madhymik : দশম শ্রেণির কোনি উপন্যাসের সমস্ত বড় প্রশ্ন ।class 10
ক্ষিদ্দা কীভাবে কোনির জীবনে প্রেরণা হিসাবে কাজ করেছিলেন তা আলোচনা করো ।
মতি নন্দীর ' কোনি ' উপন্যাসে ক্ষিতীশ সিংহ ওরফে ক্ষিন্দা একজন ব্যতিক্রমী ট্রেনার । ভারত তথা বাংলায় যে ধরনের কোচিং হয় তার থেকে ক্ষিতীশের দৃষ্টিভঙ্গী সম্পূর্ণ আলাদা আর সেখানেই অন্যদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ ।
গল্পের শুরুতেই বিষ্টুধরের সঙ্গে কথোপকথনে বোঝা যায় যে , ক্ষিতীশ কেমন । ক্ষিতীশ সেখানে চাকর বানানোর কথা বলেছেন । তিনি এও জানান যে , শুধু গায়ের জোর নয় , বরং মানসিক জোর বা ইচ্ছাশক্তিও জরুরি । আবার চ্যাম্পিয়ন তৈরি করা সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য , গুরুকে শিষ্যের কাছে শ্রদ্ধেয় হতে হয় । গুরুকে কঠোর জীবনযাপন করতে হয় । কেবল শিষ্যকে নয় । কথা , কাজ ও উদাহরণ দিয়ে শিষ্যের মধ্যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলতে হয় । ব্যক্তিগত রেকর্ড নয় , দেশের জন্য গৌরব আনতে পরিশ্রম করা দরকার । চ্যাম্পিয়ন তৈরি করা যায় না , তাদের খুঁজে ও চিনে নিতে হয় । কোনিকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার শিক্ষা দিতে গিয়ে ক্ষিদ্দা তাকে চরম খাটিয়েছেন । যন্ত্রণা আর সময়কে হারানোর পরামর্শ দিয়েছেন । নিজেকেও যন্ত্রণার সঙ্গে একাত্ব করেছেন । আর তাই ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর কোনিকে ক্ষিদ্দা বলেছেন , “ ওইটেই তো আমি রে , যন্ত্রণাটাই তো আমি । ”
‘ ওই জলের নীচে লুকিয়ে ছিলুম আর বলছিলুম সব পারে , মানুষ সব পারে ... ফাইট কোনি , ফাইট । ' কার উত্তি ? মানুষ যে সব পারে , তার কী প্রমাণ এই উপন্যাসে পাওয়া গেছে ? ' ফাইট কোনি , ফাইট ' উক্তিটি যে উপন্যাসের মূলমন্ত্র হয়ে উঠেছে , তা বুঝিয়ে দাও । ১ + ২ + ২ = ৫
প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা হলেন সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ ওরফে কোনির ক্ষিদ্দা।
কোনি নিজেই মানুষের সব পারার সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ হয়ে উঠেছে । এক সাধারণ মেয়ে থেকে সাফল্যের চূড়ায় ওঠার যাত্রাপথে সে বারবার ক্ষিদ্যার হাত ধরে নিজেকে ছাপিয়ে গেছে । কোনি একে একে সময়কে হারিয়েছে , যন্ত্রণাকে হারিয়েছে , নিজের ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে গেছে , অমিয়াকে হারিয়েছে , শেষপর্যন্ত রমা যোশিকে হারিয়েছে । ক্ষিতীশ কোনিকে বারবার বুঝিয়েছেন , মানুষের এইসব পারার ক্ষমতার কথা । কোনি শেষপর্যন্ত প্রমাণ করেছে ক্ষিতীশ এই কথার সত্যতা ।
ক্ষিতীশের কণ্ঠে বারবার ধ্বনিত এই উজ্জীবন মন্ত্র আমরা প্রথম শুনতে পাই কোনির এক বন্ধুর মুখে । তারপর থেকেই পাঠক বুঝতে পারেন , সম্পূর্ণ উপন্যাসটিই কোনির ‘ ফাইট ' বা সংগ্রামের ইতিহাস । কখনও সেই সংগ্রাম চক্রান্তকারীদের সঙ্গে , কখনও বা দারিদ্র্যের সঙ্গে , কখনও সময়ের সঙ্গে , আবার কখনও যন্ত্রণার সঙ্গে । কোনির জীবনসংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছে উচ্চ বাক্যাংশটি । কোনিকে বারবার উদ্বুদ্ধ করেছে ক্ষিতীশের এই মন্ত্র । শুধু সাঁতার নয় , জীবনের যুদ্ধেও তাই বারবার জিতে যায় কোনিরা।
