চিকিৎসা বিদ্যার প্রসারে কলকাতা মেডিকেল কলেজের ভূমিকা আলোচনা করো।

 ভূমিকা:-  ঊনিশ শতকের সূচনালগ্নেও ভারতে প্রাচীন দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। পরবর্তী কালে ভরতের বড়োলাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক (১৮২৮-৩৫ খ্রি.) ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করলে ভারতে আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যার পথচলা শুরু হয়।

(১) সরকারি উদ্যোগ : ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশীয় চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষাদানের জন্য সরকার অর্থব্যায় বন্ধ করে দেয়। ফলে প্রাচীন দেশীয় চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিবর্তে পাশ্চাত্যের আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা এদেশে দ্রুত প্রসার লাভ করে। 

(২) ইউরোপীয় চিকিৎসাবিদ্যা :- কলকাতা মেডিকেল কলেজে দেশীয় চিকিৎসাবিদ্যার পরিবর্তে ইউরোপের উন্নত চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষাদান শুরু হয়। পন্ডিচেরীর পর কলকাতা মেডিকেল কলেজ হল এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় কলেজ যেখানে আধুনিক ইউরোপীয় চিকিৎসাবিদ্যা শেখানো হত।

(৩) প্রথম ব্যাচ : কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে প্রথম ব্যাচ পাশ করে উমাচরণ শেঠ, রাজকৃষ্ণ দে, দ্বারকানাথ গপ্ত প্রমুখ ঢাকা, চট্টগ্রাম, মুর্শিদাবাদ, পাটনা প্রভৃতি বিভিন্ন স্থানের হাসপাতালে ডাক্তার হিসেবে নিযুক্ত হন।

(৪) চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতি  :- ১৮৫৬ খ্রি. রহিম খান প্রথম মুসলিম ছাত্র হিসেবে এখান থেকে ডাক্তারি পাস করেন। বাংলার উচ্চবর্ণের বহুযুবক এই কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করে পরবর্তী জীবনে চিকিৎসাবিদ্যায় যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেন। এখানকার ছাত্র মধুসূদন গুপ্ত প্রথম শবব্যবচ্ছেদ করে যুগান্তকারী ঘটনা ঘটান।

(৫) নবযুগ : কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা বিদ্যায় ডিগ্রি লাভ করে প্রতি বছর বহু যুবক দেশের বিভিন্ন প্রান্তের চিকিৎসাকেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত হন। ফলে তাঁদের মাধ্যমে সেসব স্থানে আধুনিক উন্নত পাশ্চাত্য চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রসার ঘটে। ঊনিশ শতকে এখান থেকে পাস করে বহু ছাত্র বিলেতে ডাক্তারি পড়ার যোগ্যতা অর্জন করে। ফলে বাংলা তথা ভারতের চিকিৎসা বিদ্যার অগ্রগতির ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা হয়। 

চিকিৎসা বিদ্যার প্রসারে কলকাতা মেডিকেল কলেজের ভূমিকা আলোচনা করো।




Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
×