ফরাজি আন্দোলনের ওপর সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।
উত্তর : ফরাজি আন্দোলনের প্রবর্তক হলেন হাজি শরিয়ৎ উল্লাহ। ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘ফরাজি' নামে এক ধর্মীয় সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে ধর্মসংস্কারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ফরাজি’শব্দটির অর্থ হল ইসলাম নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক কর্তব্য'। ধর্মসংস্কার আন্দোলন হিসাবে এই আন্দোলন শুরু হলেও ওটি ছিল মূলত: কৃষক আন্দোলন ৷
ফরাজি আন্দোলনের লক্ষ্য : (১) ওয়াহাবি আন্দোলনের মতো এই আন্দোলনেরও লক্ষ্য ছিল ইসলামের পবিত্র আদর্শ পুনরুজ্জীবন। (২) ফরাজিরা ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতকে ‘দার-উল-হারব’বলে চিহ্নিত করেছিল এবং এদেশ থেকে ইংরেজদের বিতাড়িত করে ভারতকে দার-উল-ইসলাম'-এ পরিণত করতে চেয়েছিল। (৩) হাজি শরিয়ৎ উল্লাহ অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলেছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল জমিদারদের উচ্ছেদ করা।
ফরাজি আন্দোলনের বিস্তার : শরিউৎ উল্লাহের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুসলমানরা তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। অচিরেই বরিশাল, ঢাকা, মনমোহন সিং ও ফরিদপুরের লক্ষ লক্ষ মুসলিম চাষি কারিগর ও যুবক সম্প্রদায় তাঁর অনুগামী হয়। এঁরা অত্যাচারী জমিদারদের কর দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
মহম্মদ মহসীন (দুদু মিঞা) : ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে হাজি শরিয়ৎ উল্লাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মহাম্মদ মহসিন আন্দোলনের পরিচালক হন। তাঁর তত্ত্ব ছিল আরও বৈপ্লবিক। তিনি বলতেন, ‘জমি আল্লাহর দান। সুতরাং জমির ওপর কর ধার্য করার অধিকার কারও নেই।' সুদক্ষ সংগঠক দুদুমিঞা বাংলাদেশে তাঁর প্রভাবিত অঞ্চলে ‘ফরাজ-ই-খিলাবৎ' নামে এক প্রশাসন গড়ে তোলেন। তিনি বাংলাদেশকে কয়েকটি অঞ্চল ও হলকায় বিভক্ত করে প্রতি হলকায় একজন করে খলিফা নিযুক্ত করেন, যার দায়িত্ব ছিল এই হলকায় জমিদার ও নীলকরদের অত্যাচার প্রতিহত করা। দুদুমিঞার নেতৃত্বে ফরাজিরা জমিদার ও নীলকরদের আক্রমণ করে ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল।
আন্দোলন দমন:- সরকার ফরাজি আন্দোলন দমন করার জন্য ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে দুদুমিঞা কে গ্রেপ্তার করে। ১৮৬০ খ্রি. তার মৃত্যু হলে এই আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে।
গুরুত্ব:- ফরাজি আন্দোলনের সঙ্গে ধর্মীয় ভাবাবেগ যুক্ত থাকলেও এই আন্দোলন ছিল মূলত কৃষক আন্দোলন। ড: অভিজিৎ দত্তের মতে, ফরাজি আন্দোলন জনগণের প্রকৃত স্বাধীনতা। সংগ্রামকে এক পূর্ণ রূপ দান করে।