ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কৃষকরা কী ভূমিকা পালন করেছিল।

 ভূমিকাঃ 

ভারতকে 'পূর্ণ স্বাধীনতা' দেওয়ার প্রস্তাব মানতে না চাওয়ায় কংগ্রেস ক্লিপস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন গান্ধিজি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেন। গান্ধিজির পরিকল্পনায় এটা ছিল শেষ গণ-আন্দোলন। এই আন্দোলনে কৃষকসমাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

আন্দোলনে কৃষকদের ভূমিকা: 

মধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক কৃষক, এমনকি খেত মজুররাও ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দেয়। জমিদার বা মহাজন নয়, এক্ষেত্রে অত্যাচারী ব্রিটিশ সরকারকে ভারত ছাড়া করাই ছিল কৃষকদের প্রধান লক্ষ্য।

বাংলায় আন্দোলন: 

বাংলার রাজবংশী, আদিবাসী প্রভৃতি সম্প্রদায়ের কৃষকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মেদিনীপুরের তমলুক, সুতাহাটা, মহিষাদল, পটাশপুর, খেজুরি প্রভৃতি এলাকা বিদ্রোহী কৃষকদের দখলে চলে যায়। কৃষকরা খাজনা দেওয়া বন্ধ করে, রাস্তা কেটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে থানা আক্রমণ করে। আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে ৭৩ বছরের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরা পুলিশের গুলিতে শহিদ হন।

বিহারের আন্দোলন: 

এই আন্দোলন বিহারে তীব্র আকার নেয়। ৮০ শতাংশ থানা কৃষকদের দখলে চলে যায়। মুঙ্গের, ভাগলপুর, পুর্নিয়া, মজফফরপুর সর্বত্রই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। কিষাণ সভার কর্মীরাও আন্দোলনে যোগ দেন। মধুবনি এলাকায় ৫০০০ সশস্ত্র জনতা থানা আক্রমণ করে।

অন্যত্র আন্দোলন: 

এর পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, বোম্বাই, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ সর্বত্র কৃষকরা ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নেয়।

মূল্যায়ন:

 প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে ওঠে কৃষক অসন্তোষকে সংহত করার জন্য প্রতিষ্ঠানিক প্রয়াস শুরু হয়। ক্রমে কমিউনিস্ট তো বটেই কংগ্রেস নেতৃবৃন্দও কৃষক বিদ্রোহের নিয়ন্ত্রকে পরিণত হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
×