চিনের ওপর আরোপিত অসম চুক্তিগুলির বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো। অথবা, তিয়েনসিন ও নানকিং-এর সন্ধির শর্তাবলি কী ছিল?
সূচনা: ঊনবিংশ শতকে পাশ্চাত্যের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি নিজেদের অর্থনৈতিক মুনাফা ও রাজনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি করার জন্য এশিয়াও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশকে গ্রাস করে নিতে চেয়েছিল, চিনও এর বাইরে ছিল না। এইসময় চিনের সামারিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি চিনের ওপর একের পর এক অসম চুক্তি আরোপ করেছিল।
চিনের ওপর আরোপিত অসম চুক্তি:
নানকিং চুক্তি:
1842 খ্রিস্টাব্দে প্রথম অহিফেন যুদ্ধে চিনকে পরাজিত করে ব্রিটেন চিনের ওপর নানকিং-এর অসম চুক্তি জোর করে চাপিয়ে দেয়। 1842 খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির শর্তাবলি ছিল-
প্রথমত, ক্যান্টন, অ্যাময়, ফুচাও, নিংপো এবং সাংহাই-এই পাঁচটি বন্দর ইংরেজদের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
দ্বিতীয়ত, চিন সর্বমোট 21 মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেবে এবং ক্যান্টনে কো-হং বণিকদের একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তৃতীয়ত, কয়েকটি চিনা গোষ্ঠীকে বাণিজ্যের যে একচেটিয়া অধিকার দেওয়া হয়েছিল তা তুলে নেওয়া হয়। এছাড়া চিনে ব্রিটিশ প্রতিনিধি পাঠানো এবং বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন করা হয়।
বগের সন্ধি:
1843 খ্রিস্টাব্দে চিনের সাথে ইংল্যান্ডের বগের সন্ধির শর্তাবলি ছিল-
প্রথমত, চিনের পাঁচটি বন্দরে ইংল্যান্ডের যুদ্ধজাহাজ প্রবেশ করতে পারবে।
দ্বিতীয়ত, চিনে ব্রিটিশরা 'অতিরাষ্ট্রিক অধিকার' লাভ করবে।
তৃতীয়ত, চিনারা ইংল্যান্ডকে সর্বাপেক্ষা অনুগৃহীত দেশের মর্যাদা দেবে।
ওয়াংঘিয়ার চুক্তি:
1844 খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার সঙ্গে চিনের ওয়াংঘিয়ার চুক্তির
শর্তাবলি ছিল-
প্রথমত, আমেরিকা 'অতিরাষ্ট্রিক অধিকার' লাভ করবে বলে স্থির হয়।
দ্বিতীয়ত, আমেরিকার চিনে বাণিজ্যের ওপর শুল্ক ধার্য করার অধিকার চিনের থাকবে না। তৃতীয়ত, 12 বছর অন্তর এই চুক্তির পুনর্নবীকরণ করা হবে।
তিয়েনসিনের চুক্তি:
দ্বিতীয় অহিফেনের যুদ্ধে চিনকে পরাজিত করে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স চিনের ওপর তিয়েনসিনের অসম চুক্তি চাপিয়ে দেয়। এই চুক্তির শর্তাবলি ছিল-
প্রথমত, বিদেশিরা চিনে অবাধ ভ্রমণ, বসবাস, খ্রিস্টধর্ম প্রচার করতে পারবে।
দ্বিতীয়ত, 1858 খ্রিস্টাব্দের এই চুক্তিতে স্থির হয় বিদেশি শক্তিগুলিকে যেসকল সুযোগসুবিধা দেওয়া হয়েছিল তা বজায় থাকবে।
তৃতীয়ত, চিনে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের একজন করে মন্ত্রী থাকবেন। বিদেশিদের জন্য হ্যানকাও, নানকিং, চেফু সহ এগারোটি বন্দর মুক্ত হয়।
চতুর্থত, নির্দিষ্ট পরিমাণ শুল্ক সঠিক সময়ে প্রদানের মাধ্যমে চিনে আফিম ব্যাবসা বৈধতা লাভ করে।
পিকিং-এর চুক্তি:
1860 খ্রিস্টাব্দে পিকিং-এর চুক্তি অনুসারে স্থির হয়েছিল-
প্রথমত, ব্রিটিশরা চিনের কওলুন উপদ্বীপ লাভ করবে।
দ্বিতীয়ত, চিনা সরকার কুলি ব্যাবসাকে আইনসম্মত করবে।
তৃতীয়ত, পিকিং শহরে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পাবে। চিন ইংল্যান্ডকে 4 মিলিয়ন টেইল ক্ষতিপূরণ দেবে।
শিমনোশেকির সন্ধি:
1895 খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত এই সন্ধির শর্তাবলি ছিল-
প্রথমত, এই সন্ধি অনুসারে ইংল্যান্ড পায় ইয়াংসিকিয়াং, রাশিয়া পায় মাঞ্জুরিয়া এবং ফ্রান্স পায় ইউনান।
দ্বিতীয়ত, যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ চিন জাপানকে দেয় 200 মিলিয়ন কিউপিং টেল।
তৃতীয়ত, এই চুক্তির পর চিন কোরিয়ার স্বাধীনতা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়।