বাংলা প্রবন্ধ রচনা - দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান / সাম্প্রতিক বিজ্ঞান/প্রতিদিনের বিজ্ঞান
ভূমিকা : সভ্যতার সেই ধূসর দিনে মানুষ একদিন প্রকৃতির রহস্যময় জীবনের দিকে চেয়ে থাকত। প্রকৃতির খেয়ালখুশিতে নিয়ন্ত্রিত হয় তার জীবন। কিন্তু তার সেই অসহায় নিরুপায় জীবন ভালো লাগল না। সে চাইল প্রাকৃতিক ভয়ঙ্কর রূপকে ভেদ করতে, চাইল তার স্বপ্নের সফল করে তুলতে। অবশেষে জলে স্থলে মহাশূন্যে মানুষ তার স্বপ্ন সাধনাকে পূর্ণ করেছে।
বিজ্ঞান কি? :
যে জ্ঞান বিশেষভাবে লাভ করা যায় তা হল বিজ্ঞান। আজ আমাদের জন্ম মৃত্যুকে বিজ্ঞান, শ্বাস-প্রশ্বাসে, বিজ্ঞান, চলা-ফেরায় বিজ্ঞান, প্রত্যক্ষ পরোক্ষ বিজ্ঞান।
প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞানের অবদান : যে বিজ্ঞান সৃষ্টি হয়েছিল মানুষের আত্মরক্ষার ও আত্মপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে। আজ তা মানুষের প্রাত্যাহিক জীবনের নিত্যসঙ্গী। সকালে ঘুম থেকে উঠে দিন আরম্ভ করা থেকে শয্যাগ্রহণ পর্যন্ত জীবন যাত্রার প্রতিটি পদক্ষেপে আজ বিজ্ঞান বর্তমান। বলা যেতে পারে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমরা বিজ্ঞানের মুখাপেক্ষী।
সুখ স্বাচ্ছন্দে বিজ্ঞান : প্রতিদিনের জীবনে সর্বক্ষেত্রে আজ আমরা বিজ্ঞানের দানে ধন্য। গরম বৈদ্যুতিক পাখা, শীতে উত্তাপ প্রাপ্তী, কর্মজীবনে ব্যবহারযোগ্য ঘড়ি, জুতো, কলম, মোবাইল, পোষাক পরিচ্ছদ গৃহকর্ত্রীর শ্রম লাঘবকারী ফ্রীজ, গ্যাসের উনুন, ব্যবসায়ী এবং ছাদের সুবিধার জন্য হিসাবযন্ত্র, গণনা যন্ত্র, অফিস আদালতে বৈদুতিক লিফট, গাড়ি চালানোর স্বয়ংক্রিয় নির্দেশ ব্যবস্থা, বেতার দ্রুতগামী ভূগর্ভ রেল, দূরদর্শন, সংবাদপত্র, ল্যাপটপ প্রভৃতি হাজার হাজার স্বাচ্ছন্দের উপকরণ বিজ্ঞানের অকুণ্ঠ দান।
চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান : রোগ প্রতিরোধের জন্য পেনিসিলিয়ামের মত অ্যান্টি-বায়োটিকের আবিষ্কার চিকিৎসা জগতে এসেছে যুগান্তর। রেডিয়াম অতিবেগুনী রশ্মি, X-ray, E.C.G. প্রভৃতি চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি বিস্ময়কর সংযোজন। হূৎপিন্ড পরিবর্তন, ব্রেন অপারেশন প্রভৃতি কাজের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বিজ্ঞানের অকুণ্ঠ দান।
কৃষিতে বিজ্ঞান : বিজ্ঞানের আশীর্বাদ আজকের শুষ্ক পৃথিবীর যেন শস্যশ্যামলা হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞান আজ চাষীর ঘরে তুলে দিয়েছে ট্রাকটর, বীজ ছড়ানোর যন্ত্র, আগাছা নিড়ানো এবং পাকা ফসল মাড়ার যন্ত্র, কীটনাশক ও জীবানু নাশক ঔষধ, রাসায়নিক সার এবং উন্নত মানের উচ্চ ফলনশীল বীজ। চাষীর প্রাণ যেন আজ বিজ্ঞানের দানে ভরপুর।