' কিন্তু ওর সাঁতার তাহলে আর হবে না ।'— ৰক্তা কে ? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির সাঁতার হবে না কেন ? উক্তিটির মধ্য দিয়ে বক্তার যে আর্তি ফুটে উঠেছে , তা আলোচনা করো ।
মতি নন্দী রচিত ' কোনি ' উপন্যাস থেকে গৃহীত উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা হল কোনির দাদা কমল পাল ।
এখানে ' ওর ' বলতে কোনির কথা বলা হয়েছে । অভাবের সংসারে কোনির সাঁতার শেখা বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয় । কোনির দাদার পক্ষে তার সাঁতার শেখার খরচ বহন করা সম্ভবপর নয় বলে ক্ষিতীশ নিজে সে ভার নিয়েছিলেন । কিন্তু কেবল খাদ্য বা ভরণ - পোষণই নয় , দারিদ্র্যের সংসারে মানবসম্পদের অপচয়ও একটি বড়ো ব্যাপার । তাই কমল মনে করেছিল যে , কোনির পক্ষে সত্যিই যদি সাঁতারে ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব না হয় , তবে ষাট টাকা মাইনের সুতোর কারখানায় তাকে কাজে দেওয়ায় অনেক ভালো । যদিও তাহলে তার সাঁতার আর হবে না ।
সাতজনের সংসার টানা একার পক্ষে দিন দিন কষ্টকর হয়ে উঠছিল কমলের । তাই সে ছোটো ভাইকে পনেরো টাকা মহিনের চায়ের দোকানে কাজে পাঠিয়েছিল । কোনিকে ও ষাট ঢাকায় সুতোর কারখানায় কাজে দেওয়ার কথা সে চিন্তা করেছিল । কিন্তু একদা দক্ষ সাঁতারু ও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখা কমল জানত যে , কাজে লাগিয়ে দিলে কোনির আর সাঁতার শেখা হবে না । অথচ কমলের অনেক আশা ছিল কোনির উপরে । সে ইন্ডিয়া রেকর্ড ভাঙবে , এশিয়ান গেমস , অলিম্পিকে সাফল্য পাবে — এই স্বপ্ন দেখত কমল । তাই তার কথার মধ্য দিয়ে সেই আর্তি ফুটে উঠেছে।
যন্ত্রণাকে বোঝ , ওটাকে কাজে লাগাতে শেখ , ওটাকে হারিয়ে দে ।'— বক্তব্যটির অর্থ ও তাৎপর্য লেখো ।
ক্ষিতীশ সিংহ যোগ্য প্রশিক্ষক । কিন্তু সেই প্রমাণ দিতে তিনি অক্ষম ছিলেন উপযুক্ত শিষ্যের অভাবে । কোনিকে পেয়ে তিনি নিজের যোগ্যতা প্রমাণের পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারের মেয়েটির প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে তাকে চ্যাম্পিয়ন করার লক্ষ্য নেন । কোনির মধ্যে যে ইচ্ছাশক্তি তিনি জাগিয়ে তোলেন তা সহজ কাজ ছিল না । সেরাটা বের করে আনার জন্য নিজের সব শক্তিকে নিংড়ে দিতে হবে । তাই একটানা তিন ঘণ্টা সাঁতার কেটে যখন কোনি জল থেকে উঠে আসতে চেয়েছে তখন ক্ষিতীশ ঢিল ছুঁড়েছেন , বাঁশের লগা দিয়ে ভয় দেখিয়েছেন । কোনির সব কষ্ট বুঝেও তিনি এমন করেছেন শুধুমাত্র বোঝানোর জন্য যে এই প্রবল যন্ত্রণাকে যদি কাজে লাগাতে পার তবেই কোনি জয়ী হতে পারবে । সব যন্ত্রণাকে হারিয়েই কোনি শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই জিততে সক্ষম হবে । তখনই হবে সব যন্ত্রণার উপশম , পরম প্রাপ্তি ।
‘ কোনি ’ রচনা অবলম্বনে ক্ষিতীশের চরিত্রবৈশিষ্ট্য আলোচনা করো ।
