প্রবন্ধ রচনা :সমাজসেবা
ভূমিকাঃ- মানুষ মানুষের প্রয়োজনে সমাজ সৃষ্টি করল। সেই সমাজ রক্ষা করার দায়িত্ব মানুষের। সমাজ বলতে বোঝায় জনসমষ্টি যারা পরস্পরের সুখে-দুঃখে পরস্পরের পাশে থাকবে, আপদে-বিপদে সেবায় উদারহস্ত প্রসারিত করবে, মিলে মিশে জীবনযাত্রায় উন্নতি ঘটাবে। সেবা দানের মধ্যে থাকবে দায়বদ্ধতা এবং সেবা গ্রহণের মধ্যে থাকবে কৃতজ্ঞতা। এইভাবে গড়ে উঠবে সামাজিক কর্তব্যবোধ। সেবাধর্ম হয়ে উঠবে সামাজিক কর্তব্যকর্ম। এই কর্তব্য পালনের মাধ্যমে সমাজ উপকৃত হবে। মানুষকে দেবতাজ্ঞানে সেবা করে ঈশ্বরসেবা ধর্ম পালন হয়।
সমাজসেবার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা:
স্বার্থমগ্ন হয়ে সমাজে বেঁচে থাকা যায় না। সমাজে মানুষের দুঃখ কষ্টের সীমা নেই। একদিকে প্রাকৃতিক শক্তির সঙ্গে সংগ্রাম; বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, রোগ-জরা নিয়ত মানুষকে গ্রাস করছে। অন্যদিকে আছে এক শ্রেণির মানুষের সৃষ্ট; জাতপাত ধর্ম, অশিক্ষা-কুশিক্ষা-কুসংস্কার-দারিদ্রের; অস্বাস্থ্য অপুষ্টি ইত্যাদির ভয়ংকর ভ্রুকুটি। এইসব ক্ষেত্রে সামাজিক কর্তব্যবোধ সম্পন্ন মানুষের সেবা ধর্ম পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। বহুক্ষেত্রে মানুষ বড়ো অসহায়, বিপদে দিশেহারা। এই অসহায়, দিশেহারা মানুষকে ভালোবেসে সাহায্য করা, সেবা করাইতো সমাজসেবা। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি আজকের মানুষকে যতই স্বাচ্ছন্দ্য দিক, বৃহত্তর মানব গোষ্ঠী সে সুখে বঞ্চিত। তাঁরা অপুষ্টি ও অনাহারে মরছে। চিকিৎসাহীন আর্তের কান্না বস্তিতে, নিবিড় পল্লীতে অবরুদ্ধ হয়ে আছে। তারা চাইছে একটু সাহায্য, সহানুভূতি, ভালোবাসা। সমাজবদ্ধ মহৎ মানুষ কী শুনবে না তাদের কথা, বুঝবে না তাদের ব্যথা? সমাজে এরা যতদিন থাকবে সমাজসেবার দায়িত্বকর্তব্য সামাজিক মানুষের ততদিন থাকবে। মনে রাখতে হবে সমাজসেবা মহৎ গুণ। সমাজসেবা মানুষের মনুষ্যত্বের অঙ্গীকার।
মহাপুরুষদের কথা ও সেবাব্রতী প্রতিষ্ঠান:
প্রতিটি ধর্মের মূল কথা জনসেবা বা সমাজসেবা। যিশুখ্রীষ্ট সমাজসেবাকে শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলেছেন। জনসেবাই ছিল বৌদ্ধধর্মের মূল কথা। 'অচন্ডালে প্রেমবিতরণ' চৈতন্যদেবের সারকথা। শ্রীরামকৃষ্ণের মতো বিবেকানন্দও মনে করতেন-'জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর'। মাদার টেরিজা তো মানবসেবার মূর্ত প্রতীক। মানুষের সামাজিক বোধের বিকাশের মূলে আছে সেবাধর্মের অনুপ্রেরণা। সেবাধর্মে দীক্ষিত মানুষ এই জন্য অনেক সেবাব্রতী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। আমাদের দেশে রেডক্রশ, রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য।
উপসংহার:-
বর্তমান সমাজে হিংসা, ঘৃণা, লোভ মনুষ্যত্বকে যেভাবে লাঞ্ছিত করছে তা দমন করা উচিত। ছাত্রসমাজের এ ব্যপারে দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। জনসেবার শিক্ষাই জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা। সমাজ সেবায় মনুষ্যত্ব্যের জাগরণ ঘটে। আমাদের রাষ্ট্রকেও হতে হবে প্রকৃত কল্যানব্রতী রাষ্ট্র।