অভিব্যক্তি ও অভিযোজন অধ্যায়ে প্রশ্ন ও উত্তর। জীবন বিজ্ঞান। Life science
মাছের অভিযোজনে পটকার ভূমিকা উল্লেখ কর?
পটকার সাহায্যে মাছ জলের উপরে ভাসতে পারে এবং জলের গভীরে বিচরন করতে পারে। পটকার বায়ুর পরিমাণের হ্রাস বৃদ্ধির মাধ্যমে মাছের আপেক্ষিক গুরুত্ব পরিবর্তিত হয়। পটকা বায়ুপূর্ণ হলে মাছের আপেক্ষিক গুরুত্ব কমে এবং জলে ভেসে ওঠে। আবার পটকা বায়ুশূন্য হলে আপেক্ষিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ফলে মাছ জলে ডুবতে পারে।
মৌমাছির ওয়াগটেল নৃত্য কী
যদি খাদ্যের উৎস মৌচাক থেকে 75 থেকে 100 মিটারের মধ্যে হয় তখন মৌমাছিরা একবার ডানদিকে এবং একবার বামদিকে লুপ তৈরি করে ইংরাজী '8' অক্ষরের মতো এক বিশেষ নৃত্য করে এবং লুপের মাঝে সরলরৈখিক অংশে তারা উদর আন্দোলিত করে। তাই নৃত্য কে ওয়াগটেল নৃত্য বলে।
আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম কী? উদাহরন দাও
উপযুক্ত আহার ও বাসস্থানের জন্য অর্থাৎ নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য দুই বা ততোধিক প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে যে সংগ্রাম চলে তাকে আন্তঃ প্রজাতির সংগ্রাম বলে।
যেমন :- বিড়াল- ইদুর, সাপ-বেজি, মানুষ- পরজীবীর মধ্যে সংগ্রাম।
ডারউইনের বিভিন্ন সংগ্রাম গুলি কি তা উল্লেখ কর?
বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন প্রজাতির জীবন সংগ্রামকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছে। 1.অন্তঃপ্রজাতির সংগ্রাম( নিজ প্রজাতিভুক্ত জীবদের মধ্যে সংগ্রাম) । 2.আন্তঃপ্রজাতির সংগ্রাম( ভিন্ন প্রজাতির ভুক্ত জীবদের মধ্যে সংগ্রাম )এবং 3.প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম।
বিবর্তনের স্বপক্ষে জীবাশ্মের দুটি গুরুত্ব লেখ?
প্রাণীর বিবর্তনের বেশ কিছু প্রমাণ জীবাশ্ম থেকে পাওয়া যায়। জীবাশ্ম থেকে প্রধানত যে সকল তথ্য জানা যায় সেগুলো হল-
1. জীবাশ্ম থেকে পৃথিবীতে ওই জীবের বসবাসের সময়কাল, অতীতের পরিবেশ দৈহিক গঠন সম্বন্ধে ধারণা করা যায়।
2. ভূপৃষ্ঠের গভীদের প্রাপ্ত সরলতর জীবের জীবাশ্ম থেকে বোঝা যায় যে সুদূর অতীতে সরল জীব থেকে ক্রমশ জটিল জীবের আবির্ভাব ঘটেছে।
ঘোড়ার বিবর্তনে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর?
ঘোড়ার বিবর্তনের যে সকল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য গুলি হল -
1. ধারাবাহিক উচ্চতা বৃদ্ধি 2. উভয় পায়ে আঙ্গুলের সংখ্যা হ্রাস এবং ক্ষুরের উৎপত্তি 3. পুরপেশক ও পেশক দাঁতে মজবুত এবং আয়তন বৃদ্ধি 4. মস্তিষ্কের সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার অংশের আকার বৃদ্ধি।
যোগ্যতমের উদবর্তন বলতে কী বোঝো?
মূলত ডারউইন তত্ত্বের প্রাকৃতিক নির্বাচন এই ধারণাটি বিজ্ঞানী হারবার স্পেন্সার প্রণয়ন করেন। তিনি যোগ্যতমের উদবর্তন কথাটি প্রথম প্রবর্তন করেন। জীবন সংগ্রামে অনুকূল প্রকরণ গুলি প্রজনন দ্বারা ক্রমশ ছড়িয়ে যায়, পক্ষান্তরে প্রতিকূল প্রকরণগুলি ক্রমশ বিলুপ্ত অর্থাৎ যোগ্যতম জীব প্রকৃতিতে টিকে থাকে।
ল্যামার্কের মতে ব্যবহার ও অব্যবহারের সূত্রটি লেখ?
