ব্রিটিশ শাসনকালে আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের বিবরণ দাও।
সূচনা: ঔপনিবেশিক শাসনকালে সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে সর্বাধিক শোষিত ও নির্যাতিত ছিল আদিবাসী ও দলিত শ্রেণির মানুষরা। সমাজের উঁচু ও ধনী শ্রেণির মানুষদের দ্বারা এইসব আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক সুযোগসুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়েছিল। এই আর্থ-সামাজিক শোষণের বিরুদ্ধে একসময় তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ আন্দোলনও গড়ে তোলে। তবে নিম্নবর্গের মধ্যে আদিবাসী সাঁওতাল, কোল, ভিল, মুন্ডা এবং দলিত শ্রেণির মধ্যে নমঃশূদ্র, রাজবংশী, কোচ প্রভৃতি শ্রেণির মানুষেরাই ছিল প্রধান।
আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিবরণ:
ঔপনিবেশিক শাসনকালে সরল সাদাসিধে আদিবাসী বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার ও শোষণের শিকার হয় যা ছিল নিম্নরূপ-
কর আরোপ:
ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতের আদিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর সরকার যে ভূমিবন্দোবস্ত প্রবর্তন করেছিল সেখানে করের বোঝা ছিল অত্যন্ত বেশি যার বিরুদ্ধে এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল।
দিকুদের ভূমিকা:
আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপর বহিরাগত জমিদার, জোতদার, বণিক, মহাজন, দালাল শ্রেণির মানুষেরা অর্থাৎ দিকুরা বিভিন্ন কৌশলে শোষণ করত যা ছিল আদিবাসীদের জীবনে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সামাজিক আগ্রাসনের শিকার ঔপনিবেশিক শাসনকালে আদিবাসী সম্প্রদায় সামাজিক আগ্রাসনেরও শিকার হয়েছিল। নতুন পাশ্চাত্য খ্রিস্টান সংস্কৃতির প্রভাবে আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি আক্রান্ত হয়।
দলিত সম্প্রদায়ের বিবরণ:
ব্রিটিশ শাসনকালে শোষিত ও নির্যাতিত এই পশ্চাৎপদ সম্প্রদায় এককথায় 'দলিত' নামে পরিচিত।
ভাষাগত সমস্যা:
দলিত সম্প্রদায়ের মানুষেরা আঞ্চলিক ভাষায় অভ্যস্থ প্রতি আকৃষ্ট ছিল। কিন্তু ব্রাহ্মণরা দলিত শ্রেণির এই কথ্য ভাষাকে খুবই অবজ্ঞার চোখে দেখত।
বাংলায় দলিতদের সক্রিয়তা:
দলিত সম্প্রদায়ের একাধিক সমস্যার বিষয়ে সরব হয়েছেন বেশ কিছু দলিত নেতা। যেমন-হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুর এবং পূর্ববঙ্গের দলিত নেতাদের মধ্যে প্রমথরঞ্জন ঠাকুর, যোগেন্দ্র মন্ডল প্রমুখ।
আম্বেদকরের উদ্যোগ:
ব্রিটিশ শাসনকালে সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষদের মন্দিরে প্রবেশাধিকার এর চেয়ে তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার অবসান ঘটানোর উপর আম্বেদকর বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি 1927 খ্রিস্টাব্দে দলিত শ্রেণির মানুষদের নিয়ে মহারাষ্ট্রে সত্যাগ্রহ আন্দোলন করেছিলেন।