সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ গুলি আলোচনা কর?

 ভূমিকা : সাঁওতালরা হল কঠোর পরিশ্রমী, শান্তিপ্রিয় এক কৃষিজীবী আদিবাসী সম্প্রদায়। বীরভূম, মানভূম, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, মুরশিদাবাদ প্রভৃতি অঞ্চলে বসবাস করত। ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন তাদের নিস্তরঙ্গ জীবনে আলোড়ন সৃষ্টি করে। যার ফলে সাঁওতাল বিদ্রোহ (১৮৫৫ খ্রি.)

সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ : বিভিন্ন কারণে সাঁওতাল বিদ্রোহ হয়েছিল সেইগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল।

(১) খাজনা ধার্য:-  বনভূমি পরিস্কার করে সাঁওতালরা যে জমি আবাদযোগ্য করে তোলে তার উপর ‘দিকু’ বা বহিরাগত জমিদাররা উচ্চহারে খাজনা ধার্য করলে তারা বিস্মিত হয়। কারণ, জমি ঈশ্বরের দান বলে মনে করেন। জানা যায় ১৮ বছরে এই অঞ্চলে ১০ গুণ বেশি খাজনা বৃদ্ধি পায়।

(২) সাঁওতালদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার : রেলপথ নির্মানের সময় অর্থ মূল্যের মজুরি পাওয়ার লোভে অনেক সাঁওতাল ওই কাজে নিযুক্ত হয়। ইংরেজ কর্মচারিরা তাদের ক্রীতদাসের মতো ব্যবহার করত। সাঁওতালদের মহিলারাও নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাইনি।

(৩) ব্যবসায়ীদের কারচুপি : ব্যবসায়ী মহাজনদের সাঁওতালদের সরলতার পূর্ণ সুযোগ নেয়। ওজন ও পরিমাপের কারচুপি ঘটিয়ে উৎপাদিত ন্যায্য মূল্য থেকে তাদের বঞ্চিত করা হত। অসহায়তার সুযোগ নিয়ে সাঁওতালদের সামান্যতম ঋণের উপর মহাজনদের উচ্চহারে সুদ দাবি করত। ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত তাদের বেগার খাটানো হত।

(৪) জমিদারদের অত্যাচার : জমিদারদের অত্যাচার ও নির্দয় ব্যবহার ছিল সাঁওতাল বিদ্রোহের অন্যতম কারণ। জমিদাররা সাঁওতালদের ওপর চড়া হারে কর ধার্য করে এবং কর দিতে না পারলে জমি থেকে উৎখাত করে।

(৫) মহাজনদের অত্যাচার :- দরিদ্র সাঁওতালরা জমিদারদের খাজনা মেটাবার জন্য মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিতে বাধ্য হত এবং এই সময় অনাবৃষ্টি সাঁওতালদের অবস্থাকে অত্যন্ত দুর্বিষহ করে তোলে। অনাবৃষ্টির ফলে ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং মহাজনদের শোষণের হার অধিক বৃদ্ধি পায়।    

সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ গুলি আলোচনা কর?



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
×