বৃক্ষরোপণের উপযোগিতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা করো।
বৃক্ষরোপণের উপযোগিতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ
মিজান: কিরে শ্যামল তোদের স্কুলে তো বনমহোৎসব বেশ জমকালো ভাবেই হল।
শ্যামল: নতুন হেডমাস্টার মশাই এসব বিষয়ে প্রচন্ড তৎপর।
মিজান: আমাদের স্কুলে শুধুই পড়া আর পড়া।
শ্যামল: এক কাজ কর তুই পরের বছর আমাদের স্কুলে চলে আয়, খুব মজা হবে।
মিজান: সরকার থেকে যে চারা গাছ দেওয়া হয় তা নিয়ে ভাবছি আমাদের পাড়ায় একটা বৃক্ষরোপণ উৎসব করব।
শ্যামল: তোদের রাস্তার ধারে প্রচুর জায়গা, ইচ্ছা করলে করাই যায়, করলে আমাকে খবর দিস অবশ্যই যাব।
মিজান: আমাদের গ্রামে কত গাই ছিল ভাব, দুপুরে আম বাগানের মাচাতেই ঘুমোতাম। আজ কোথায় সে সব বাগান, সেখানে পুরো একটা পাড়া হয়ে গিয়েছে। সেই গাছপালা সবুজের সঙ্গে ওঠা-বসা পাখির গান সব যেন কেমন হারিয়ে যাচ্ছে।
শ্যামল: এইভাবে পরিবেশ ধ্বংস হতে থাকলে ভবিষ্যতে বেশ কষ্টই আছে। আমাদের হেডমাস্টার মশায় সেদিনের ভাষণে নানান উপায় দেখিয়েছেন। বর্তমানে নাকি কন্যাসন্তান জন্মালে তার নাম করে একটি গাছ লাগানোর নির্দেশ আসছে, তাতে সেই মেয়ের বিয়ের সময় টাকার অভাবটা অনেকাংশেই সেই গাছ মেটাবে। পাড়ার সব বাড়িতেই কম বেশি জায়গা রয়েছে, তবে দীর্ঘমেয়াদি কোন গাছ লাগাতে হলে পরিকল্পনা করেই লাগাতে হবে। দেখতে হবে যেন সেই গাছ অপরিণততেই কাটা না পরে।
মিজান: গ্রামাঞ্চলে সরকারী চারা থেকে অনেকেই লাভজনক গাছ লাগানোর দিকে ঝুকবেন। এতে তাঁরও উপকার আবার প্রকৃতির ভারসাম্য ও রক্ষা হবে।
শ্যামল: বর্তমানে মানুষ কিছুটা হলেও সচেতন হয়েছে। বড় রাস্তার দুধারে সুন্দরভাবে গাছ লাগানো হয়েছে। গ্রীষ্মকালেও রাস্তা দিয়ে যেতে কষ্ট পেতে হয় না। কেউ কোনো ভাবে গাছের ক্ষতি করার চেষ্টা করলে মানুষ আজ সরব হচ্ছে। এটা মানুষের পক্ষেও যে শুভ সেটা মানুষ বুঝতে শিখেছে।
মিজান: সচেতনতা আসলেও বর্তমানে আধা শহরগুলোতে গাছের অবস্থা সংকটজনক। জায়গার দাম প্রচন্ড বেড়ে যাওয়ায় সেখানে গাছ তো দূরের কথা, পুকুর, ডোবা সব বুজিয়ে ফেলে বহুতল বাড়ি তৈরি হচ্ছে। বড় বড় যেসব বাগান ছিল সবই প্রোমোটারদের দখলে এসে গেছে। সুতরাং উপনগরীতে গাছ বলে আর কিছু থাকবে না।
শ্যামল: এ ব্যাপারে সরকার এখন কড়া পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। প্রোমোটিং করতে হলেও অর্ধেকের বেশি জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে এবং সেখানে গাছ লাগাতে হবে। বড় বড় আবাসনগুলোতে এই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।
মিলন: সরকারী সংস্থা, 'সোশ্যাল ফরেস্ট্রি' এদের সঙ্গে মিডিয়াগুলোও সহায়তা করেছে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে। বনদপ্তর ও পর্যটন দপ্তরের মিলিত প্রচেষ্টায় বন আবার নবরূপ লাভ করছে।
শ্যামল: তবে সুখের কথা একটাই যে মানুষ কিছুটা হলেও সচেতন হয়েছে, গাছকে ভালোবাসতে শিখেছে, গাছ লাগাচ্ছে এবং পরিচর্যাও করছে।
মিজান: এভাবে চললে প্রকৃতির রোষ কিছুটা হলেও কমবে।
বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুই বন্ধুর সংলাপ
সুমন: তোর ছেলের কোন ক্লাস হলো? মাধ্যমিক দেবে তো এবার?
