বাংলা প্রবন্ধ রচনা - বিশ্ব উষ্ণায়ন অথবা গ্লোবাল ওয়ার্মিং
ভূমিকা : বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রকৃতির প্রতিশোধ। প্রকৃতির ভারসাম্য ঠিক না থাকলে প্রকৃতি বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এটি তার একটি নমুনা। তবে ভূমিকম্প ঝড় বৃষ্টির সুযোগ মানুষকে সময় দেয় না নিমেষের মধ্যে সব ধ্বংস করে দেয়। আর বিশ্ব উন্নায়নের ক্রিয়া মানুষকে সচেতন হওয়ার সময় দেয়। ধ্বংস লীলাও চলে তবে তা ধীরে ধীরে। গ্রহ-নক্ষত্রের নিয়মিত চলার গতিতেই পৃথিবী জীবের বাসযোগ্য। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীর উয়তা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় সকলেই উদবিগ্ন । পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি গ্লোবাল ওয়ার্মিং নামে পরিচিত। এর জন্য মানুষ ও তার বিজ্ঞানই দায়ী।
উষ্ণায়ন : পৃথিবীর বিজ্ঞান মহল আজ উদবিগ্ন তাঁরা দেখছেন প্রতি শতাব্দীতে ১° সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি চলতে থাকলে আগামীতে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। বর্তমানে যা তাপমাত্রা আছে তা আর সামান্য বাড়লেই জীবকূলের একটা বড়ো অংশ ধ্বংস হয়ে যাবে। দুই মেরুর বরফ গলা শুরু হয়ে গিয়েছে সেখানে বসবাসকারী জীবকূল বিপদ গুনছে। জলস্তর নেমে যাচ্ছে। সমুদ্রের গভীরতা কমছে অথচ পাহাড়ের হিমবাহ গলছে সব যেন কেমন ছন্নছাড়া রূপ নিয়েছে। এইভাবে চললে আস্তে আস্তে পৃথিবী জীবের বাসের অনুপযুক্ত হয়ে উঠবে। কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেন বিভিন্ন ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ইত্যাদি গ্যাস বাতাসে যুক্ত হয়ে যেন প্রকৃতির শ্বাসরোধ করে চলেছে। এই গ্যাস সূর্যরশ্মিকে শোষণ করে ধরে রাখে ফলে পৃথিবীর উয়তা বাড়তে থাকে।
উষ্ণায়নের প্রভাব: পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের উয়তা বৃদ্ধির ফলে দুই মেরুর বরফ গলতে শুরু করে এবং তার ফলে নিকটবর্তী সমুদ্রের জলস্ফিতি ঘটতে থাকে। বঙ্গোপসাগরে এইরূপ একমিটার জলস্ফিতি ঘটলে প্রায় ১৭০০ বর্গ কিলোমিটার ভূভাগ জলের তলায় চলে যাবে। আবার আফ্রিকা, আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়ায় অনাবৃষ্টির ফলে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্ব উন্নায়নের ফলে ২০৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ১১০০ প্রজাতির প্রাণীর ধ্বংসের সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান শতাব্দীর শেষে কোনো তুষার হিমবাহই অবশিষ্ট থাকবে না ফলে এক মহাপ্লাবনের সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। শতাব্দীর শেষে এই উয়ায়নের ফলে নেদারল্যান্ড ইন্দোনেশিয়া সহ গোটা বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অংশ জলের তলায় চলে যেতে পারে। যাতে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
প্রতিকার : বিশ্ব উন্নায়নের ফলে বিজ্ঞানী মহল এবং বড়ো বড়ো শক্তিধর দেশ চিন্তিত। তাঁরা এই উয়ায়নের প্রতিবিধান করতে দেশে দেশে নানা বার্তা পাঠাচ্ছেন। উয়ায়ণের প্রতিকার নিয়ে ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে বসুন্ধরা সম্মেলনে বহু প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। গাছপালা মেরামত করতে হবে, কলকারখানার বিষাক্ত গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড যাতে বাতাসকে দূষিত করতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। সর্বোপরি সকল মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করতে পারলে এই উষায়ণের মাত্রা অনেকাংশেই কমানো যেতে পারে। প্রচার কার্য চললেও তা ঠিকমত কার্যকর হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে সকল দেশের সরকারকেই নজর রাখতে হবে।
উপসংহার : বিশ্বের বিজ্ঞানীদের ভয় পৃথিবীর তাপমাত্রা ৫০ বছরে ১.১ থেকে বেড়ে ৬.৪ সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে। ছাত্রছাত্রী থেকে সকল দেশের সমস্ত শ্রেণির মানুষকে সচেতন হতে হবে যাতে পৃথিবীর গ্রিণহাউস গ্যাসের সমস্ত উৎসকে বন্ধ করা যায়। এই উষ্ণতা বৃদ্ধিকে কমাতে পারে গাছ। সে বাতাসের কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে পারে। প্রচুর পরিমানে গাছ লাগাতে পারলে বিশ্বকে আসন্ন ধ্বংসের হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করা যাবে।