শ্রেনী সংগ্রাম ও বিপ্লব সম্পর্কিত মার্কসীয় তত্ত্বটি ব্যাখ্যা করো? অথবা মার্কসবাদের দুটি নীতি আলোচনা করো?

উত্তর :-  কার্ল মার্কসের জীবনাদর্শ ও চিন্তাধারাই মার্কসবাদ নামে পরিচিত । পৃথিবীর ইতিহাসে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদের জন্মদাতা হলেন অন্যতম দার্শনিক মার্কস । মার্কসের জীবিত থাকাকালীন ও মৃত্যুর পরে এঙ্গেলস লেনিন , মাও জে দং গ্রামসি , আলথুসার প্রমুখ মার্কসবাদী তাত্ত্বিকদের দ্বারা মার্কসবাদ আরও সমৃদ্ধ হয়েছে মার্কসের চিন্তাধারায় জার্মান দর্শন ব্রিটিশ অর্থশাস্ত্র ও ফরাসি সমাজতন্ত্রের প্রভাব বিদ্যমান । লেনিনের মতে মার্কসের দৃষ্টিভঙ্গি ও শিক্ষামালাই হল মার্কসবাদ । মার্কসের চিন্তাধারার মূল নীতি বা সূত্রগুলো নীচে আলোচিত হল 

( a ) শ্রেণি সংগ্রাম তত্ত্বঃ মার্কস রাষ্ট্রকে ব্যাখ্যা করেছেন শ্রেণি শোষণকারী যন্ত্র হিসেবে । আদিম সাম্যবাদী সমাজে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অস্তিত্ব না থাকায় কোনো শ্রেণির সৃষ্টি হয়নি , ফলত সেখানে শোষণও ছিল না এবং শ্রেণি শোষণকারী যন্ত্র হিসেবে রাষ্ট্রেরও অস্থিরতা ছিল না । সমাজ জীবনের শুরু থেকে রাষ্ট্র ছিল না । সমাজ বিবর্তনের একটি বিশেষ পর্যায়ে রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটে ।

 ● কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোতে লেখা রয়েছে — আজ পর্যন্ত যত সমাজ দেখা গেছে প্রত্যেকেরই ইতিহাস শ্রেণি সংগ্রামের ইতিহাস । আদিম সাম্যবাদী সমাজের পরবর্তী সময়ে ব্যক্তিগত সম্পত্তির উৎপত্তির মধ্য দিয়ে সমাজে দুটি পরস্পর বিপরীত বিরোধী শ্রেণি দাস মালিক ও ক্রীতদাসের সৃষ্টি হয় । দাস সমাজের পরবর্তী সমাজব্যবস্থাটি হল সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা । এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেণিটি হল সামন্ত প্রভু এবং সংখ্যালঘু শ্রেণিটি হল সামস্ত কৃষক । সমাজ বিবর্তনের পরবর্তী স্তরটি হল পুঁজিবাদী সমাজ । এই রূপ সমাজ ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠ পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থে সংখ্যালঘু শ্রমিক শ্রেণিকে শোষণের মধ্য দিয়ে কার্যকর হয় । এখানে প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাষ্ট্র সংখ্যালঘু শ্রেণি দ্বারা সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেণির শোষণের হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে । পুঁজিবাদে সংখ্যালঘু শ্রমিক শ্রেণি বুর্জোয়া বিপ্লবের মধ্য দিয়ে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে এবং এখানে রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংখ্যাগরিষ্ঠ সর্বহারা শ্রেণির দ্বারা পরিচালিত হবে । এর পরবর্তী পর্যায়ে  প্রতিষ্ঠা হবে সাম্যবাদী সমাজ । যেখানে কোনো শ্রেণি থাকবে না । সমাজে সকল সম্পত্তির সামাজিকীকরণ ঘটবে । একটি শ্রেণিহীন শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে । এখানে প্রত্যেকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ভোগ করবে । 

শ্রেনী সংগ্রাম ও বিপ্লব সম্পর্কিত মার্কসীয় তত্ত্বটি ব্যাখ্যা করো

( b ) বিপ্লব সংক্রান্ত তত্ত্বঃ মার্কস বিপ্লব সম্পর্কিত স্পষ্ট ধারণা দেননি । তবে মার্কসবাদে বিপ্লবের তত্ত্বটি লেনিনের অন্যতম অবদান । লেনিনের মতে বিপ্লব হিংসার তাণ্ডব নয় , বরং বিপ্লব হল উৎপীড়িত ও শোষিতের মহোৎসব । মার্কসীয় মতবাদ অনুসারে বিপ্লব হল ইতিহাসের মূল চালিকা শক্তি । বিপ্লবের মধ্য দিয়েই পুরাতন সমাজকে অস্বীকৃতি জানিয়ে নতুন সমাজের আবির্ভাব হয় । মার্কসের মতে হিংসাত্মক বিপ্লবের মধ্য দিয়েই সর্বহারা শ্রমিক শ্রেণি বুর্জোয়া বিপ্লবের দ্বারা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ধ্বংস সাধন করবে ।

 ● উপরোক্ত মার্কসীয় সূত্রগুলো আলোচনার মধ্যে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে শ্রমিক শ্রেণির দুঃখময় জীবনের নিরসনে মার্কসবাদের বিকল্প আর কিছু হতে পারে না । মার্কসবাদ হল একটি বিশ্ববিক্ষা এবং সমাজে শোষিত ও বঞ্চিত শ্রেণির মানুষের মুক্তির দিশারী । 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
×