রমেন: আরে না, ওদের তো CBSE বোর্ড, দশম শ্রেণির পরীক্ষা সেভাবে আবশ্যিক নয়।
সুমন: বাংলা আছে তো? নাকি তাও নেই? রমেন: আছে, আছে, তবে অনেকের নেই।
সুমন: সত্যি বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোও ধুঁকছে।
রমেন: আরে, সব স্কুলগুলোতে কী আর সেভাবে পড়ানো হয়।
সুমন: হ্যাঁ, বাংলা ভাষাটাই এখন ব্রাত্য হয়ে গেছে।
রমেন: বাংলাতে তো কাউকে এখনো বিশেষ কথা বলতে দেখি না।
সুমন: অথচ, এই মধুর ভাষা বাঙালির গর্ব, এটাই বাঙালির পরিচিতি।
রমেন: মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধসম, এতো কবিগুরু বলে গিয়েছেন
সুমন: কবে বুঝব আমরা যে মাতৃভাষা ছাড়া আমাদের উন্নতি সম্ভব নয়।
রমেন: এখন যদি আমরা বুঝতে না পারি, তবে বাংলা ভাষা অচিরেই বিনষ্ট হবে।
সুমন: হয়তো, দেখা যাক কী হয়?
মাতৃভাষার মাধ্যমে সর্বস্তরে শিক্ষালাভের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে দুই বন্ধুর সংলাপ
সোহম: তোর হাতে ওটা কী বইরে রহিম-অভিধান নাকি?
রহিম: ঠিক ধরেছিস। তবে সাধারণ অভিধান নয়- পরিভাষার অভিধান। আজকাল পদার্থবিজ্ঞান কিংবা রসায়ন বইতে যে দাঁতভাঙা বাংলা শব্দের ব্যবহার হচ্ছে-অভিধান না দেখলে চলছে না। সত্যি সোহম, বাংলায় ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি পড়ানোর কী দরকার ছিল বলত?
সোহম: কেন, মাতৃভাষার মাধ্যমটাই তো সবচেয়ে সহজ মাধ্যম। যেমন, মাতৃদুগ্ধ সহজে হজম হয়। তাইতো সর্বস্তরে এখন মাতৃভাষাকেই শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে।
রহিম: আরে বাবা, আমাদের বাবা-কাকারাও তো লেখাপড়া করেছেন, নাকি? কই ইংরেজি ভাষায় পড়াশুনা করতে গিয়ে তাদের তো কোনো অসুবিধা হয়নি। উপরন্তু ইংরেজি পড়ার অভ্যাসটাও তাদের রপ্ত হয়ে থাকত। আমাদের তো সেটাও থাকছে না। অভ্যাসের মধ্যে না থাকলে একটা বিদেশি ভাষা কি আর দখলের মধ্যে থাকে?
সোহম: তা ঠিক। কিন্তু ভেবে দেখ, আমাদের পল্লীগ্রামের হাজার হাজার মানুষকে এই ইংরেজি ভাষার প্রাচীর টপকাতে না পারার ফলে লেখাপড়া ছেড়েই দিতে হয়েছে।
রহিম: শুনেছি সে-কথা। মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষা প্রসারিত হবে। এ কথাও জেনে নিচ্ছি। কিন্তু উপযুক্ত পরিভাষা তৈরি না হলে বাংলায় ভালো বই লেখা কী করে সম্ভব হবে?
সোহম: রাতারাতি কিছু হবে না, ধীরে ধীরে পথ করে চলতে হবে। তুই কাঁ সব দাঁতভাঙার কথা বলছিলি না? দ্যাখ গোড়ার দিকে যেটাকে মনে হবে দাঁতভাঙা, পরবর্তীতে সেটাই অনুশীলনের মাধ্যমে সহজবোধ্য ও গা-সওয়া হয়ে যাবে।
রহিম: কিন্তু ছোটোরাও কি এইসব শব্দ মুখস্থ করবে? সোহম: নিশ্চয়ই। শিক্ষার সর্বস্তরে শিক্ষা চলবে মাতৃভাষায়। এতে অদ্ভুত কিছু নেই।. না বলে 'খেলার মাঠ' বলবে এই আর কী! এখন ব্যাপারটা অদ্ভুত মনে হলেও অভ্যস্ত হয়ে গেলে আর অদ্ভুত লাগবে না। সকলের আলোচনার মধ্যে যে শব্দটা সহজ এবং গ্রহণযোগ্য তাই থেকে যাবে-অন্যগুলি যাবে হারিয়ে।
রহিম : মাতৃভাষায় শিক্ষাপ্রদানে সব মানুষের মধ্যে শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্ততা আসবে সেটা ঠিকই, তবে পাশাপাশি বর্তমান যুগের পরিস্থিতির দিকে লক্ষ রেখে অন্যান্য ভাষা জানার অপরিহার্যতার কথা ভুললেও কিন্তু চলবে না, বুঝলি ভাই। চললাম আজ তাহলে।
সোহম: ঠিক আছে, আমিও অভিধানে মন দিই।