চুঁইয়ে পড়া নীতি কী? ইংরেজি ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করার পক্ষে যে যুক্তি মেকলে মিনিটে বর্নিত আছে যা লেখ?

চুঁইয়ে পড়া নীতি

মেকলের বক্তব্য অনুসারে, সমাজের উচ্চবর্গের কিছু মানুষ পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হলে তাদের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সমাজের নিম্নস্তরে শিক্ষা ছড়িয়ে পড়বে। ফলে সমাজের নীচের স্তরের মানুষরাও শিক্ষিত হবে। শিক্ষাবিস্তারের এই তত্ত্বই চুঁইয়ে পড়া নীতি বা নিম্নক্রম পরিশ্রুত নীতি (Downward Filtration Theory) নামে পরিচিত। চুঁইয়ে পড়া নীতির প্রবর্তক হলেন মেকলে।

চুঁইয়ে পড়া নীতি কী

 ইংরেজি ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করার পক্ষে যুক্তি :

মেকলের মতে, ইংরেজির মতো সম্পদশালী ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ যেখানে রয়েছে, সেখানে দুর্দশাগ্রস্ত ভারতীয় ভাষা-যে ভাষায় ইংরেজি জ্ঞান-বিজ্ঞানের গ্রন্থরাজির সমকক্ষ একখানি গ্রন্থও নেই, সে-ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার কোনো অর্থই হয় না। তিনি ইংরেজি ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করার সপক্ষে অনেক যুক্তি দেখিয়েছিলেন। মেকলে প্রবর্তিত যুক্তিগুলি হল-

(ⅰ) শ্রেষ্ঠ ভাষা :

ইংরেজি ভাষা পাশ্চাত্য বা ইউরোপীয় ভাষাসমূহের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষা।

ii) জ্ঞান-বিজ্ঞানের চাবিকাঠি:

 ইরেজি ভাষা ও সাহিত্য আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের চাবিকাঠি এবং এক অমূল্য অফুরন্ত খনি। পাশ্চাত্য দেশে ইংরেজি ভাষা যথেষ্ট জনপ্রিয়।

(iii) নবযুগের সৃষ্টি: 

ইউরোপে গ্রিস-রোমের বিদ্যা যেমন রেনেসাঁস এনেছিল, তেমনি ইংরেজি ভাষা ভারতে এক নতুন যুগের সৃষ্টি করবে বা নবজাগরণ আনবে।

(iv) ভারতীয় ভাষাকে সমৃদ্ধকরণ:

 গ্রিক ও লাতিন ভাষা যেমন ইংরেজি ভাষার সমৃদ্ধির মূলে ছিল তেমনি ইংরেজি ভাষা ভারতীয় ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করবে।

(v) ভারতবাসীর পরিচিতি: 

ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে পশ্চিম দেশীয় সভ্যতার সঙ্গে ভারতবাসী ধীরে ধীরে পরিচিত হয়ে উঠবে।

(vi) বাণিজ্যিক ভাষা: 

অদূর ভবিষ্যতে ইংরেজি ভাষা কিছুদিনের মধ্যেই প্রাচ্য সমুদ্রতীরবর্তী দেশসমূহের বাণিজ্যিক ভাষারূপে গৃহীত হবে।

(vii) অধিক পছন্দযোগ্য ভাষা: 

পরীক্ষামূলকভাবে দেখা গেছে ভারতবাসীরা সংস্কৃত অথবা আরবি অপেক্ষা ইংরেজি ভাষাকে অধিক পছন্দ করেন।

(viii) কাজকর্মে অংশগ্রহণ:

 ইংরেজি ভাষা শাসকশ্রেণির ভাষা। ইংরেজি ভাষা না শিখলে ভারতবাসী সরকারি কাজকর্মেও অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

(ix) চুঁইয়ে পড়া নীতিতে বিশ্বাসী: 

মেকলে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার ব্যাপারে পরিশ্রুত মতবাদ বা চুঁইয়ে পড়া নীতিতে (Downward Filtration Theory) বিশ্বাসী ছিলেন। ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে যেসব ভারতবাসী উচ্চশিক্ষা লাভ করবেন তাঁরা পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের মর্ম উপলব্ধি করে নিজেদের দায়িত্বেই অন্যান্য ভারতবাসীর শিক্ষা পরিচালনায় অংশগ্রহণ করবেন।

(x) নতুন এক শ্রেণির লোক সৃষ্টি :

ইংরেজি শিক্ষার ফলে এদেশে এমন এক শ্রেণির লোক সৃষ্টি হবে যারা বর্ণে ও রক্তেই শুধু ভারতীয় থাকবে; কিন্তু বুচি, মতামত, নীতি ও বুদ্ধিতে হবে ইংরেজ-

" A class of persons Indian in blood and colour but English in taste, opinion and intellect."

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন
পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন
comment url