রেগুলেটিং অ্যাক্ট ও পিটের ভারতশাসন আইনের শর্তাবলি ও গুরুত্ব লেখো।
ভারতে কোম্পানির ওপর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে রেগুলেটিং অ্যাক্ট ও পিটের ভারতশাসন আইন-এর ভূমিকা লেখো।
রেগুলেটিং অ্যাক্ট: 1770 খ্রিস্টাব্দে একদিকে 76-এর মন্বন্তরের এর মতো ঘটনা অন্যদিকে দ্বৈতশাসনের কুপ্রভাব ছাড়াও কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যক্তিগত বাণিজ্য বাংলায় এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এইসময় ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে প্রবর্তন করে 1773 খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্ট।
কোম্পানির পরিচালক সভা সম্পর্কে ধারণা কোম্পানির পরিচালক সভা দ্বার স্থির হয়- পরিচালক সভার প্রার্থী হতে গেলে একাধিক্রমে দুই বছর ইংল্যান্ডে বসবাস করতে হবে। কোনো ভোটদাতাকে ন্যূনতম একহাজার পাউন্ডের শেয়ারহোল্ডার হতে হবে। পরিচালক সভার সদস্য হবে চার বছরের জন্য 24 জন ব্যক্তি।
রেগুলেটিং অ্যাক্ট-এর শর্তাবলি: ব্রিটিশ কোম্পানির পরিচালক সভা ও মালিক সভার গঠনতন্ত্র অনুসারে এই আইনে বলা হয়- পরিচালক সভার সদস্য হিসেবে চার বছরের জন্য 24 জন নিযুক্ত হবে। প্রতিবছর চার ভাগের এক ভাগ অংশ সদস্যপদ ত্যাগ করবে। সরকারের অনুমোদনক্রমে পরিচালক সভা ভারত শাসনের জন্য গভর্নর জেনারেল ও তাঁর কাউন্সিলের সদস্যদের নিযুক্ত করে। পরিচালক সভা প্রতি একমাস পর পর ভারত সম্পর্কিত সামরিক, বেসামরিক ও রাজস্ব বিষয়ক তথ্যাদি সরকারকে জানাতে বাধ্য থাকবে।
রেগুলেটিং অ্যাক্টের গুরুত্ব: 1773 খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্টের গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল- কোম্পানির কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ করা হয় এই আইনের দ্বারা। এই আইনের দ্বারা কোম্পানির অপশাসন প্রতিরোধ ও ভারতবাসীর স্বার্থরক্ষার প্রচেষ্টা করা হয়। মাদ্রাজ ও বোম্বাই প্রেসিডেন্সি গভর্নর জেনারেল-এর শাসনের অধীনে আসে। ইংরেজ সরকারের কর্তৃত্ব ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ওপর বৃদ্ধি পায়।
পিটের ভারতশাসন আইন: 1784 খ্রিস্টাব্দের পিটের ভারতশাসন আইন ছিল পূর্বতন আইনের সঙ্গে বেশ কিছু সংস্কারমূলক নতুন ধারার সংযোজন মাত্র। মূলত রেগুলেটিং অ্যাক্টের ত্রুটিগুলি দূর করাই ছিল এই আইনের লক্ষ্য।
পিটের ভারতশাসন আইনের শর্তাবলি:
এই আইনের দ্বারা কোম্পানির শাসন তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব ন্যস্ত হয় বোর্ড অব কন্ট্রোলের হাতে। বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি মনোনীত হন ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্যরাই। গভর্নর জেনারেল, একজন প্রধান সেনাপতি ও দু'জন সদস্য নিয়ে একটি কাউন্সিল গঠিত হয়।
গুরুত্ব: এই আইনে গভর্নর জেনারেলের সঙ্গে কাউন্সিলের সম্পর্ক সুনির্দিষ্ট করেছিল। বোম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ওপর কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ কার্যকরি করতেও বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল এই আইন। এই আইন কোম্পানির ভারত শাসনের ক্ষমতা ও তাকে পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণের জন্য যে খসড়া তৈরি করেছিল তা 1857 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বলবৎ ছিল।
মূল্যায়ন : ভারতের ন্যায় এক সুবিশাল উপনিবেশে কোম্পানি ওপর সর্বদা ব্রিটিশ সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট পিটের ভারত শাসন আইন ও রেগুলেটিং অ্যাক্ট জারি করেছিল। কারস্টেন।