১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহা বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র বা স্বরূপ কী রকম ছিল ?
ভূমিকাঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক। রয়েছে। যেমন-
(১) সিপাহী বিদ্রোহ : অক্ষয় কুমার দত্ত, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, দাদাভাই নওরোজি, চালক বেকস্, জন সিলি প্রমুখ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহকে নিছক 'সিপাহী বিদ্রোহ' বলে মনে করেন। চার্লস বেকস্-এর মতে, “এটি ছিল কেবল সিপাহিদের অভ্যুত্থান”।
(২) সামন্ত বিদ্রোহ : রজনীপাম দত্ত, রমেশচন্দ্র মজুমদার, সুরেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখ ১৮৫৭-র বিদ্রোহকে রক্ষণশীল ও সামন্ততান্ত্রিক শক্তিগুলির অভ্যুত্থান বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে, নানা সাহেব, লক্ষ্মীবাঈ, কুনওয়ার সিং প্রমুখ সামন্তশ্রেণির মানুষ নিজের স্বার্থ সিদ্ধির উদ্দেশ্যে এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন।
(৩) গনবিদ্রোহ : ঐতিহাসিক নর্টন, ম্যানেসন, বল, জনকে প্রমুখ এই বিদ্রোহের গণচরিত্র লক্ষ করে একে গণবিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে এই বিদ্রোহ, দিল্লি, অযোধ্যা, লক্ষ্ণৌ, কানপুর, বেরিলী, ঝাঁসি, বিহার-সহ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
(৪) জাতীয় বিদ্রোহ :- ঐতিহাসিক আউট্রাম, ডাফ, রবার্টসন, টোরি দলের নেতা ডিসরেলী, সমাজতন্ত্রবিদ কার্লমার্কস প্রমুখ এই বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে, মুজাফফর নগর, বিহার, উত্তরপ্রদেশে সিপাহিদের সঙ্গে সংযোগ ছাড়াই অসামরিক লোকজনও জমিদারশ্রেণি ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে।
(৫) প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ : বিপ্লবী বিনায়ক দামোদর সাভারকার সহ কেউ কেউ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম সাধারনতা যুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন। অধ্যাপক হীরেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায়, অধ্যাপক সুশোভন সরকার প্রমুখও এই বিদ্রোহকে স্বাধীনতা যুদ্ধ ও জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন।
(৬) মহাবিদ্রোহ : ভারতের জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকরা এই বিদ্রোহের ব্যাপকতা লক্ষ করে একে মহাবিদ্রোহ নামে অভিহিত করেন।