আধুনিক ভারতে ইতিহাসের উপাদান হিসেবে বঙ্গদর্শন পত্রিকার গুরুত্ব কী?

ভূমিকা

ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে প্রকাশিত সাময়িক পত্রিকাগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় ছিল বঙ্গদর্শন। ১৮৭২ খ্রি. সমকালীন বাংলার বাঙালির রাজনীতি ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব, দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য, সমাজতত্ত্ব প্রভৃতি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বঙ্গদর্শন পত্রিকায় তুলে ধরেছেন।

জাতীয়তাবাদ বিস্তার:

 উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের বাংলার জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষের ইতিহাসে বঙ্গদর্শন এক অপরিহার্য উপাদান। বিখ্যাত আনন্দমঠ উপন্যাস এবং 'বন্দেমাতরম' সংগীত এই পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়।

সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা: 

বাঙালি মানসে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার আঁতুড়ঘরও ছিল এই পত্রিকা। বঙ্গদর্শন পত্রিকাতেই বঙ্কিমচন্দ্রের সাম্য প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয় যা বাঙালি সমাজে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার প্রসারে যথেষ্ট সহায়তা করে।

সমকালীন তথ্য:

 বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত রচনাগুলি থেকে সে সময় বাংলার ইংরেজ সরকারও জমিদারদের শোষণ-অত্যাচার, সামাজিক পরিস্থিতি, সাধারণ মানুষের অবস্থা, সাহিত্য, রাজনীতি, দর্শন, বিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব প্রভৃতি সম্পর্কে বহু তথ্য পাওয়া যায়।

জনমত গঠনের ভূমিকা:

 এই পত্রিকার জনপ্রিয়তা ছিল অপরিসীম। অধীর আগ্রহে এই মাসিক পত্রিকাটির জন্য বাঙালি মন অস্থির হয়ে উঠত। রবীন্দ্রনাথ তার ছোটো বেলায় পত্রিকাটির নতুন সংখ্যা হাতে পাওয়ার জন্য মুখিয়া থাকত। এ রকম অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তার কারণেই জনমত গঠনের ক্ষেত্রেও এই পত্রিকা তাৎপর্যপূর্ণ পালন করেছিল।

উপসংহার: 

১৮০০-র দশকে বন্ধ হয়ে যাওয়া 'বঙ্গদর্শন' পত্রিকাটি পুন:প্রকাশে রবীন্দ্রনাথ উদ্যোগী হয়েছিলেন। ঊনিশ শতকের বাঙালির সাংস্কৃতিক ও সামাজিক জীবনের ইতিহাস রচনায় বঙ্গদর্শনের গুরুত্ব অপরিসীম।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
×