পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে চিনে কীভাবে বুদ্ধিজীবী শ্রেণির উদ্ভব হয়? চিনের তাইপিং বিদ্রোহ নিয়ে একটি টীকা লেখো।
ভূমিকা: উনিশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত চিন ছিল একটি পিছিয়ে পড়া রাষ্ট্র। শিক্ষা, সংস্কৃতি সব দিক দিয়েই পিছিয়ে পড়া চিনে বিদেশি শক্তিগুলি আধিপত্য বিস্তার করেছিল। এমতাবস্থায় চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে বুদ্ধিজীবী শ্রেণি সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে শুরু হয় তাইপিং বিদ্রোহ।
চিনে বুদ্ধিজীবী শ্রেণির উদ্ভব:
প্রথম আফিম যুদ্ধে চিনের পরাজয়ের পর থেকে কয়েক দশকের মধ্যে বিদেশি বণিকরা চিনে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।
পাশ্চাত্য শিক্ষার উপযোগিতা:
চিনে বিদেশি বণিকদের লাগাতার শোষণ ও অত্যাচারে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছিল। এমতাবস্থায় সচেতন চিনা নাগরিকরা উপলব্ধি করেন আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা ও বিজ্ঞানচর্চা ছাড়া চিনের উন্নতি সম্ভব নয়।
মিশনারিদের আধিপত্য :
নানকিং সন্ধির পর থেকেই চিনে মিশনারিদের আসা-যাওয়া এবং আধিপত্য বেড়ে যায়। তারা চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে উদ্যোগী হয়। ক্রমে পাশ্চাত্য বিজ্ঞান, গণিত, ইতিহাস, দর্শন প্রভৃতি বিষয়ক গ্রন্থ চিনের শিক্ষিত নাগরিকদের নজরে আসে। এর ফলে পশ্চাত্পদ চিনে চিন্তাধারায় আমূল পরিবর্তন ঘটে যায়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গঠন:
পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থক চিনা বুদ্ধিজীবী কাং ইউ ওয়ে চিনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে খ্রিস্টান মিশনারিদের সাহায্য করেন। মিশনারিদের উদ্যোগে চিনে অনেক বিদ্যালয়, জাদুঘর, লাইব্রেরি গড়ে ওঠে। 1887 সালে সাংহাই শহরে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি বিষয়ক একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়।
তাইপিং বিদ্রোহ:
চিনে অত্যাচারী মাঞ্জু রাজপরিবারের অপশাসনের বিরুদ্ধে যেসব বিদ্রোহ মাথা তুলেছিল তার মধ্যে তাইপিং বিদ্রোহ অন্যতম (1850-64 খ্রিস্টাব্দ)। চিনা ভাষায় 'তাইপিং' কথার অর্থ 'মহান শান্তি'। তাইপিং বিদ্রোহীদের লক্ষ্য ছিল খ্রিস্টীয় প্রোটেস্টান্ট চিন্তাধারার আদর্শে এক ধরনের সমাজতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তোলা। এধরনের সমাজ গড়ে উঠলেই চিন দেশে 'স্বর্গীয় শান্তি' নেমে আসবে, এমনটাই ছিল বিদ্রোহীদের ধারণা।
কারণ: তাইপিং বিদ্রোহের বিভিন্ন কারণ ছিল-
দেশবাসীর দুর্দশা: উনিশ শতকের মধ্যভাগে চিনে খরা, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, মহামারির সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারি বৃদ্ধি-প্রভৃতি সমস্যা পরিস্থিতি জটিল করে।
কর্মচারীদের দুর্নীতি: মাঞ্জু সরকারের কর্মচারীরা ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত। তারা কৃষকদের থেকে বেশি হারে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে অত্যাচার শুরু করে।
বিদেশি আধিপত্য: চিনে বিদেশি বণিকদের অবাধ আধিপত্য চিনাদের ক্ষুব্ধ করে। বিদেশি পণ্যের অবাধ আমদানির প্রভাবে চিনা শিল্প-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চিনারা কাজ হারায়।
আন্দোলনের সূচনা: তাইপিং বিদ্রোহের প্রাণপুরুষ ছিলেন হ্যাং-শিউ-চুয়ান। তিনি নিজেকে 'ঈশ্বরের সন্তান' বলে ঘোষণা করেন। তিনি মাঞ্জু শাসনের অবসান ঘটিয়ে চিনে 'স্বর্গরাজ্য' গঠনের আহ্বান জানান। তিনি নিজেকে 'স্বর্গীয় রাজা' বলে ঘোষণা করেন। চিনের কৃষক, শ্রমিক-সহ সাধারণ মানুষ বিদ্রোহে যোগ দেয়।