূপ ধারণ করে।

২. 'সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে'—কীসের প্রভাবে সব চূর্ণ হয়ে গেল ? কী কী চূর্ণ হল এবং আগুনে জ্বলে গেল ? 

উত্তর ঃ উৎস : নোবেলজয়ী চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদা রচিত, নবারুণ ভট্টাচার্য অনূদিত “অসুখী একজন’ কবিতা থেকে প্রদত্ত অংশটি গৃহীত হয়েছে।

 যুদ্ধের ধ্বংসলীলার প্রভাবে সবকিছু চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। কথকের মিষ্টি বাড়ি, বারান্দার ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপি গাছ, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ সবই চূর্ণ হয়ে যায় যুদ্ধের দাপটে, জ্বলে যায় যুদ্ধের আগুনে। 

১. 'তারপর যুদ্ধ এলো’– তারপর' বলতে কখন ? যুদ্ধের পরিণতি কী হয়েছিল ? অথবা ‘সমস্ত সমতলে ধরে গেল আগুন'—সমতলে কেন আগুন ধরেছিল ? তার পরিণতি কী হয়েছিল ? অথবা 'যেখানে ছিল শহর/ সেখানে ছড়িয়ে রইল কাঠ কয়লা —শহর কীভাবে কাঠ কয়লায় রূপান্তরিত হয়েছিল তা কবিতা অনুসারে আলোচনা করো। কবিতা অনুসারে শহরের সেই পরিস্থিতির বিবরণ দাও। অথবা ‘আমি তাকে ছেড়ে দিলাম.... দূরে'—কথক চলে যাওয়ার পরের ঘটনাক্রম বর্ণনা করো।

উত্তর : উৎস : নোবেলজয়ী চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদা রচিত, নবারুণ ভট্টাচার্য অনূদিত ‘অসুখী একজন' কবিতার কথক তাঁর প্রিয়ার বাহুডোর পরিত্যাগ করে পা বাড়িয়েছিলেন অনিশ্চিত কর্তব্যের জগতে অথচ এই হৃদয়বিদারক সত্যটি কথকের প্রিয়তমার কাছে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিল। তাই প্রিয়জন বিদায় নেওয়ার পর, অপেক্ষার চোরাবালিতে প্রতীক্ষার প্রহর গুণতে থাকা মেয়েটির দুটি চোখ দেখেছে কীভাবে সময়ের হাত ধরে বয়ে চলেছে সপ্তাহ-মাস-বছর। পাথরের মতো ভারী ও নিষ্ঠুর বছরগুলি ক্রমাগত দুঃসহনীয় পাষাণভার নিয়ে নেমে এসেছিল। মেয়েটির মাথার ওপর। নিখাদ ভালোবাসা বুকে নিয়ে অপেক্ষামানা মেয়েটির দুঃসহ প্রতীক্ষার দিনগুলির পরবর্তী সময়কে বোঝাতে ‘তারপর' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।

 যুদ্ধ আসে নির্মমতার নকশি কাঁথা বুনতে, রক্ত ঝরাতে, আগুন লাগতে। প্রাণঘাতী যুদ্ধের যূপকাষ্ঠে নিষ্পাপ শিশুরা বলি প্রদত্ত হয়। এমনকি প্রাসাদ, অট্টালিকা, ঘরবাড়ি সহ দেবতার মন্দিরও যুদ্ধের লেলিহান শিখা থেকে পরিত্রাণ পায় না। কবিতায় আমরা দেখি-

(ক) যুদ্ধের আগমন : রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো রক্ত বর্ষণ করতে করতে, অতর্কিতে একদিন সমতল ভূমির বুকে আছড়ে পড়ে যুদ্ধ।

(খ) যুদ্ধের তাণ্ডব : সর্বগ্রাসী যুদ্ধের কষাঘাতে শান্ত নিস্তরঙ্গ শহরের বুকে নেমে আসে ঘূর্ণিঝড়ের মহাতাণ্ডব। এমনকি কথকের শৈশব সুখস্মৃতি বিজড়িত সমস্ত চিহ্নগুলি পর্যন্ত চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়।

(গ) যুদ্ধের পরিণতি : যুদ্ধ শেষে একটা প্রাণচঞ্চল শহর কাঠ কয়লায় ঘেরা শ্মশানভূমিতে পরিণত হয়। চারিদিকে ছড়িয়ে থাকে দোমড়ানো লোহা, মূর্তির মাথা, আর রক্তের নিকষ কালো দাগ ।

(ঘ) ভালোবাসার কাছে যুদ্ধের পরাজয় : যুদ্ধের তাণ্ডবে জাগতিক সবকিছু ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও; অপেক্ষারতা মেয়েটির হৃদয়ের ভালোবাসাকে যুদ্ধ স্পর্শ পর্যন্ত করতে পারে নি। সে যেন বৈষ্ণব পদাবলীর শ্রীরাধিকার মতই শূন্য বৃন্দাবনে কৃষ্ণের জন্য প্রতীক্ষায় উন্মুখ। তাই তো সর্বহারার মহাশ্মশানে হৃদয়ের ভালোবাসার অনির্বাণ দীপশিখাকে প্রজ্জ্বলিত করে আর চোখে অন্তহীন তৃষা নিয়ে, প্রিয়জনের প্রতীক্ষায় পথ চেয়ে থাকে যুদ্ধজয়ী মৃত্যুহীনা মেয়েটি।

'সে জানত না আমি আর কখন ফিরে আসব না”– ইবক্তা এখানে কার কথা বলেছেন ?

উ. : প্রখ্যাত চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদার লেখা ‘অসুখী একজন' কবিতায় বক্তা এখানে তার স্ত্রী-র কথা বলেছেন।

কোনো সংগত কারণেই কবিকে স্বদেশ ত্যাগ করে চলে যেতে হয়েছিল বহু দূরে। সে সময় তাঁর মনে হয়েছিল, কাজটা খুব কঠিন। তাছাড়া তাঁর মনোগত অভিপ্রায়টিও তিনি গোপন রেখেছিলেন। কবি ফিরবেন তা-ও তখন ভেবে উঠতে পারে না। তার নারী কল্প স্বদেশ জানত না কবি আর কখনো ফিরে আসবেন না।


অসুখী একজন কবিতা প্রশ্ন ও উত্তর



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
×