কীভাবে মার্কেন্টাইলবাদ থেকে শিল্প ও বাণিজ্য মূলধনকেন্দ্রিক সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব ঘটেছিল?

 সমগ্র বিশ্বজুড়ে যখন উপনিবেশকেন্দ্রিক অর্থনীতির সূচনা হয়েছিল তখন সংরক্ষণবাদী বা মার্কেন্টাইলবাদ নামক একপ্রকার অর্থনৈতিক ধারণা প্রসার লাভ করেছিল। এই ধারণার কোনো সুসংবদ্ধ তত্ত্ব বা কোনো বিশেষ অর্থনীতিবিদ-এর প্রতিষ্ঠার সাথে যুক্ত ছিলেন না। 'Wealth of Nations' গ্রন্থে অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ সর্বপ্রথম মার্কেন্টাইলবাদ কথাটি ব্যবহার করেন। এই মার্কেন্টাইলবাদে দেশের স্বার্থ, বণিকের স্বার্থ ও উৎপাদকের স্বার্থ ভিন্ন ছিল না। আবার ডেভিড হিউম মন্তব্য করেন, সঞ্চিত অর্থ ও অন্যান্য সম্পদ বৃদ্ধি করে নয়, এই সম্পদ বারংবার বিনিয়োগ করেই দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলা সম্ভব।

উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস

মার্কেন্টাইল মূলধন:

কোম্পানি গঠন সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতিনিধিরূপেই কোম্পানিগুলি একচেটিয়া ব্যাবসাবাণিজের অধিকারী হয়। এই নীতি অনুসারে ইউরোপের পোর্তুগাল, স্পেন, নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে যে ধরনের মূলধন সৃষ্টি হয়েছিল তা মার্কেন্টাইল মূলধন নামে পরিচিত।

 সম্পদ অর্জন:


 উপনিবেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন এবং অর্থসম্পদ আহরণ ও শোষণ হয়ে উঠেছিল তখন রাষ্ট্রনীতির মূল অঙ্গ। আর এই উপনিবেশ স্থাপনই হয়ে উঠেছিল সম্পদ অর্জনের মূল মাধ্যম।

মার্কেন্টাইলবাদের পরিবর্তন:

অবাধ বাণিজ্যের বিরোধিতা: মার্কেন্টাইলবাদ অনুসারে অবাধ বাণিজ্যের বিরোধিতা করা হয়। এই নীতি অনুসারে সমগ্র বিশ্ববাসীর ধারণা ছিল অন্য দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ না করলে নিজেদের উন্নতি করা সম্ভব নয়।

মুক্ত বাণিজ্য:

 উপনিবেশে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিদেশি প্রতিযোগিতা রহিতকরণের কথা বলা হয়েছে এবং এর বিপরীতে পরোক্ষভাবে মুক্ত বাণিজ্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

 পোর্তুগালের অভিজ্ঞতা: 

উপনিবেশ স্থাপনের ক্ষেত্রে পোর্তুগিজরা বাণিজ্য ও কৃষি উৎপাদনের ওপর তীক্ষ্ণ নজর ও গুরুত্বদানের কথা বলে যার মাধ্যমে তারা বাড়তি মূলধন সঞ্চয় করতে পারে।

ফিজিওক্র্যাটস : 

ফ্রান্সের অর্থনীতিবিদদের বলা হয় ফিজিওক্র্যাটস। তাঁরা অর্থনীতির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। তাঁদের মতে, বাণিজ্যই হলো সম্পদের উৎস এবং ভৌগোলিক, সামাজিক ক্ষমতার ভিত্তি।

মূল্যায়ন :

 মার্কেন্টাইল অর্থনীতি অবাধ বাণিজ্যের বিরোধিতা করে। একারণে দেশের মূলধন দেশের সম্পদের মধ্যে সঞ্চিত থাকে। অবশ্য এতে দেশের সঠিক উন্নয়ন অনেকটাই বাধাপ্রাপ্ত হয়। মার্কেন্টাইল অর্থনীতি অবাধ বাণিজ্যের বিরোধিতা করার ফলে এই অর্থনীতি বিভিন্ন দিক থেকে ত্রুটিপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে বিশ্বঅর্থনীতিতে মার্কেন্টাইলবাদ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।


 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
×