আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারী নথিপত্রের গুরুত্ব কী?

 ভূমিকাঃ আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি নথিপত্র যেমন- সরকারি প্রতিবেদন, পুলিশ, গোয়েন্দা সরকারি আধিকারিক প্রমুখের প্রতিবেদন, বিভিন্ন বিবরণ, চিঠিপত্র, প্রভৃতি উপাদান যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রয়েছে। যেমন-

(১) বৈপ্লবিক কর্মকান্ড : ব্রিটিশ সরকার যে বিভিন্ন বিপ্লবী ও বৈপ্লবিক কর্মকান্ডের প্রতি গোপনে নজরদারি চালাত সে বিষয়ে সমকালীন পুলিশ ও গোয়েন্দাদের বিভিন্ন প্রতিবেদন ও বিভিন্ন সরকারী নথিপত্র থেকে বর্তমানে জানা সম্ভব হয়েছে।

(২) কমিশনের রিপোর্ট : সরকার কর্তৃক নিযুক্ত বিভিন্ন কমিশনের রিপোর্ট থেকে সমকালীন বিভিন্ন বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্যাদি পাওয়া যায়। যেমন—নীল কমিশনের (১৮৬০ খ্রি.) রিপোর্ট থেকে বাংলা চাষিদের ওপর নীল করদের অত্যাচার হান্টার কমিশনের (১৮৮২ খ্রি.) রিপোর্ট থেকে সমকালীন শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কিত বিভিন্ন জানা যায়।

(৩) আন্দোলন দমনের নীতিঃ ব্রিটিশ সরকার কীভাবে ভারতীয়দের রাজনৈতিক আন্দোলনগুলি দুর্বল বা দমন করার চেষ্টা চালাত সে বিষয়ে বিভিন্ন সরকারি নথিপত্র, বিশেষ করে সরকারের বিভিন্ন আধিকারিকদের চিঠিপত্র থেকে জানা যায়। যেমন— সরকার গোপনে কংগ্রেসকে দূর্বল করার চেষ্টা চালিয়েছিল, বাঙালির রাজনৈতিক ঐক্য ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে কার্জন বঙ্গভঙ্গ করেছিলেন প্রভৃতি তথ্যাদি সরকারি চিঠিপত্র থেকে জানা যায়।

(৪) ভারতীয়দের সংস্কার : সমকালীন ভারতীয়দের বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যাবলির প্রতি সরকারের মনোভাব মোটেই ভালো ছিল না - তা জানার জন্য সরকারি নথিপত্র বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যেমন—স্বামী বিবেকানন্দের ভাবাদর্শ পাশ্চাত্যকে মুগ্ধ করলেও তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের সরকারি নথিপত্র থেকে জানা যায় যে, বিবেকানন্দের রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনকে সরকার সুনজরে দেখেনি।

(৫) একমাত্র নির্ভরযোগ্যতা : কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি নথিপত্র ভারত ইতিহাসের একমাত্র নির্ভরযোগ্য উপাদান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। যেমন— বর্তমান তথ্যাদির সহায়তায় নেতাজি সুভাষ চন্দ্রের অন্তর্ধান রহস্যের কিনারা করা সম্ভব না হওয়ায় অনেকে একমাত্র সরকারি নথিপত্র প্রকাশিত হওয়ায় অপেক্ষায় রয়েছেন। 

মাধ্যমিক ইতিহাস




Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
×