ভারতের বিভিন্ন জলসেচ পদ্ধতি গুলি উল্লেখ করো?

 কৃষি জমিতে জলসেচের জন্য ভারতে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে। সাধারণত প্রবাহজল, ভৌমজল ও সঞ্চিত জলের সাহায্যে জলসেচ করা হয়। প্রবাহজল জলসেচ ব্যবস্থায় কৃষিজমি প্লাবিত করে বা জমিতে নালা কেটে সেচের জল দেওয়া হয়। ভৌমজল জলসেচ সাধারণত পাতকুয়া, গভীর ও অগভীর নলকূপ এবং কারেজ পদ্ধতির সাহায্যে করা হয়ে থাকে। সঞ্চিত জল জলসেচ সাধারণতঃ পুকুর ও জলাশয় এবং খালের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে।

[ক]পাতকূয়া :-  নদী-উপত্যকা অঞ্চলের নরম মাটিতে পাতকুয়া খনন সহজসাধ্য। কপিকল, পারসিক চাকা, মট বা রেত প্রথা, গরু বা মহিষের দ্বারা টানা যন্ত্র বা হাতে টেনে পাতকূয়া থেকে জলসেচ করা হয়। এই ব্যবস্থায় জলসেচে বহু সময় ও অধিক পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়। উত্তর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এরূপ প্রাচীন প্রথায় জলসেচ পদ্ধতি প্রচলিত আছে। পাতকুয়ার সাহায্যে জলসেচ ব্যবস্থায় কতগুলি সুবিধা পাওয়া যায়, যেমন—[i] ক্ষুদ্র জমিতে অল্প মূলধন বিনিয়োগ করে জলসেচ করা যায়, [ii] ক্ষুদ্র ও ছোট চাষীদের পক্ষে এই ব্যবস্থায় জলসেচ সুবিধাজনক, [iii] কূয়াতে জল থাকলে বছরের সকল সময়ই জলসেচ করা যায়।

 [খ]নলকূপ :-  পাতকূয়া অপেক্ষা অনেক বিস্তৃত অঞ্চলে নলকূপের সাহায্যে জলসেচ করা হয়। গভীর ও অগভীর নলকূপের জন্য অফুরন্ত ভৌমজল ও পর্যাপ্ত বিদ্যুৎশক্তির প্রয়োজন উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, অন্ধ্রপ্রদেশ তামিলনাড়ু রাজ্যে নলকূপের সাহায্যে অধিক জলসেচ করা হয়ে থাকে। ভারতের মোট সেচসেবিত এলাকার প্রায় ৩৮% কূপ ও নলকূপের সাহায্যে জলসেচ করা হয়ে থাকে।

  [গ] পুকুর বা জলাশয় : পুকুর বা জলাশয়ের সাহায্যে ভারতে মোট সেচসেবিত এলাকার ১৭% জমিতে জলসেচ করা হয়। কঠিন অপ্রবেশ্য শিলা ও ঢেউ-খেলানো ভূমির জন্য দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে বাঁধ ও জলাশয়ের সাহায্যে অধিক পরিমাণে জলসেচ করা হয়। ছোট ছোট নালা ও নদীর ওপর আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ করে জলাশয় তৈরি করা হয়। তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক ও কেরলের বিস্তীর্ণ অংশে পুকুর বা জলাশয়ের সাহায্যে জলসেচ করা হয়।

(ঘ) খাল : ভারতের মোট জলসেচের প্রায় ৪০% খালের মাধ্যমে করা হয়। বহু প্রাচীনকাল থেকেই ভারতে খালমাধ্যমে জলসেচ ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। খালপদ্ধতিতে জলসেচ দু'ভাবে হয়ে থাকে। প্লাবন খাল–বর্ষার অতিরিক্ত জলরাশি ব্যবহার করার জন্য নদী থেকে যে খাল কাটা হয় তাকে প্লাবন খাল বলে। বছরে অন্যান্য সময় নদীতে জল কমে গেলে প্লাবন খালের মাধ্যমে জলসেচ তেমন করা যায় না। পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, তামিলনাড়ু অঞ্চলে বেশি প্লাবন খাল দেখা যায়। নিত্যবহ খাল-বিভিন্ন বরফ-গলা জলে পুষ্ট নদী থেকে বা কৃত্রিম জলাধার থেকে যে খাল কাটা হয় তাকে নিত্যবহ খাল বলে। এরূপ খালে সারা বছর জল থাকে। এরূপ খালের মাধ্যমে বছরের সব সময়ই জলসেচের সুবিধা পাওয়া যায়। বর্তমানে বিস্তৃত আছে।বিভিন্ন বহুমুখী নদী উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে খাল মাধ্যমে জলসেচ ব্যবস্থা যুক্ত হওয়ায় এর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রায় ১.৬২ লক্ষ কি. মি. সেচখাল খনন করা হয়েছে। এদের মধ্যে উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশে ৫০% সেচখাল। 

Madhyamik geography suggestion






Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
×