কাল মার্কসের ঐতিহাসিক বস্তুবাদ তত্ত্ব এবং দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ তত্ত্ব আলোচনা করো? অথবা মার্কসবাদের দুটি নীতি আলোচনা করো?

 উত্তর :-  কার্ল মার্কসের জীবনাদর্শ ও চিন্তাধারাই মার্কসবাদ নামে পরিচিত । পৃথিবীর ইতিহাসে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদের জন্মদাতা হলেন অন্যতম দার্শনিক মার্কস । মার্কসের জীবিত থাকাকালীন ও মৃত্যুর পরে এঙ্গেলস লেনিন , মাও জে দং গ্রামসি , আলথুসার প্রমুখ মার্কসবাদী তাত্ত্বিকদের দ্বারা মার্কসবাদ আরও সমৃদ্ধ হয়েছে মার্কসের চিন্তাধারায় জার্মান দর্শন ব্রিটিশ অর্থশাস্ত্র ও ফরাসি সমাজতন্ত্রের প্রভাব বিদ্যমান । লেনিনের মতে মার্কসের দৃষ্টিভঙ্গি ও শিক্ষামালাই হল মার্কসবাদ । মার্কসের চিন্তাধারার মূল নীতি বা সূত্রগুলো নীচে আলোচিত হল 

( a ) দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ : কার্ল মার্কস তাঁর দ্বন্দ্ব তত্ত্ব উত্থাপনে ফয়েরবাখের দ্বারা প্রভাবিত । হয়েছিলেন । মার্কসের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ হেগেলের ভাববাদী তত্ত্বের সম্পূর্ণ বিপরীত । মার্কসের মতে জগৎ বস্তুময় । জগতের প্রতিটি বস্তু একে অপরের উপর নির্ভরশীল । ফলত এই বস্তুময় জগৎ অচল বা স্থির নয় , তা সর্বদা পরিবর্তনশীল । বস্তুর মধ্যেকার পরস্পর বিরোধী ধর্ম বিদ্যমান বাদ প্রতিবাদ ও সম্বাদ । মার্কস বলেছেন বস্তুর মধ্যে বৈপরীত্যের দ্বন্দ্ব বিদ্যমান , তা ছাড়া বস্তুর পরিমাণগত পরিবর্তন থেকে গুণগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় । যেখানে হেগেল বস্তুর পরিবর্তে ভাবকেই অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন ।

কাল মার্কসের ঐতিহাসিক বস্তুবাদ তত্ত্ব এবং দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ তত্ত্ব আলোচনা করো? অথবা মার্কসবাদের দুটি নীতি আলোচনা করো?

( b ) ঐতিহাসিক বস্তুবাদ : এককথায় দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের মূল নীতিগুলোর সমাজজীবনে বাস্তব প্রয়োগকেই বলা হয় ঐতিহাসিক বস্তুবাদ । মার্কসের অন্যতম এব কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোতে বলা আছে আজ পর্যন্ত যত সমাজ দেখা গেছে প্রত্যেকেরই ইতিহাস শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস । আদিম সাম্যবাদী সমাজের পরবর্তী দাস সমাজ থেকে শুরু করে পুঁজিবাদী সমাজ সমস্ত ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু মালিক শ্রেণির দ্বারা সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিকশ্রেণির শোষণের ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে । ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যায় মূল ভিত ও উপরিকাঠামে সম্পর্কে ব্যক্ত করা হয়েছে । মার্কসের মতে অর্থনীতিই হল সমাজের মূল চালিকা শক্তি । অর্থনীতিই হল সমাজের মূল ভিত এবং ভিতের উপর গড়ে উঠেছে সমাজের উপরিকাঠামো । উপরিকাঠামো বলতে বোঝায় আইন , রাজনীতি , ধর্ম সাহিত্য , সংস্কৃতি সমস্ত কিছু । সমাজে ভিত  অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটলে উপরিকাঠামোতেও পরিবর্তন আবশ্যিক হয়ে পড়ে । উৎপাদন ব্যবস্থার দুটি দিক – উৎপাদন শক্তি ও

উৎপাদন সম্পর্ক । উভয়ের মধ্যে দ্বন্দু বা সংঘাত উপস্থাপিত হলে সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটে থাকে । ● মানব সমাজের পরিবর্তনের কারণ হিসেবে উৎপাদন শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্কের অর্ন্তদ্বন্দুই প্রধান । আদিম সাম্যবাদী সমাজে ব্যক্তিগত মালিকানা না থাকায় কোনো শ্রেণি ছিল না ফলে শোষণও ছিল না এবং শ্রেণি শোষণকারী যন্ত্র হিসেবে রাষ্ট্রেরও আবির্ভাব ঘটেনি । তবে পরবর্তী সময়ে ব্যক্তিগত মালিকানার উদ্ভবের ফলে প্রথম শ্রেণিবিভক্ত সমাজ হিসেবে দাস সমাজের আবির্ভাব ঘটে । আবার সামস্ততান্ত্রিক সমাজে দুই প্রকার শ্রেণি সামন্ত প্রভু ও সামন্ত কৃষক উভয়ের উদ্ভব ঘটে । সামস্ততন্ত্রের অবসানের পর পুঁজিবাদী সমাজের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায় । তবে পুঁজিপতিদের দ্বারা শ্রমিক শ্রেণির শোষণের রূপটি ভিন্ন ।

● উপরোক্ত মার্কসীয় সূত্রগুলো আলোচনার মধ্যে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে শ্রমিক শ্রেণির দুঃখময় জীবনের নিরসনে মার্কসবাদের বিকল্প আর কিছু হতে পারে না । মার্কসবাদ হল একটি বিশ্ববিক্ষা এবং সমাজে শোষিত ও বঞ্চিত শ্রেণির মানুষের মুক্তির দিশারী । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
×