মার্কেন্টাইল অর্থনীতি বলতে কী বোঝায়? শিল্পপুঁজির বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।?

 মার্কেন্টাইল মূলধন বলতে কী বোঝায়? এই মতবাদের প্রধান বক্তব্য কী ছিল?

 মার্কেন্টাইল অর্থনীতি: 

বিভিন্ন ইউরোপীয় রাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে যখন সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করেছিল সেইসময়ে এক নতুন অর্থনৈতিক মতবাদের জন্ম নেয় যা সংরক্ষণবাদী বা মার্কেন্টাইল অর্থনীতি নামে পরিচিত। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিল্পবিপ্লবের ফলে উদ্বৃত্ত দ্রব্যাদি বিক্রয়ের জন্য প্রয়োজন হয় বৃহত্তর বাজারের। এই বাজার দখলের পথ অনেকটাই

মসৃণ করেছিল ভৌগোলিক আবিষ্কার। এর ফলে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে পুঁজিগত পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এই পরিবর্তনকে বলা হয় মার্কেন্টাইল মূলধন বা পুঁজিবাদ।

কোম্পানি গঠন: 

সপ্তদশ থেকে অষ্টাদশ শতকে একচেটিয়া অধিকারযুক্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠিত হয়। বহির্দেশে সরকারের প্রতিনিধিরূপেই কোম্পানিগুলি ব্যাবসাবাণিজ্যের অধিকারী হয়। এই নীতি অনুসারে ইউরোপের স্পেন, পোর্তুগাল, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে যে ধরনের মূলধন সৃষ্টি হয় তা মার্কেন্টাইল মূলধন নামে পরিচিত।

মার্কেন্টাইল অর্থনীতি বলতে কী বোঝায়? শিল্পপুঁজির বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।?

নেভিগেশন অ্যাক্ট ইংল্যান্ডের নেভিগেশন অ্যাক্টে বলা হয়েছিল ইংল্যান্ডের বণিক সম্প্রদায়কে ওলন্দাজ জাহাজের মাধ্যমে পণ্য আমদানির পরিবর্তে নিজ জাহাজ ব্যবহার করতে হবে। এরই সূত্র ধরে 1690-এর দশকে ইংল্যান্ডের আমদানি বাণিজ্যে একচেটিয়া কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়।

 মার্কেন্টাইল অর্থনীতির প্রধান বক্তব্য:

 মুক্ত বাণিজ্য:

 মার্কেন্টাইল মতবাদের মূল বিষয় হলো মুক্ত বাণিজ্য, অর্থাৎ ইংল্যান্ড যেমন নেভিগেশন অ্যাক্টের দ্বারা ব্রিটিশ ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের বন্দরগুলি সকলের জন্য বাণিজ্য ক্ষেত্রে উন্মুক্ত করে দিয়েছিল, এখানে সেই বিষয়কেই তুলে ধরা হয়েছিল।

 নতুন বাণিজ্যনীতি:

 মার্কেন্টাইলবাদী মনোভাবকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে গড়ে উঠেছে এক নতুন বাণিজ্যনীতি, যেখানে বিভিন্ন দেশের বণিক সংগঠনগুলি নিজেদের বাণিজ্য কেন্দ্রগুলিকে উন্মুক্ত করে দিতে চেয়েছিল এবং যা বিশ্বঅর্থনীতিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। বিশেষ করে স্পেন, পোর্তুগাল, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড সহ বিভিন্ন রাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যের দ্বারা যে মূলধন সঞ্চয় করেছিল তা-ই মার্কেন্টাইল মূলধন নামে পরিচিত।

 ফিজিওক্র্যাটস :

 মার্কেন্টাইল মূলধনকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সে উদ্ভব হয় কিছু অর্থনীতিবিদের যাঁরা ফিজিওক্র্যাটস নামে পরিচিত। তাঁদের মতে, বাণিজ্য হয় সম্পদের উৎস এবং ভৌগোলিক ও সামরিক ক্ষমতার ভিত্তি। তাই রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের পরিবর্তে তারা মুক্ত বাণিজ্যের তত্ত্বে বিশ্বাসী।

 শিল্পপুঁজির বৈশিষ্ট্য:

প্রথমত, শিল্পপুঁজি মূলত বৃহৎ শিল্পের সাথে যুক্ত অর্থনীতি। বড়ো বড়ো শিল্পকারখানার উৎপন্ন পণ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকে যে পুঁজি তা-ই শিল্পপুঁজি।

দ্বিতীয়ত, শিল্পপুঁজির পরিমাণ কখনোই সামান্য হয় না। এক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ অর্থ এবং শিল্প সংগঠন এর সাথে যুক্ত থাকে। এর একদিকে থাকে মালিক শ্রেণি ও অপর দিকে থাকে শ্রমিক শ্রেণি।

তৃতীয়ত, শিল্পপুঁজিকে কেন্দ্র করে শ্রমিক ও মালিক শ্রেণির মধ্যে আর্থিক ও সামাজিক ভেদাভেদ তৈরি হয় যা সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে।

চতুর্থত, শিল্পপুঁজিকে কেন্দ্র করে সামাজিক শোষণের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। কারণ মালিক শ্রেণি অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় শ্রমিক শ্রেণিকে তাদের প্রাপ্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
×