‘ কোনি ’ উপন্যাসের শুরু থেকেই ক্ষিতীশ চরিত্রের বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পাঠকের পরিচয় ঘটে । বিষ্টু ধরের সঙ্গে কথাবার্তার মাধ্যমে তাকে ক্রমশ নিজের প্রতি দুর্বল করে তুলেছেন ক্ষিতীশ । ধনী বিষ্ঠুর নির্বুদ্ধিতা ও উচ্চাকাংখাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষিতীশ নিজের কার্যসিদ্ধি করেছে । জুপিটার ক্লাবের বার্ষিক প্রতিযোগিতায় কোনিতে প্রবেশাধিকার দেওয়া না হলেও প্রতিযোগিতার বাইরে থেকেও কোনি যাতে সকলের সামনে অমিয়াকে হারাতে পারে , সেই বুদ্ধির উৎস ছিলেন ক্ষিতিশ।
ক্ষিতিস পঁয়ত্রিশ বছরের অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক । লেখক তার চেহারার বর্ণনায় সু - চোখে অভিজ্ঞতার স্পষ্ট ছাপ দেখিয়েছেন । এই অভিজ্ঞতাই তাকে সাহায্য করেছে প্রথম দৃষ্টিতেই কোনির ভিতরের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নকে চিনে নিতে ।
ক্ষিতীশ বারবার অপমানিত হয়েছেন । বারবার বাধা এসেছে তার চলার পথে । কিন্তু কোনো কিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি । কোনিকে বিশ্বের দরবারে পেশ করতে সব বাধা অতিক্রম করে তিনি ছুটে গেছেন।
ক্ষিতীশ ছিলেন একজন যথার্থ গুরু । তাই নিজের অভাবের সংসারেও কোনিকে পালন করেছেন ক্ষিতীশ । পিতৃহারা কোনির পিতার ভূমিকা পালন করেছেন তিনি ।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি যে খুব সংসারী লোক নন , ক্ষিতিস তা জানতেন । সহিষ্ণুতার সঙ্গে ক্ষিতীশের সে স্বভাব মেনে চলতেন । ক্ষিতীশও তার স্ত্রীকে সমীহ করতেন তার স্ত্রী লীলাবতী তার প্রখর বুদ্ধি ও ব্যক্তিত্বের জন্য ।
ক্ষিতীশের অন্তরের দার্শনিক সত্তা কোনিকে সঠিক পথ দেখাতে বেরিয়ে আসত । কখনও সময় ও যন্ত্রণার পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝাতে , কখনও ক্ষমতাকে অতিক্রম করে গেলে কীভাবে মানবজাতির মান বৃদ্ধি পাবে — সর্বত্রই ছিল এই দার্শনিকের অবাধ বিচরণ ।
জুপিটার ক্লাবে ক্ষিতীশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি কী ছিল ? ক্ষিতীশের বক্তব্য কী ছিল?
ক্ষিতীশের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো জুপিটারের সাঁতারুরা করলেও তার পিছনে ছিল ঘৃণ্য ক্রীড়া রাজনীতি । সেই অভিযোগগুলো ছিল
দক্ষ সাঁতারু হওয়া সত্ত্বেও শ্যামলের টাইমিংকে ক্ষিতীশ আমেরিকার বারো বছরের মেয়েদের সাঁতারের টাইমিং - এর সঙ্গে তুলনা করে জুনিয়রদের কাছে তাকে অপমান করেছেন।
গোবিন্দর মতো বেঙ্গল রেকর্ড হোল্ডার ও ন্যাশনাল প্রতিযোগীতাকে কান ধরে ক্লাব থেকে বার করে দেবার কথা বলেন ।
দুই মহিলা সাঁতারু অমিয়া ও বেলার পোশাক ও চুলকাটা নিয়ে খিটমট করা , তাদের জোর করে ব্যায়াম করানো ।
সাঁতারুদের বিশ্বাস তিনি অর্জন করতে পারেননি । তাদের মেজাজ বুঝতে পারেননি । কোনো মেডেল জেতার ইতিহাস তাঁর নেই ।
এসব অভিযোগের জবাবে ক্ষিতীশ জানান , তিনি জুপিটারের গৌরব সবসময় বৃদ্ধি করতে চেয়েছেন । আর সেই কারণে খেলোয়াড়দের পারফরমেন্সের উন্নতির জন্য তিনি প্রয়োজনে রুঢ় ব্যবহার করেছেন । পৃথিবীর বিচারে ভারত তথা বাংলার সাফল্য নেই । আসলে ক্ষিতীশের দৃঢ়তা , শৃঙ্খলা , আদর্শ অনেকেরই অপছন্দ । তারা শৈথিল্য পছন্দ করেন যা ক্ষিতীশের জীবনে নেই।