দশম শ্রেণির কোনি উপন্যাসের সমস্ত বড় প্রশ্ন ।

 ক্ষিতীশ সিংহ কোনিকে সাঁতারের চ্যাম্পিয়ন করানোর জন্য যে কঠোর অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছিলেন ,তার পরিচয় দাও ?

সাধারণ নিম্নবিত্ত পরিবারের কন্যা কোনিকে চ্যাম্পিয়ন করতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন ছিল তার মধ্যে জেতার খিদেটা বাড়ানো । তার পাশাপাশি কঠোর অনুশীলন ক্ষিতীশের কোনিকে জয়ী করার স্বপ্ন সফল করার একমাত্র হাতিয়ার ছিল । কাজেই ক্ষিতীশ ভোর সাড়ে ছটা থেকে শীত , গ্রীষ্ম , বর্ষানির্বিশেষে তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে অক্লান্ত অনুশীলনে ব্যাপৃত রাখতেন । কখনও কোনির ভুল ধরিয়ে দিয়ে , কখনও বা খাবার ও পোশাকের লোভ দেখিয়ে তার উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়ে তাকে জয়ের পথে এগিয়ে দিতেন । অসহ্য যন্ত্রণায় কোনির শরীর জবাব দিতে চাইলেও বাইরের কাঠিন্য বজায় রেখে ক্ষিতীশ তাকে অনুশীলন করিয়ে যেতেন । শুধু সাঁতার নয় , দেহকে সুঠাম ও তৎপর রাখতে তিনি কোনিকে দিয়ে নানাধরনের ব্যায়াম অভ্যাস করাতেন ।

মহারাষ্ট্রের রমা যোশি ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে ১ মিনিট ১২ সেকেন্ড সময় করেছে জানার পর থেকে ক্ষিতীশ একটি কাগজে ' ৭০ ' লিখে কোনি ও নিজের চোখের সামনে সাঁটিয়ে দিয়েছিলেন । ওই ' ৭০ ’ আসলে ছিল ৭০ সেকেন্ডে , যা রমা যোশিকে হারানোর জন্য কোনির লক্ষ্যমাত্রা ছিল এ ছিল কোনির মানসিক অনুশীলন । ক্ষিতীশ আদর্শ শিক্ষকের মতোই কোনিকে । চ্যাম্পিয়ন তৈরি করার জন্য সাঁতারের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক অনুশীলনেরও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন । তার ঘুম - খাওয়া যথাযথ হচ্ছে কি - না সেদিকেও ছিল । তার সজাগ দৃষ্টি । যার ফলস্বরূপ কোনি একদিন তার কাঙ্ক্ষিত জয়লাভ করতে সমর্থ হয়েছিল । 

কোনি উপন্যাস


" ক্ষিতীশ কথাটা বলেই মনে মনে ব্যথিত হলো । ” — ক্ষিতীশ কোন্ কথা বলেছিলেন ? কথাটা বলে ক্ষিতীশ মনে মনে ব্যথিত হয়েছিলেন কেন ? ২ + ৩ 

 ক্ষিতীশ কোনির মধ্যে নিজের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন শিষ্যকে দেখতে পেয়েছিলেন । কিন্তু চিরকাল অবহেলিত কোনি নিজের সম্পর্কে অতখানি উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করতে পারেনি । তাই কঠোর প্রশিক্ষণে সে সহযোগিতা করতে চায়নি । তখন ক্ষিতীশ কৌশল অবলম্বন করে তাকে নানারকম লোভ দেখান । দরিদ্র ঘরের মেয়ে কোনি ভালো মন্দ খেতে পায় না । তাই তাকে দিয়ে পরিশ্রম করানোর জন্য দুটো ডিম , দুটো কলা ও দুটো টোস্ট দেওয়ার টোপ দেন ক্ষিতীশ । কিন্তু প্রস্তাবটা দিয়েই মনে মনে বিবেকদংশনে বিদ্ধ হন ক্ষিতীশ । 

কোনির দারিদ্রা ও ক্ষুধাকে কাজে লাগিয়ে শর্তসাপেক্ষে তাকে দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করিয়ে নেওয়া যে অমানুষিক কাজ , তা ক্ষিতীশ জানতেন । তাই কাজটি করে তিনি বিবেকদংশনে বিদ্ধ হয়েছিলেন । কিন্তু তারা পাশাপাশি তিনি এও জানতেন যে , কোনির সাধ্যের বাইরে গিয়ে তাকে ট্রেনিং না করালে তার সাধ্য কিছুতেই বাড়ানো যাবে না । প্রবল যন্ত্রণাকে অতিক্রম করতে হলে যন্ত্রার পথেই তাকে ঠেলে নিয়ে যেতে হবে ।

  ‘ ওর ছিপছিপে শরীরটার মধ্যে দিনে দিনে সজ্জিত যন্ত্রণায় ঠাসা শক্তির ভাণ্ডারটিতে যেন বিস্ফোরণ ঘটল ' - যন্ত্রণায় ঠাসা শক্তির ভাণ্ডার ' বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন ? এর ফল কী হয়েছিল ? ৩ + ২ = ৫

 মতি নন্দীর ' কোনি ' উপন্যাসে দেখা যায় যে , কঠিনতম প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কোনিকে প্রস্তুত করেন ক্ষিতীশ । অনেক বাধা অতিক্রম করে , দারিদ্র , হতাশাকে জয় করে কোনিকে তৈরি করেন তিনি । অক্লান্ত পরিশ্রমকে ও যন্ত্রণাকে নিয়েই কোনি গড়ে তুলেছে নিজেকে । ক্ষিতীশ মানসিক শক্তি কোনিকেও উদ্বুদ্ধ করেছে । কোনির রোগা শরীরে সেই সমস্ত যন্ত্রণা সজ্জিত হয়ে এক শক্তির ভাণ্ডার তৈরি হয়েছে । দু - একদিন নয় , বহুদিনের সাধনা লুকিয়ে আছে এই শক্তির ভাণ্ডারে । এই শক্তি আসলে শারীরিক ও মানসিক শক্তির এক দুর্দম ভাণ্ডার । একে পরাস্ত করা একরকম অসম্ভব ।

 বহু যন্ত্রণা , কষ্টকর পরিস্থিতি ও সাধনার ফলে কোনির মধ্যে যে শক্তি সঞ্চিত হয়েছিল । একদিন তার বিস্ফোরণ ঘটে । জুপিটার ক্লাবের বার্ষিক প্রতিযোগিতায় কোনিকে চক্রান্ত করে বাদ দিলে প্রতিযোগিতার বাইরে থেকেও সে অমিয়াকে পরাজিত করে । অ্যাপোলো ছিল পাশের ক্লাব । অ্যাপোলোর অংশে সাঁতার কেটে কোনি অমিয়াকে হারিয়ে দিয়েছিল এবং বুঝিয়ে দিয়েছিল যে , তার মধ্যে যে আগুন জ্বলছে যেদিন তার বিস্ফোরণ ঘটবে সেদিন অনেক আপাত চ্যাম্পিয়নের পতন ঘটবে । বাস্তবে সেটাই ঘটেছিল । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
×