কোনি চরিত্রটি উপন্যাস অবলম্বনে আলোচনা কর?
কোনির চরিত্রটি আলোচনা করো ।
উত্তর :- যে চরিত্রের নামানুসারে ‘ কোনি ' উপন্যাসের নামকরণ , সেটিই যে উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হবে , তা বলাই বাহুল্য । শ্যামপুকুর বস্তির এই ডানপিটে স্বভাবের মেয়েটির সাফল্যের শিখর ছোঁয়ার কাহিনির মধ্যে দিয়ে তার চরিত্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পাঠকের সামনে স্পষ্ট হয়ে যায় ।
লড়াকু : গল্পের শুরুতে গঙ্গায় আম কুড়োনো থেকে শুরু করে , ক্লাইম্যাক্সে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপের সুইমিংপুলে সর্বত্রই কোনির লড়াকু মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায় । শুধু সাঁতারের ক্ষেত্রে নয় , জীবনযুদ্ধের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সে নিৰ্ভীক ভাবে লড়াই চালায় প্রতিপক্ষ আর প্রতিকূলতার সঙ্গে ।
কষ্টসহিষ্ণু:- দারিদ্র্য , খিদে , কায়িক শ্রম- যে - কোনো কষ্টকেই কোনি দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নেয় । তার শিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহও তাকে সেই শিক্ষাই দেন । তার এই কষ্টসহিষ্ণুতা আর অধ্যবসায়ই শেষপর্যন্ত তাকে সাফল্য এনে দেয় ।
দৃঢ়চেতা : জীবনে বারবার প্রতিকূলতার সম্মুখীন হলেও কখনোই ভেঙে পড়ে না কোনি । সমস্ত দুর্ভাগ্য , প্রতিবন্ধকতা , অপমান আর চক্রান্তের দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করে সে । তার জেদ আর দৃঢ় মনোভাবের মধ্যে ক্ষিতীশ সিংহ খুঁজে পান লুকিয়ে থাকা চ্যাম্পিয়নকে ।
খেলোয়াড়সুলভ : হিয়া কোনিকে ' আনস্পোর্টিং ’ বললেও সমগ্র উপন্যাস জুড়েই আমরা তার খেলোয়াড়সুলভ মনোভাবেরই পরিচয় পাই । শেষপর্যন্ত হিয়ার ‘ আনস্পোর্টিং ’ অপবাদের জবাবও সে খেলোয়াড়সুলভ ভাবেই দেয় । তাই সব মিলিয়ে কোনি হয়ে ওঠে জীবনযুদ্ধের এক নির্ভীব সৈনিক ।
বারুণীর দিন গঙ্গার ঘাটের দৃশ্য বর্ণনা কর?
উত্তর ‘ কোনি ' উপন্যাসের শুরুতেই আমরা ঘাটের এক দৃশ্য প্রত্যক্ষ করি । হিন্দুদের একটি ধর্মীয় উৎসব ‘ বারুণী ' । সেদিন গঙ্গায় পুজো দিয়ে দেবতার উদ্দেশ্যে কাঁচা আম উৎসর্গ করা হয় । এদিন গঙ্গার ঘাটে লোক থিক থিক করে । পুণ্যার্থীরা জলে ডুব দিয়ে কাঁচা আম উৎসর্গ করেন আর একদল ছেলে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সেই আম সংগ্রহ করে বাজারে কমদামে বিক্রি করে । গঙ্গা স্নানান্তে পুণ্য অর্জনের পর বেশ কিছুটা পথ কাদা মাড়িয়ে যখন পুণ্যার্থীদের ডাঙায় আসতে হয় । তখন লোকমুখে দেখা যায় একরাশ বিরক্তি । পুণ্যার্থীদের অনেকে ঘাটের মাথায় কিংবা ট্রেন লাইনের দিকে মুখ করে বসে থাকা বামুনের দিকে যায় কেননা তারা পয়সার বিনিময়ে কাপড় - জামা রাখে , গায়ে মাখা তেল দেয় , কপালে চন্দনের ছাপ ইত্যাদি দেয় । পুণ্যার্থীরা রাস্তার ধারে দেবদেবীর মাথায় জল ঢালতে ঢালতে বাড়িমুখো হয় । পথে বাড়ির জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনে । এমনকি তারা থোড় , ওল , কলা বা লেবু ইত্যাদিও কেনে এবং গরম রাস্তায় পা ফেলে অত্যন্ত দ্রুতপদে বাড়ির দিকে রওনা দেয় ।
'তোর আসল লজ্জা জলে ,আসল গর্ব ও জলে' - কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি? উক্তি তাৎপর্য লেখ?
উৎস:- প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক মতি নন্দীর রচিত 'কোনি' উপন্যাস থেকে প্রদত্ত অংশটি গৃহীত হয়েছে।
প্রসঙ্গ : কোনিকে সাঁতারু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে গিয়ে জীবনে বহুবার লাঞ্ছনার সমুদ্র অতিক্রম করতে হয়েছিল । একবার বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন অমিয়া ' প্রজাপতি'তে গিয়েছিল । সেখানে কোনিকে ফাইফরমাশ খাটতে দেখে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে সে কোনিকে বিদ্রুপ করতে বলে ওঠে— ' তুই এখানে ঝিয়ের কাজ করিস ? ' ‘ ঝি ' বিশেষণটি কোনিকে প্রবলভাবে মর্মাহত করে । তাই ক্ষিতীশের কাছে সে নিজের এই লজ্জা - অপমানের কাহিনিটি শোনায় । গোটা ঘটনা শোনার পর , ক্ষিতীশ কোনিকে একজন প্রকৃত ক্রীড়াবিদের সম্মান সম্পর্কে অবগত করতে প্রদত্ত মন্তব্যটি করেন ।
মন্তব্যের কারণ : ব্যক্তিগত বা বিত্তগত আক্রমণ একজন সাঁতারুকে কখনো লজ্জা দিতে পারে না । কারণ , একজন প্রকৃত সাঁতারুর সম্মান রয়েছে ক্রীড়া ক্ষেত্রে অর্থাৎ জলে । জলে নেমে সে যদি ব্যর্থ হয় — তবে সেটা হবে লজ্জার । আর যদি সে নিজের প্রতিপক্ষকে হারাতে পারে — তখন সেটাই হবে গর্বের বিষয় । প্রকৃতপক্ষে ক্ষিতীশ কোনিকে বোঝাতে চেয়েছিলেন যে , একজন ক্রীড়াবিদদের কাছে ব্যক্তিগত বা বিত্তগত পরিচয় অর্থহীন । ক্রীড়াক্ষেত্রই হল ক্রীড়াবিদদের সম্মানের একমাত্র মানদণ্ড ।