নয়াউপনিবেশবাদ কাকে বলে? নয়াউপনিবেশবাদের বৈশিষ্ট্য লেখো।

 নয়াউপনিবেশবাদ কাকে বলে? নয়াউপনিবেশবাদের বৈশিষ্ট্য লেখো। অথবা, নবসাম্রাজ্যবাদ বলতে কী বোঝায়? নবসাম্রাজ্যবাদের বৈশিষ্ট্য লেখো।

নয়াউপনিবেশবাদ/নবসাম্রাজ্যবাদ মার্কসবাদী ঐতিহাসিকগণের তত্ত্বে আটের দশকে পুঁজিবাদী দেশগুলির সরকার এবং বহুজাতিক সংস্থার আধিপত্যের স্বরূপ বর্ণনা প্রসঙ্গে নয়াউপনিবেশবাদ এক উল্লেখযোগ্য আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রায় ছয় দশক পর্যন্ত নয়াউপনিবেশবাদ বা নবসাম্রাজ্যবাদ কথাটির ব্যাপকতা লক্ষ করা যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তিতে আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের সদ্যেস্বাধীন অনেক দেশের ওপর মার্কিন শক্তি ও রুশ শক্তি আর্থ-সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যে অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ জারি করে রাখে তা নয়াউপনিবেশবাদ নামে পরিচিত।

উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস

নয়াউপনিবেশবাদ / নবসাম্রাজ্যবাদের বৈশিষ্ট্য:

 নয়াউপনিবেশবাদের বৈশিষ্ট্যগুলি হলো-

 রাজনৈতিক ভিত্তি স্থাপন:

 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ঠান্ডা লড়াইয়ের আবহে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি এশিয়া ও আফ্রিকার সদ্যেস্বাধীন দেশগুলির ওপর একপ্রকার রাজনৈতিক ভিত্তি স্থাপন করেছিল নয়াউপনিবেশবাদের মাধ্যমে।

 বাজার অর্থনীতির প্রতিষ্ঠা:

 নয়াউপনিবেশবাদ বাজার অর্থনীতিকে হাতিয়ার করে পুঁজিবাদের মাধ্যমে বর্তমান বিশ্ব অর্থব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে উদ্যত হয়। যেমন-রাশিয়া ও চিন এই দু'টি দেশের হাত ধরে বাজার অর্থনীতি প্রবর্তিত হয়। বহুজাতিক সংস্থাগুলির মাধ্যমে নয়াউপনিবেশবাদের পুঁজিবাদ তৃতীয় বিশ্বের ওপর একাধিপত্য স্থাপন করে।

উপনিবেশহীন সাম্রাজ্যবাদ:

 নয়াউপনিবেশবাদে কোনো দুর্বল রাষ্ট্র দখল করে উপনিবেশ স্থাপন বা উপনিবেশে সার্বিক আধিপত্য কায়েম করা হয়নি। তাই একে উপনিবেশহীন সাম্রাজ্যবাদ অ্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

 আর্থিক অধীনতা:

 নয়াউপনিবেশবাদে বহুজাতিক সংস্থাগুলি মূলত তিনটি উপায়ে বহির্বিশ্বের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। যথা-মূলধন লগ্নি, পরিচালন দক্ষতার ধারণাদান এবং প্রযুক্তিগত কলাকৌশল সরবরাহ। যেকোনো দেশের শিল্পক্ষেত্রের উন্নতির জন্য এই তিনটি উপাদান অপরিহার্য। তাই অনুন্নত দেশগুলি নিজেদের শিল্পোন্নয়নের ক্ষেত্রে বহুজাতিক সংস্থাগুলির শিল্প কৌশল ব্যবহার করেছিল।

অনুষ্ঠানহীন সাম্রাজ্যবাদ:

 নয়াউপনিবেশবাদে সরাসরি সাম্রাজ্য স্থাপন না করে সুকৌশলে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র ও দুর্বল দেশগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আসলে সময়ের সাথে সাথে ঔপনিবেশিক দেশগুলি নিজেদের কৌশলও বদলে দিয়েছে।

 সামরিক নিয়ন্ত্রণ: 

নয়াউপনিবেশবাদের দ্বারা পৃথিবীর শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি দুর্বল রাষ্ট্রগুলির ওপর সামরিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার চেষ্টা চালায়। এছাড়া সদ্যস্বাধীন ছোটো রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষর করে যা নয়াউপনিবেশবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

 আর্থিক শোষণ: 

নয়াউপনিবেশবাদে দুর্বল দেশগুলির আর্থিক সম্পদ আত্মসাৎ করার সুতীব্র বাসনা লক্ষ করা যায়। এছাড়াও অনুন্নত দেশগুলিতে উন্নত দেশগুলির দ্বারা বেসরকারি বিনিয়োগ হলো নয়াউপনিবেশবাদী শোষণের আরও একটি মাধ্যম। এ প্রসঙ্গে মাইকেল ব্যারাট ব্রাউন লিখেছেন- "Imperist control now diffence more on economic dommination on political rule."

 ঋণ প্রদান: 

নয়াউপনিবেশবাদ ও নবসাম্রাজ্যবাদের দ্বারা শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশগুলি থেকে আর্থিক লাভ করার জন্য সচেষ্ট হয়েছিল। এইসময় শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি বিপুল পরিমাণ ঋণ প্রদান করে সেখান থেকে আর্থিক মুনাফা লাভে সচেষ্ট হয়েছিল।

উপসংহার

1945 খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নয়াউপনিবেশবাদের দ্বারা বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য দুর্বল দেশগুলির ওপর বিভিন্নভাবে হস্তক্ষেপ করেছিল। ফলে দুর্বল দেশগুলির সামনে নেমে আসে এক নতুন সমস্যা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
×