শিল্পক্ষেত্রে বিজ্ঞান : বিজ্ঞান ঘটিয়েছে শিল্পবিপ্লব। পুরানোর অবসান ঘটিয়ে বিজ্ঞান মানুষকে করেছে চির আধুনিক, হাতে তুলে দিয়েছে কম্পিউটার ও উন্নত মানের বহু যন্ত্রপাতি, হাজার হাজার মানুষ যা করতে সময় নিচ্ছে বিজ্ঞান তা কয়েক সেকেন্ডে করে দিচ্ছে।
পড়াশুনায় বিজ্ঞান: বর্তমান যুগে শিক্ষা-দীক্ষায় ও বিজ্ঞানের কল্যাণহস্ত প্রসারিত। লেখনী সামগ্রী, কাগজ, কলম, পেনসিল, রবার, পেনসিল কাটার যন্ত্র সবই বিজ্ঞানের দান। আজ ঘরে বসেই ইন্টারনেট ও টি.ভি. খুলে পড়াশোনার সামগ্রী যোগাড় করা যায় ।
পরিবহনে বিজ্ঞান : পরিবহন জগতে বিজ্ঞান এনেছে ক্ষিপ্রগতি। আজ বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ নিমেষে এদেশ থেকে অন্য দেশে চলে যেতে পারে। মানুষ আজ পৃথিবীর সীমা ছাড়িয়ে অসীম আকাশে পাড়ি দিেেচ্ছ বিজ্ঞানের দানে।
মহাকাশ গবেষণায় বিজ্ঞান : মানুষ আজ মহাকাশে উপগ্রহ পাঠিয়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাচ্ছে এবং উপগ্রহ প্রেরিত ছবি দেখে আগামী দিনে গ্রহান্তরে পাড়ি দেবার চেষ্টা করছে।
অবসর বিনোদনে বিজ্ঞান : মানুষের কর্মজীবনে ক্লান্তি দূরীকরণের জন্য অবসর বিনোদনের জন্য সামগ্রী যোগান দিচ্ছে বিজ্ঞান,' দিয়েছে দূরদর্শণ, বেতার, চলচ্চিত্র ভিডিও গেম, মোবাইলের মতো বিনোদনের মাধ্যম। এইসব দেখে মানুষ একঘেঁয়ে জীবনের অবসর থেকে মুক্তি পায় এবং সঙ্গে জ্ঞান আরোহণ করে।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের কুফল : সুফলের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান কিছু কুফল বহন করে নিয়ে এসেছে। যেমন -
(১) যন্ত্র সর্বস্বতা : আজ আমরা অবশেষে সুখ লাভের আশায় হয়ে পড়েছি যন্ত্রসর্বস্ব যান্ত্রিকতা। আজ আমাদের গ্রাস করেছে বিজ্ঞান নির্মিত যন্ত্র। আজ চা বানাই, ঘর মুছে, লিফট আমাদের তুলে দেয় বহুতল গৃহে । বিজ্ঞানের এই সব যান্ত্রিকতা আমাদের জীবনকে কৃত্রিম করে তুলেছে।
(২) পরমানু বোমার আতঙ্কঃ বিজ্ঞানীরা বিশ্বের উন্নতির জন্য নির্মাণ করলেন পরমানু মোমা, কিন্তু যুদ্ধবাজ সাম্রাজ্যবাদীরা বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ করে লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনাশ সাধন করতে দ্বিধা বোধ করেনি। পরমানু বোমার আতঙ্কে হিরোসিমা ও নাগাসাকি বীভৎসতায় আজকের মানুষ আতঙ্কিত।
উপসংহার: একবিংশ শতাব্দীর মানুষ আমরা কিন্তু আজও ভারতের বহু মানুষ বিজ্ঞানের আলোক দীপ্তি থেকে বঞ্চিত। আজও তারা ঈশ্বরের কাছে জল ভিক্ষা করে। ব্যাঙের বিয়ে দিয়ে বৃষ্টির কামনা করে, তাই আমাদের আশা খুবই শীঘ্রই বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ভারতবাসী নবতেজে আলোকিত হয়ে উঠবে । বিজ্ঞান হয়ে উঠবে অগ্রগতির হাতিয়ার। হয়ে উঠবে প্রগতির বাহন। তাই বিজ্ঞানের অভিশাপ মানুষের জীবনে নিয়ে আসবে আশীর্বাদ।