সমাজ সংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের অবদান আলোচনা করো।

 ভূমিকাঃ

 উনিশ শতকে বাংলার সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে ব্রাহ্মসমাজ গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল।

রামমোহন রায়: 

রামমোহন প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মসমাজের সংস্কার আন্দোলনগুলি হিন্দু সমাজের কুপ্রথার বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছিল। সতীদাহ প্রথার মাধ্যমে হিন্দু বিধবারা যে আত্মহননের পথ বেছে নেন। রামোহনের মৃত্যুতে ব্রাহ্মসমাজ আন্দোলনের সে পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। রামমোহন হিন্দু বিধবাদের শোচনীয় অবস্থা দেখে তাদের পিতা ও স্বামীর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। ব্রাহ্মসমাজ নারীশিক্ষার ব্যবস্থা করেন এবং বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ, কৌলিন্য প্রথা ও অন্যান্য অনেক ঘৃণ্য কুপ্রথার নিন্দা করেন।

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর: 

রামমোহন রায়ের মৃত্যুর (১৮৮৩) পর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বে ব্রহ্ম আন্দোলন আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। তার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ববোধিনী সভা (১৮৩৯ খ্রি.) বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, জাতিভেদ প্রথা, প্রভৃতির বিরুদ্ধে এবং অসবর্ণ বিবাহ, বিধবা বিবাহ, নারীশিক্ষা, নারী স্বাধীনতা, শ্রমিক কল্যাণ প্রভৃতির পথে আন্দোলন গড়ে তোলেন।

 কেশবচন্দ্র সেন:

 কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ সমাজ সংস্কারের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। মূলত, কেশবচন্দ্রের প্রচেষ্টাতেই ব্রিটিশ সরকার ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে 'তিন আইন' পাশ করে। এই আইনের দ্বারা সরকার বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ রোধ করে এবং বিধবা বিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহকে বৈধ বলে ঘোষণা করে। স্ত্রীশিক্ষা, শ্রমিক শিক্ষা, জনসংযোগ, মদ্যপান নিবারণ, নারী কল্যাণ ইত্যাদি বহুবিধ সৎকর্মে ব্রাহ্মসমাজ অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। পর্দা প্রথার অবসান ঘটিয়ে ও উচ্চশিক্ষা প্রবর্তন করে ব্রাহ্ম সমাজ নারীজাতির উন্নয়নে সচেষ্ট হয়। কেশবচন্দ্র সেন 'সঙ্গতসভা' প্রতিষ্ঠা করে নিপীড়িত মানুষের জন্য জনসেবার আদর্শ গ্রহণ করে।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
×