সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ সম্বন্ধে আলোচনা করো।

 ভূমিকাঃ ভারতবর্ষে কোম্পানির শাসনে ইংরেজদের ঘোষণা ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী ও ফকিরা ১৭৬৩ খ্রিঃ থেকে ১৮০০ খ্রিঃ পর্যন্ত যে বিদ্রোহে সামিল হয়েছিল, তা ইতিহাসে সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের কারণ : সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের বিভিন্ন কারণগুলি ছিল।

 যেমন— (1) কোম্পানির আমলের উচ্চ রাজস্বহার ও রাজস্ব আদায়ে অত্যাচার এদেরকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল।

(2) সন্ন্যাসীদের তীর্থে যাওয়ার ওপর সরকার তীর্থকর বসায়।

(3) ফকিরদের দরগায় যাওয়ার ওপর সরকার বিধি নিষেধ জারি করে। (4) সন্ন্যাসী-ফকিরদের মধ্যে যারা ব্যাবসা-বাণিজ্যে যুক্ত ছিল তাদের কাছ থেকে ব্যাবসাজাত দ্রব্য (রেশম কাপড়) ইংরেজ কর্মচারীরা কেড়ে নেয়।

(5) নতুন ভূমি রাজস্ব ব্যাবসায় তৈরি হওয়া মহাজন ও জমিদার বা মধ্যস্বত্ব ভোগীদের চাপে এরা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে।

বিদ্রোহ : বিদ্রোহী সন্ন্যাসী ও ফকিররা কোম্পানির কুঠি, জমিদারদের কাছারি, রাজস্ব দপ্তর প্রভৃতির ওপর আক্রমণ চালিয়েছিল। বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হয়েছিল ইংরেজ সেনাপতি ক্যাপটেন এডওয়ার্ডস। এই বিদ্রোহ রংপুর, দিনাজপুর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, বগুড়া প্রভৃতি অঞ্চলে সম্প্রসারিত হয়েছিল।

নেতৃবৃন্দ : সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দ হন ভবানী পাঠক, মজনু শাহ, দেবী চৌধুরানী, চিরাগ আলি প্রমুখ ব্যক্তিরা। 

বিদ্রোহের ব্যর্থতা : শেষ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক বিভেদ, সাংগঠনিক ত্রুটি এবং নেতৃবর্গের অভিজ্ঞতার অভাবের ফলে এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল।

উপসংহার:-  সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ছিল পরবর্তী সময়ে বহু কৃষক আন্দোলনের পথপ্রদর্শক। এই সন্ন্যাসী বিদ্রোহের পটভূমিকায় সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস আনন্দমঠ'রচনা করেন।       

সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ সম্বন্ধে আলোচনা করো।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
×