ঔপনিবেশিক ভারতের শিল্পায়নের সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা ভারতে শিল্প-শ্রমিকের উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে লেখো।

 ভারতে শিল্পায়নের সামাজিক প্রভাব: 

সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ সরকার ভারতকে তাদের অন্যতম শোষণস্থলে পরিণত করেছিল। বিদেশি পুঁজিপতিরা ভারতে মূলধন খাটিয়ে এদেশের শিল্পের উন্নতি ঘটায়। তবে তাদের অর্জিত মুনাফার পুরোটাই চলে যেত ইংল্যান্ডে এবং তা বিদেশের আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটাত। ফলে ভারতীয় সমাজে শিল্পায়নের প্রভাব পড়েছিল, যথা-

 অর্থনীতিতে পরিবর্তন:

 শিল্পায়নের প্রভাবে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এদেশের পার্সি, মাড়োয়ারি, গুজরাটি প্রভৃতি বণিক সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে দেশীয় পুঁজির বিকাশ ঘটে। ফলে ভারতের কৃষিনির্ভর অর্থনীতি পায় গতি, হয়ে ওঠে প্রাণচঞ্চল।

 নগরায়ণ:

 দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে ওঠা বিভিন্ন কারখানাকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন নগর প্রতিষ্ঠিত হয়। নগরগুলিকে ঘিরে ক্রমে রাজনৈতিক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক আন্দোলন দানা বাঁধে।

গ্রামীণ জীবনে অবক্ষয়: 

শিল্পায়নের ফলে দেশের নানা প্রান্তে নতুন অসংখ্য শহর গড়ে ওঠে। এসব শহরে গড়ে ওঠে আধুনিক কলকারখানা। গ্রামে বসবাসকারী কৃষকরা কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে নগদ মজুরি পাওয়ার জন্য গ্রাম ত্যাগ করে সপরিবার শহরমুখী হয়। এভাবে দেশের গ্রামীণ জীবনে ভাঙন দেখা দেয়।

 মালিক ও শ্রমিকশ্রেণির উদ্ভব: 

শিল্পায়নের প্রভাবে ভারতীয় সমাজের শ্রেণিবিন্যাস পাল্টে যায়। উদ্ভব হয় দু'টি নতুন শ্রেণির- পুঁজিপতি মালিক শ্রেণি এবং দরিদ্র শ্রমিক শ্রেণি। এই পুঁজিপতিরাই দেশের রাজনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

ভারতে শিল্প-শ্রমিকদের উদ্ভব ও বিকাশ:

 ভারতে শিল্পায়নের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে শিল্প-কারখানায় কাজ করার জন্য দেশের বহু মানুষ শ্রমিকের কাজে যোগ দেয়। এর প্রেক্ষিতে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এদেশে শিল্প-শ্রমিকের উদ্ভব ঘটে।

শ্রমিকদের ঠিকানা:

 বাংলার কলকারখানায় আগত শিল্প-শ্রমিকদের অধিকাংশের ঠিকানা ছিল বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মাদ্রাজ ইত্যাদি রাজ্য।

ধীর গতি: 

ব্রিটিশ আমলে ভারতে শিল্পায়নের গতি ছিল খুব ধীর। তাই এদেশের শ্রমিকদের জীবনেও পরিবর্তন ছিল না বললেই চলে। একটি সমীক্ষা অনুসারে, 1911 সালে ভারতের মোট জনসংখ্যা ছিল 30 কোটি 30 লক্ষ, সেখানে সংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিক ছিল মাত্র 21 লক্ষ।

প্রতিবাদ:

 শ্রমিকদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুণ। শ্রমিকরা কারখানা মালিকের শোষণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজ অধিকার আদায়ে তৎপর হয়ে ওঠে। কাজের সময় কমিয়ে দেওয়া, মজুরি বৃদ্ধি ইত্যাদি দাবি পূরণের জন্য শ্রমিকরা আন্দোলনে অংশ নেয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
×