ল্যামার্কের মতে যে দেহের কোন অঙ্গ ধারাবাহিকভাবে ও ক্রমাগত ব্যবহৃত হলে অঙ্গটি শক্তিশালী, সুগঠিত ও সবল হয়। পক্ষান্তরে জীবদেহের কোন অঙ্গ দীর্ঘদিন অব্যবহারের ফলে দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় হয়ে অবশেষে অবলুপ্ত হয়ে যায়।
যেমন ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে জিরাফের গ্রীবা ও অগ্রপদ লম্বা হয়েছে অন্যদিকে সাপের পূর্বপুরুষের ছোট পা ও ব্যবহারের ফলে ক্ষয় পেয়ে অবলুপ্ত হয়েছে।
অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরন বলতে কী বোঝো?
অভিব্যক্তি সম্পর্কে ল্যামার্কবাদের অন্যতম প্রতিপাদ্য বিষয় হলো অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরন। পরিবেশের প্রভাবে অভিযোজনের মাধ্যমে জীব যেসব বৈশিষ্ট্য অর্জন করে সেইসব বৈশিষ্ট্যের বংশানুক্রমে সন্তান-সন্ততির দেহের সঞ্চিত হয় ।অর্জিত লক্ষণ বংশপরম্পরায় এই সঞ্চরনকে বলা হয় অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংবংশানুসর।
নিষ্ক্রিয় অঙ্গ কাকে বলে
কোন একটি প্রাণীর বিশেষ একটি অঙ্গ নির্দিষ্ট কাজ করে অর্থাৎ অঙ্গটি সক্রিয় অবস্থা থাকে কিন্তু কোন কোন প্রাণীতে ওই অঙ্গটি কোন কাজ থাকে না। অঙ্গটি কেবলমাত্র ছোট আকৃতিতে নিষ্ক্রিয় অঙ্গ হিসেবে অবস্থান করে যদি কোন ক্ষেত্রে এরকম একটি সক্রিয় অঙ্গের কর্মক্ষমতা লোক পায় তবে ওই অঙ্গ কে নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বা ভেস্টিজিয়াল অঙ্গ বলে।
যেমন - গিনিপিগের সিকাম সক্রিয় অঙ্গ যা মানুষের ক্ষেত্রে আপেনডিক্স নামে নিষ্ক্রিয় অঙ্গে পরিণত হয়েছে।
জীবন্ত জীবাশ্ম কাকে বলে
যেসব জীব সুদূর অতীতে উৎপত্তি লাভ করেও কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়াই পৃথিবীতে বিরাজমান তাদের জীবন্ত জীবাশ্ম বলে।
যেমন - পেরিপেটাস, প্লাটিপাস
সমসংস্থ অঙ্গ কাকে বলে
যেসব অঙ্গের গঠন একই প্রকার কিন্তু কাজ আলাদা তাদের সম সংস্থ অঙ্গ বলা হয়। যেমন- তিমির ফ্লিপার, পাখির ডানা, বাঁদরের ডানা, চিতা বাঘের অগ্রপদ, মানুষের হাত ইত্যাদি
সমবৃত্তি অঙ্গ কাকে বলে
যেসব অঙ্গ একই কাজ করে কিন্তু গঠন আলাদা তাদের সমবৃত্ত অঙ্গ বলে। উদাহরণ পতঙ্গের ডানা, বাঁদরের ডানা
প্রাকৃতিক নির্বাচন কাকে বলে
ডারউইন তত্ত্বের এই প্রতিপাদ্য বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ 'যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় অনুকূল ভেদ বা অভিযোজনমূলক ভেদ সমন্বিত জীবেরা অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অধিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে তাকে প্রাকৃতিক নির্বাচন বলে। অনুকূল ভেদ সমন্বিত জীবেরা প্রকৃতির দ্বারা নির্বাচিত হলে অধিক সংখ্যায় বেঁচে থাকে এবং অধিক হারে বংশবিস্তার করে, অপরপক্ষে প্রতিকূল ভেদ সমন্বিত জীবেরা প্রকৃতির দ্বারা নির্বাচিত হয় না বলে পরাজিত সৈনিকের মত ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হয়।
চক্রাকার নৃত্য কাকে বলে
খাদ্যের সন্ধান পাওয়ার পর মৌমাছিরা চাকে ফিরে আসে। যদি খাদ্যের উৎস 100 মিটারের মধ্যে হয় তাহলে মৌমাছিরা চক্রাকার ভাবে ঘুরতে থাকে। তাই একে চক্রাকার নৃত্য বলে। নৃত্যের অভিমুখকে অনুসরণ করে অন্যান্য মৌমাছিরা খাদ্য সংগ্ৰহের জন্য বেরিয়ে পড়ে।